সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z
আপনি কি খুব দ্রুত সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন?
তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায়
হচ্ছে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে। আর এটি খুব অল্প সময়ে
অধিক লাভবান হওয়ার একটি অন্যতম ব্যবসা। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল ও কার্যকরী
আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক!
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে
এমন কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব
সহজেই অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, সোনালি
মুরগি পালন ব্যবসাটি অল্প সময়ে কতটা লাভজনক ব্যবসা। তাই আপনি যদি সোনালি মুরগি
পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান, তাহলে আজকের
আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নির্ভুল সব তথ্যগুলো জানতে পারবেন।
ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভুমিকা
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই খুব অল্প সময়ে সচ্ছল বা স্বাবলম্বী হতে চাই। এই
জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করে এবং বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু
কার্যকরী কিছু উপায় ও পদ্ধতি না জানার কারণে অনেকেই সফল বা লাভবান হতে পারে না।
আজকের এই আর্টিকেলটির আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই
বিষয় সম্পর্কে। আপনি যদি সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পূর্ণ
ভালোভাবে জেনে নেন, তাহলে আপনি খুব অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ ১৪টি উপায়ে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি
সোনালি
মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা থাকলে খুব সহজেই
নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। অনেকেই অনেক ভাবে
জানার চেষ্টা করে থাকে, কিন্তু আপনি যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে
পড়েন তাহলে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে তথ্যবহুল সব
আলোচনা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
এছাড়াও সোনালি মুরগি, কেন সোনালি মুরগি পালন
করবেন? সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z, কিভাবে সোনালি মুরগির ঘর প্রস্তুত
করবেন?/ খামার ব্যবস্থাপনা, সোনালি মুরগির বাচ্চা নির্বাচন, সোনালি মুরগির খাদ্য
তালিকা, সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা এবং ভ্যাক্সিন প্রদান, সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা, সোনালি মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট, সোনালী মুরগি পালনে
ব্যবসায়িক হিসাব,
সোনালী মুরগি পালনে আয়ের পরিমাণ (আনুমানিক), কেন খামার ব্যবস্থাপনায় সোনালী মুরগী পালন লাভজনক? এই বিষয়গুলো সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে
পারবেন। আপনি যদি সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান
তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।
সোনালি মুরগি
সাধারণত বাংলাদেশের ডেভেলপকৃত নিজস্ব জাতের একটি মুরগি হচ্ছে সোনালি মুরগি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে সোনালি মুরগিকে নির্বাচিত করে জি আই
স্বত্বের জন্য। এরপর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল জলিল ১৯৮৭ সালে
উদ্ভাবন করেছিলেন সোনালী মুরগির। তারপর পরবর্তী সময়ে এই জাতটির উন্নয়ন করানো
হয় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহ জামাল স্যারের তত্ত্বাবধানে।
বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় ১৯৯৬-২০০০ সালের মাঝামাঝিতে সোনালি মুরগির বিকাশ
ঘটে। তারপর খুবই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আশেপাশের জেলা সমূহ গুলোতে পাশাপাশি
পরবর্তীতে বাংলাদেশের সকল জেলায় সোনালী মুরগী ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত সোনালি
মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পাশাপাশি মাংস এবং ডিমের স্বাদ অতুলনীয় হওয়ায় খুবই
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সোনালী মুরগি জনপ্রিয়তা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
মূলত বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী মুরগি জাত উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এই সোনালি
মুরগির ডেভলপার করানো হয়। মূলত দেশি যে মুরগি গুলো রয়েছে সেগুলোর সামঞ্জস্যতা
রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পাশাপাশি ভালো জাতের মুরগী তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।
সাধারণত বর্তমান সময়ে সোনালি মুরগির ভালো বাজারদরের কারণে অনেক খামারিরাই
বাণিজ্যিকভাবে সোনালি মুরগি পালন করছেন। ফাওমি ও আর আই আর জাতের মুরগির ক্রসের
মাধ্যমে মূলত সোনালি মুরগির উদ্ভাবন করা হয়। আর এই জন্যই সোনালি মুরগিকে বলা হয়
ক্রসব্রিড।
কেন সোনালি মুরগি পালন করবেন?
সাধারণত বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী একটি মুরগি জাত হচ্ছে এই সোনালি মুরগির জাত।
এছাড়াও সোনালি মুরগির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক ভালো, আরও যেগুলো অন্যান্য মুরগি
রয়েছে হাইব্রিড জাতের সেগুলোর তুলনায় সোনালি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক
বেশি। মূলত যখন যখন আবহাওয়া পরিবর্তন হয়, তখন সোনালি মুরগির ওপর সেরকম আবহাওয়া
পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে না।
এছাড়াও প্রিয় পাঠক আপনি যদি সোনালি মুরগি পালন করতে
চান, তাহলে আপনাকে নিয়মিত সোনালী মুরগিকে টিকা প্রদান করতে হবে পাশাপাশি জৈব সকল
নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। তাহলে খামারে রোগ বালায় অনেকাংশে কমে যাবে। বর্তমান
সময়ে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি অনেকেই অনীহা প্রকাশ
করে। কিন্তু সোনালী মুরগীর মাংসের চাহিদা অনেক। কেননা সোনালি মুরগি অনেকটাই দেশি
মুরগির স্বাদ বহন করে, দেশি মুরগির সাথে সোনালি মুরগির সমঞ্জস্যতা রয়েছে।
যেহেতু
সোনালি মুরগির চাহিদা দিন দিন অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই জন্য অনেক খামারিরাই
বাণিজ্যিকভাবে সোনালি মুরগি পালনের বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এছাড়াও বর্তমান সময়ে
সোনালি মুরগি পালন করে খামারিরা প্রচুর লাভবান হচ্ছেন। প্রিয় পাঠক আপনিও চাইলে
সোনালি মুরগি পালন করে লাভবান হতে পারবেন। তাই আর দেরি কেন অতি দ্রুত সোনালী
মুরগি পালন এর প্রসেস শুরু করে দিন।
সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে দিন দিন সোনালি মুরগি পালন এর জনপ্রিয়তা বিপুল হারে
বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোনালি মুরগির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে সোনালী
মুরগীর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং বাজারে সোনালি মুরগির চাহিদা। প্রিয় পাঠক আপনারা
যারা নতুন করে সোনালি মুরগির খামার করতে চাচ্ছেনকিংবা অনেক ব্যাক্তিবর্গ রয়েছে
যারা ব্রয়লার অথবা আরও অন্যান্য মুরগির খামার করে অনেক লস করেছেন, নতুনভাবে আবার
সোনালী মুরগি পালন করে ঘুরে দাঁড়াতে ইচ্ছুক বা চেষ্টা করছেন,
তাদের জন্য আমাদের
আজকের এই আর্টিকেলটি গুরুত্বপূর্ণ, কোন অংশ স্কিপ না করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।প্রিয় পাঠক মূলত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি লেখার মূল কারণ
হচ্ছে নতুন খামারিরা এবং অভিজ্ঞ খামারিরা যেন উপকৃত হতে পারেন। এছাড়াও আপনারা
যারা অভিজ্ঞ খামারি রয়েছেন তারাও আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে
পড়ে আশা করি অনেক উপকৃত হবেন।
কিভাবে সোনালি মুরগির ঘর প্রস্তুত করবেন?/ খামার ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি সোনালী মুরগি পালন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে
পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা ঘর করতে হবে সোনালী মুরগীর জন্য। সাধারণত দৈর্ঘ্য হবে
১৫০ ফুট বা চাহিদা অনুযায়ী আপনি দৈর্ঘ্য করতে পারেন এবং প্রস্থ হবে ২০-২৫ ফুট।
এছাড়াও আপনাকে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উপরে মেঝে করতে হবে এবং ঘরের চারি সাইট
খুবই ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেঁড়তে হবে।
এছাড়াও আপনাকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে যেন
বাইরে থেকে কোন কিছু সোনালি মুরগির ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। প্রতিটি সোনালি
মুরগি পালনের জন্য ০.৮৫ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ প্রিয় পাঠক ধরুন
আপনি এক হাজার সোনালি মুরগি পালন করবেন, এক্ষেত্রে আপনাকে ৮৫০ বর্গফুট জায়গার
ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও সম্মানিত পাঠক আপনি যদি ডিমের জন্য সোনালী মুরগি পালন
করেন, সেক্ষেত্রে প্রতিটি মুরগির জন্য জায়গার প্রয়োজন হবে ১.৫ বর্গফুট।
প্রিয়
পাঠক আপনি যদি বেশি জায়গার মধ্যে সোনালি মুরগি পালন করেন সেক্ষেত্রে সোনালি
মুরগির রোগ বালাই হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়। আর যদি আপনি কম জায়গায়
সোনালি মুরগি পালন করেন, সেক্ষেত্রে রোগ বালাই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বা প্রবণতা
বেড়ে যায়। যেমন রক্ত আমাশয়, গাম্বুরো প্রভূতি। আবার আপনি যদি খুবই বেশি
পরিমাণে সোনালি মুরগি পালনে জায়গা দেন, সেক্ষেত্রে খাবারের অপচয় পাশাপাশি
মুরগির গ্রোথ বৃদ্ধি কম হতে পারে। সেই জন্য খুব বেশিও না আবার কমও না স্বাভাবিক
জায়গার মধ্যে সোনালী মুরগি পালন করবেন।
লিটার ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি সোনালি মুরগি পালন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে সোনালী
মুরগীর ঘরে লিটার ব্যবহার করতে হবে। আপনি সোনালি মুরগির ঘরের লিটার হিসাবে ধানের
তুষ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাইলে কাঠের গুড়াও সোনালি মুরগির ঘরে
লিটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও সোনালি মুরগির লিটার হিসাবে বালির
উপরেও সোনালি মুরগি খুব সুন্দর ভাবে পালন করা সম্ভব। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই একটি
বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সোনালি মুরগির কোন ভাবেই ঠান্ডা না লাগে।
আর এই জন্য আপনাকে এক থেকে দেড় ইঞ্চি লিটার পুরু করে ব্যবহার করতে হবে। আবার যখন
যখন প্রয়োজন হবে আপনাকে লিটার গুলো নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। কোনভাবেই গ্যাস
জমতে দেওয়া যাবে না, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই জন্য সোনালী মুরগি
সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য এবং খুবই ভালো পরিমাণে লাভবান হওয়ার জন্য সোনালী
মুরগীর লিটার ব্যবস্থাপনার দিকে খুবই ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্রুডার ঘর ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক আপনি যখন সোনালি মুরগির বাচ্চা নিয়ে আসবেন, তারপর থেকে প্রথম একদিন
পর্যন্ত আপনার করণীয় হবে ব্রুডারের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যেমন হোভার, চিলগার্ড,
খাবারের পাত্র, পানি, লিটার পেপার সকল কিছু যথাযথ স্থানে আগে থেকেই বসিয়ে নিতে
হবে। এছাড়াও হোভারের লাইট গুলো ৩-৪ ঘন্টা আগে থেকেই জ্বালিয়ে রাখতে হবে। এরপর
থার্মোমিটারের রিডিং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে এক ঘন্টা পর।
আপনি যখন বাজার থেকে
সোনালি মুরগির বাচ্চা নিয়ে আসবেন, তার ১০-২০ মিনিট আগে থেকেই পানি ও খাবারের
পাত্র যথাযথ স্থানে দিতে হবে। এছাড়াও আপনার আনা বাচ্চা গুলোর মধ্যে যেগুলোকে
আপনার দুর্বল মনে হবে, সেগুলোকে আলাদাভাবে গ্লুকোজের পানি ফোঁটা ফোঁটা করে পান
করাতে হবে। আপনার আনা সোনালি মুরগির বাচ্চা গুলো যদি সুস্থ সবল থাকে, তাহলে আপনি
জীবাণুমুক্ত সাদা পানি দুই ঘন্টা তাদের দিতে পারেন কোন সমস্যা নেই।
আর যেগুলোকে
আপনার দুর্বল বাচ্চা মনে হবে সেগুলোকে গ্লুকোজের পানি দেবেন। এছাড়াও ব্রুডারে
সোনালি মুরগির বাচ্চা গুলো ছাড়ার ১০-১৫ মিনিট পর খাবার প্রদান করতে হবে। প্রথমে
আপনারা সোনালি মুরগির বাচ্চা গুলোকে প্রথমবার পেপারে ছিটিয়ে খাবার প্রদান করতে
পারেন এবং পরবর্তী সময়ে অবশ্যই ট্রেতে খাবার প্রদান করতে হবে। এছাড়াও সোনালী
মুরগীর বাচ্চা গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে তিন ঘন্টা অন্তর অন্তর। খেয়াল রাখতে
হবে তাপ বেশি হচ্ছে কিনা।
আপনি যদি কোন সমস্যার লক্ষ্য করেন, তাহলে সেটার সমাধান
করবেন। আর যদি দেখেন কোন বাচ্চা মারা গেছে, তাহলে সেগুলো সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে
ফেলবেন। এছাড়াও কিছুক্ষণ পরপর খাবার পানি আছে কিনা লক্ষ্য রাখবেন, যদি থাকে
তাহলে দেওয়ার প্রয়োজন নাই, আর যদি না থাকে তাহলে পানি দিবেন। যখন দেখবেন পেপার
ভিজে গেছে তখন পেপার পরিবর্তন করে দেবেন। আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ২৪ ঘণ্টা
পরপর পেপার অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করা আবশ্যক।
পুলেট সোনালী ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি রেডি সোনালি মুরগি পালন করতে চান, সেক্ষেত্রে পুলেট
ব্যবস্থাপনা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুলেটের চাহিদা সব ঠিকঠাক না থাকলে,
বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায় না। এজন্য সঠিক বাজার মূল্য পাওয়ার জন্য অবশ্যই
পুলেটের সামঞ্জস্যতা রাখতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন বাড়ন্ত সোনালি মুরগি গুলোর
সামঞ্জস্যতা ধরে রাখতে যাবেন,
তখন এটা আপনার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রিয়
পাঠক আপনি যদি গ্রেডিং করে নিয়মিতভাবে খাদ্য প্রদান করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনি
খুবই ভালো পরিমানে বাজার মূল্য পাবেন। এই জন্য ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার জন্য
প্রিয় পাঠক আপনাকে অবশ্যই পুলেট সোনালী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে খুবই গুরুত্ব সহকারে
লক্ষ্য দিতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক অন্যান্য মুরগির মতো সোনালী মুরগীর তেমন খাদ্য চাহিদা নেই। অনেক
খামারীরাই মনে করেন সোনালি মুরগি যতো বেশি খাদ্য গ্রহণ করবে ততো দ্রুত বড় হবে,
কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণই একটি ভুল ধারণা। হয়তোবা অন্যান্য মুরগির ক্ষেত্রে
এটা প্রযোজ্য হতে পারে, কিন্তু সোনালী মুরগীর ক্ষেত্রে এটি মোটেও প্রযোজ্য নয়।
অন্যান্য মুরগির তুলনায় সোনালী মুরগীর গ্রোথ রেট অনেক কম হওয়ায় এজন্য সোনালি
মুরগির খাদ্যে প্রোটিন ও এনার্জির মান ব্রয়লার কিংবা অন্যান্য মুরগির তুলনায় কম
বিদ্যমান থাকে।
সাধারণত তিন বেলা খাবার প্রদান করা যেতে পারে পুলেট সোনালি
মুরগিকে। সকালবেলা পুলেট সোনালি মুরগিকে মোট খাবার প্রদান করতে পারেন ৪০% এবং
দুপুরবেলা পুলেট সোনালি মুরগিকে খাবার প্রদান করতে পারেন ২০% ও বিকেলবেলা পুলেট
সোনালি মুরগিকে খাবার প্রদান করতে পারেন ৪০% হারে। আপনারা যখন সোনালি মুরগিকে
খাবার প্রদান করবেন তখন অবশ্যই বুক বরাবর খাবার প্রদান করবেন। কিন্তু একটি বিষয়ে
অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন খাবার কোনভাবেই অপচয় না হয়।
পানি ব্যবস্থাপনা
প্রিয় পাঠক আপনি যদি যথাযথ ও সঠিকভাবে সোনালী মুরগি পালন করতে চান, সেই ক্ষেত্রে
আপনাকে সোনালী মুরগিকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার পরিষ্কার পানি ব্যবস্থা করে দিতে
হবে। এছাড়াও যখন শীতকাল থাকবে তখন যেন মুরগির ঠান্ডা না লাগে, এজন্য পাত্রে যেন
ঠান্ডা পানি না থাকে সেদিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি পাত্রের ঠান্ডা পানি
থেকেও থাকে, তাহলে সেটি ফেলে দিয়ে আবার নতুন পরিষ্কার পানি দিতে হবে। আরেকটি
বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো আপনি যখন পানির পাত্রে পানি দেবেন তখন
পানি যেন চোখ বরাবর থাকে সেটি লক্ষ্য রাখবেন।
তাহলে পানির পাত্রে ময়লা কম পড়বে
বা জমবে। এতে করে আপনার পালন করা সোনালী মুরগি গুলোর পানিবাহিত রোগ বালাই হওয়ার
আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। মনে রাখবেন মুরগির বেশিরভাগ রোগ বালাই পানি থেকে হয়ে
থাকে। এছাড়াও চেষ্টা করবেন পানির পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করার। একটি বিষয়
আপনাকে অবশ্যই মানতে হবে সেটি হলো মুরগির অধিকাংশ রোগ বালাই পানির মাধ্যমে হয়।
সোনালি মুরগি পালনে সব সময় মুরগিকে পরিষ্কার পানি পান করতে দেবেন পাশাপাশি পানির
পাত্র সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
সোনালি মুরগির বাচ্চা নির্বাচন
একটি স্বতন্ত্র মুরগির জাত হচ্ছে সোনালি মুরগি, এরপরেও বর্তমান সময়ে সোনালি
মুরগির কিছু ভেরিয়েশন বাজারে রয়েছে। যেমন সোনালী, হাইব্রিড সোনালী এবং সোনালী
ক্লাসিক নামক সোনালি মুরগির জাতের বাচ্চা বাজারে বাজারজাত করণ করা হচ্ছে। সাধারণত
ফাওমি মুরগি এবং আর আই আর মুরগির ক্রসের মাধ্যমে যে সোনালি মুরগির উদ্ভাবন হয়,
সেটি মূলত ক্রসব্রিড। নানান কারণে বর্তমান সময়ে সোনালি মুরগির জাতের বিভিন্ন
ধরনের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাচ্ছে।
আর এর ফলে বিভিন্ন হ্যাচারি উন্নত জাতের জন্য
ভালো জাতের মুরগির সাথে ক্রসব্রিড করে সোনালীর মুরগির জাত যেন আরো উন্নত হয়, এই
জন্য কাজ করছেন। মূলত এই কারণেই বর্তমান সময়ে বাজারে সোনালি মুরগির বিভিন্ন
ধরনের ভ্যারিয়েশন বিদ্যমান রয়েছেন। প্রিয় পাঠক আপনাদের সামনে আমি এখন একটি
নিচের তালিকা উল্লেখ করব এখান থেকে আপনি আপনার পছন্দমত সোনালী মুরগির জাত
নির্বাচন করতে পারেন।
ক্রমিক নং | সোনালি মুরগির বাচ্চার জাতের নাম | সংকরায়ন / পরাগায়ন | ৬০ দিনে মিনিমাম ওজন | ডিমের হার (%) | বাজার দর / বাজার মূল্য |
---|---|---|---|---|---|
০১ | সাধারণ সোনালি | ইনব্রিড- সোনালি থেকে সোনালী | ৭০০-৮০০ গ্রাম হয়ে থাকে | ৬৫-৭০% ডিম দেয় | খুব বেশি (প্রায় দেশি মুরগির কাছাকাছি) |
০২ | সোনালি হাইব্রিড | সোনালি মুরগি X ক্রয়লার মোরগ ১০% | ৯৫০-১১০০ গ্রাম হয়ে থাকে | ৫৫-৬৫% ডিম দেয় | কম |
০৩ | ক্লাসিক সোনালী | আর-আই-আর মুরগি X ফাউমি মোরগ | ৮০০-৯০০ গ্রাম হয়ে থাকে | ৭২-৮০% ডিম দেয় | বেশি |
০৪ | ক্লাসিক সোনালী | আর-আই-আর মোরগ X ফাউমি মুরগি | ৮৫০-৯৫০ গ্রাম হয়ে থাকে | ৭০-৭৫% ডিম দেয় | সাধারণ |
সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা
সোনালি মুরগির জন্য আনুমানিক ১০০ কেজি খাবার তৈরির একটি উৎকৃষ্টমানের তালিকা আপনাদের উপকারার্থে দেওয়া হলো।
ক্রমিক নং | খাদ্য তৈরির উপাদান | স্টার্টার | গ্রোয়ার | প্রিলেয়ার | লেয়ার-১ | লেয়ার-২ |
---|---|---|---|---|---|---|
০১ | ভূট্টা | ৫১ কেজি | ৫২.৫ কেজি | ৫৪ কেজি | ৫৫ কেজি | ৫৬ কেজি |
০২ | সয়াবিন মিল | ২৬ কেজি | ২৫ কেজি | ২২.৫ কেজি | ২৩ কেজি | ২২ কেজি |
০৩ | রাইচ পালিশ | ১০ কেজি | ১০ কেজি | ১২ কেজি | ৮ কেজি | ৭.৫ কেজি |
০৪ | প্রোটিন ৬০% | ৮ কেজি | ৭ কেজি | ৫.৫ কেজি | ৪ কেজি | ৩ কেজি |
০৫ | লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ | ২ কেজি | ২.৫ কেজি | ৩ কেজি | ৮ কেজি | ১০ কেজি |
০৬ | লবণ | ৩০০ গ্রাম | ২৮০ গ্রাম | ২৫০ গ্রাম | ২৮০ গ্রাম | ২৮০ গ্রাম |
০৭ | ডিসিপি | ৩০০ গ্রাম | ৩০০ গ্রাম | ২৫০ গ্রাম | ৫০০ গ্রাম | ৫০০ গ্রাম |
০৮ | সালমোনেলা কিলার | ৩০০ গ্রাম | ২৫০ গ্রাম | ২৫০ গ্রাম | ৩০০ গ্রাম | ৩২০ গ্রাম |
০৯ | প্রিমিক্স | ২০০ গ্রাম | ২৫০ গ্রাম | ২০০ গ্রাম | ৩০০ গ্রাম | ৩০০ গ্রাম |
১০ | ডিএল- মিথিওনিন | ১৫০ গ্রাম | ১৩৫ গ্রাম | ১২০ গ্রাম | ১৩০ গ্রাম | ১২৫ গ্রাম |
১১ | এল-লাইসিন | ১০০ গ্রাম | ৯০ গ্রাম | ৭০ গ্রাম | ৮০ গ্রাম | ৬০ গ্রাম |
১২ | কোলিন ক্লোরাইড | ৬০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম | ৪০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম |
১৩ | টক্সিন বাইন্ডার | ১২৫ গ্রাম | ১৩৫ গ্রাম | ১৫০ গ্রাম | ১৫০ গ্রাম | ১৫০ গ্রাম |
১৪ | সোডা | - | - | - | ৫০ গ্রাম | ৭৫ গ্রাম |
১৫ | সয়াবিন তেল | ২০০ গ্রাম | ১৫০ গ্রাম | - | ১০০ গ্রাম | - |
১৬ | খাদ্য তৈরির উপাদান মোটঃ | ১০০ কেজি | ১০০ কেজি | ১০০ কেজি | ১০০ কেজি | ১০০ কেজি |
সম্মানিত পাঠক আশা করছি আলোচ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার তৈরি করে সোনালি মুরগিকে খাবার খাওয়ালে মুরগির দ্রুত বৃদ্ধি হবে এবং মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে সাথে সাথে আপনি সোনালি মুরগি পালন করে খুব দ্রুতই লাভবান হতে পারবেন।
সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা এবং ভ্যাক্সিন প্রদান
প্রিয় পাঠক আপনি যে না মুরগি পালন করুন কেন? প্রত্যেক মুরগিরই কিছু রোগ বালাই
রয়েছে। ঠিক তেমনি সোনালী মুরগীরও কিছু সাধারণ রোগ বালাই বিদ্যমান রয়েছে। সোনালি
মুরগির রোগ গুলো হলো গাম্বুরো, কলেরা, রানিক্ষেত, করাইজা, কক্সিডিওসিস সহ বেশ
কিছু ঠান্ডা জনিত রোগ বালাই সোনালি মুরগির রয়েছে। তবে প্রিয় পাঠক আপনারা যদি
সোনালী মুরগিকে নিয়মিত ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান করেন পাশাপাশি আপনার খামারে সঠিক
জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন, তাহলে অধিকাংশ রোগ থেকেই আপনারা খুব সহজে সোনালি
মুরগিকে রক্ষা করতে পারবেন।
সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল
প্রিয় পাঠক আপনাদের সামনে নিচে কিছু সোনালী মুরগি পালনের ভ্যাকসিনের সিডিউল
নিম্নে উল্লেখিত করা হলো।
ক্রমিক নং | সোনালি মুরগির বাচ্চার বয়স (দিন) | রোগের নাম | ভ্যাক্সিনের নাম | প্রয়োগের স্থান |
---|---|---|---|---|
০১ | ৩-৫ দিন | রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস | আইবি+এনডি | এক চোখে এক ফোঁটা করে দিতে হবে। |
০২ | ১০-১২ দিন | গামবোরো | আই বি ডি | মুখে এক ফোঁটা করে দিতে হবে। |
০৩ | ১৮-২২ দিন | গামবোরো | আই বি ডি | খাবার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। |
০৪ | ২৪-২৬ দিন | রানীক্ষেত | এন ডি | এক চোখে এক ফোঁটা করে দিতে হবে। |
০৫ | ৪৪-৪৮ দিন | রানীক্ষেত* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে) | এন ডি | খাবার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। |
সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা
আপনাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা সোনালি মুরগি ব্যবসায়িকভাবে পালন করে থাকেন আবার অনেকেই রয়েছেন যারা ছোট পরিসরে নিজেই পালন করে থাকেন। এজন্য আপনারা সোনালি মুরগির বিভিন্ন রোগ-বালা প্রতিরোধে ওষুধের তালিকা সম্পর্কে জানতে চান। সম্মানিত পাঠক আমি নিচে সোনালি মুরগির ওষুধের তালিকা একটি টেবিল আকারে দিয়ে দিলাম যাতে করে আপনারা খুব সহজেই এই চার্টটি অনুসরণ করে সোনালী মুরগির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ওষুধগুলো প্রয়োগ করতে পারেন।
ক্রমিক নং | ঔষধের নাম | ঔষধ প্রদানের সময় | ঔষধ প্রয়োগের নিয়ম |
---|---|---|---|
০১ | ই-সেল | সপ্তাহে একদিন সকালে পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে | এক মিলি ঔষধ ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে |
০২ | AD3E | সপ্তাহে দুই দিন সকালে পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে | ১ মিলি ঔষধ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে |
০৩ | ক্যালসিয়াম | সপ্তাহে একদিন বিকেল বেলা পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে | ১ মিলি ঔষধ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে |
০৪ | জিংক | সপ্তাহে দুই দিন সকালে পানিতে পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে | ১ মিলি ঔষধ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে |
০৫ | লিভার টনিক | সপ্তাহে একদিন সকালে পানিতে পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে | ১ মিলি ঔষধ ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে |
উপরে উল্লেখিত সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকার টেবিলে নিয়ম গুলো মেনে চললে ও সঠিক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করলে আপনি সোনালি মুরগি পালন করে লাভবান হতে পারবেন। এই জন্য উক্ত তালিকাটি অনুসরণ করার পূর্বে অবশ্যই একজন ভালো মানের পশু বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রয়োগ করবেন।
সোনালি মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট
সম্মানিত পাঠক সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে কিভাবে ও কতটুকু খাদ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে আপনার পালিত সোনালী মুরগিগুলোর সঠিক ওজন পাবেন এ বিষয় নিয়ে একটি তালিকা দিয়ে দিচ্ছি। আশা করছি এই তালিকাটি অনুসরণ করলে আপনার পালিত সোনালি মুরগি গুলোর সঠিক ওজন পাবেন।
ক্রমিক নং | সোনালি মুরগির বয়স | মোট খাদ্য গ্রহণের পরিমান | খাদ্য প্রদানের হার | খাদ্য গ্রহণের পর ওজন বৃদ্ধির পরিমান |
---|---|---|---|---|
০১ | ৭ দিন | ৫৫ গ্রাম | ০.৮৭ % | ১২১ গ্রাম |
০২ | ১৪ দিন | ১৪৮ গ্রাম | ১.২২ % | ১২১ গ্রাম |
০৩ | ২১ দিন | ৩৩৮ গ্রাম | ১.৬৫ % | ২০৪ গ্রাম |
০৪ | ২৮ দিন | ৫১৫ গ্রাম | ১.৮৩ % | ২৮০ গ্রাম |
০৫ | ৩৫ দিন | ৬৮৮ গ্রাম | ১.৮৩ % | ৩৭৬ গ্রাম |
০৬ | ৪২ দিন | ৯৮৮ গ্রাম | ২.১০ % | ৪৭০ গ্রাম |
০৭ | ৪৯ দিন | ১২৮৫ গ্রাম | ২.২১ % | ৫৮০ গ্রাম |
০৮ | ৫৬ দিন | ১৬১০ গ্রাম | ২.৩৬ % | ৬৮ গ্রাম |
সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত ওজন বৃদ্ধির চার্ট যথাযথভাবে পালন করুন। সাথে সাথে সোনালীর মুরগির বাচ্চাকে সঠিকভাবে ভাল স্থানে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করুন। সর্বোপরি সেগুলোকে ভালোভাবে দেখাশুনা করার পাশাপাশি আপনার খামারের যাবতীয় ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকলেই সোনালি মুরগির ওজন সঠিকভাবে পাবেন এবং খুব দ্রুতই লাভবান হবেন।
সোনালী মুরগি পালনে ব্যবসায়িক হিসাব
১০০০ সোনালি মুরগি পালনে আনুমানিক এককালীন খরচের সম্ভাব্য কিছু হিসাব নিচে তালিকা আকারে দেওয়া হলো।
ক্রমিক নং | সোনালী মুরগী পালনে খরচের খাত সমূহ | আনূমানিক মূল্য বা টাকার পরিমান |
---|---|---|
০১ | ঘর তৈরি (টিনের সেমি পাকা) | ১,১০,০০০ টাকা |
০২ | খাদ্য ও পানির পাত্র | ৬,০০০ টাকা |
০৩ | ব্রুডার সরঞ্জামদি ও পর্দা | ২,০০০ টাকা |
০৪ | একদিনের বাচ্চা (১০০০ পিছ * ২২৳) | ২২,০০০ টাকা |
০৫ | মোট খাদ্য (৫০ কেজি *৪০ বস্তা * ৪০৳) | ৮০,০০০ টাকা |
০৬ | মেডিসিন | ৫,০০০-৭,০০০ টাকা |
০৭ | ভ্যাকসিন | ১৬০০ টাকা |
০৮ | লিটার | ৩২০০ টাকা |
০৯ | বৈদ্যুতিক বিল | ১২০০-১৫০০ টাকা |
১০ | কর্মচারী / শ্রমিক | ৮,০০০-১০,০০০ টাকা |
১১ | মোটঃ | ২,৩৯,০০০-২,৪৩,৩০০ টাকা |
বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠক আপনি যদি রেডি করা সোনালী মুরগি অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনায় এখানে ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের সোনালি মুরগি পালনের আনুমানিক একটা হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উল্লেখিত বাচ্চা এবং সোনালি মুরগির খাদ্য সহ আরোও অন্যান্য সকল খরচ বাবদ খাত সমূহের দাম সব সময় এক রকম থাকে না পরিবর্তনশীল। প্রিয় পাঠক আপনাদের উপকারার্থে সোনালি মুরগি পালনের খরচ বাবদ আনুমানিক এখানে একটা শুধুমাত্র আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
সোনালী মুরগী পালনে লাভ ক্ষতি/ আয়ের পরিমাণ (আনুমানিক)
আনুমানিক ১০০০ সোনালি মুরগির ওজন গড়ে ৯০০ কেজি হলে বাজারদর ১৮০ টাকা অনুযায়ী ১,৬২,০০০ টাকা হয়। প্রিয় পাঠক এখানে আপনার লাভের পরিমাণ আনুমানিক ৪০-৪৫ হাজার টাকা হতে পারে। তবে সোনালি মুরগির বাজার দরের চাহিদা অনুযায়ী লাভের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।
কেন খামার ব্যবস্থাপনায় সোনালী মুরগী পালন লাভজনক?
প্রিয় পাঠক আপনি যদি আপনার খামারকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে চান,
সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা আপনি যদি
গুরুত্ব সহকারে সেই বিষয়গুলি লক্ষ্য না করেন, তাহলে আপনি আপনার খামারকে লাভজনক
প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হবেন না। প্রিয় পাঠক আপনি যদি আপনার খামারকে
লাভজনক প্রতিষ্ঠানের রূপান্তরিত করতে চান,
তাহলে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে
সেগুলো হলো সোনালি মুরগি পালন এর সময় সঠিক ওজন নিয়ে আসতে হবে, এছাড়াও সোনালী
মুরগীর মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় আনতে হবে, এছাড়াও আগে আপনাকে বাজার
পর্যবেক্ষণ করতে হবে এরপর বাজার বুঝে বাচ্চা উঠাতে হবে। এছাড়াও খামার রোগমুক্ত
রাখার জন্য অবশ্যই বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও আপনার
পালন করা মুরগি গুলোকে সঠিক সময়ে মধ্যে ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় - মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার ও অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়
এছাড়াও মুরগির পানের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে পাশাপাশি ভালো
মানের খাদ্য প্রদান করতে হবে। এছাড়াও আপনাকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে খামারের
আশপাশ যেন সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাশাপাশি জীবাণুমুক্ত থাকে, সেদিকে খেয়াল
রাখতে হবে। একটি কথা মনে রাখবেন চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা সবচেয়ে বেশি
লাভজনক, এটি হচ্ছে মূলত খামার ব্যবস্থাপনার অন্যতম মূল শর্ত।
লেখকের ইতি কথাঃ সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি এই
আর্টিকেলটি পড়ে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে
জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ার সাথে সাথে সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z
এই বিষয় সম্পর্কে আরো ভালোভাবে ধারণা পেতে আপনার নিকটস্থ পশু অধিদপ্তর বা পশু
বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নিলে অবশ্যই আপনি সোনালি মুরগি পালন করে খুব অল্প
সময়েই অধিক লাভবান হতে পারবেন।
সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় গুলো
সম্পূর্ণ জানার পরে সোনালি মুরগি পালন করে আপনি কতটুকু লাভবান হবেন সেটা নিতান্তই
আপনার নিরলস পরিশ্রম ও সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় গুলোর উপর নির্ভর
করছে। এছাড়াও সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা
পেতে অথবা কোন সমস্যায় পড়লে অবশ্যই একজন ভালো পশু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ
করবেন। তাহলে খুব অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন। আর এভাবেই আপনি নিজেকে একজন
সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
সম্মানিত পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে
থেকে এই আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের তথ্য বহুল ও কার্যকরী আর্টিকেল নিয়মিত পোস্ট
করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল ও উপকারী সব আর্টিকেল পড়তে চান
তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই আর্টিকেলটি পড়ে
ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের কাছে তাদের
উপকারার্থে শেয়ার করে দিন।
যেন তারা সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই বিষয়
সম্পর্কে পুরোপুরি ভালোভাবে জেনে নিতে পারে। সোনালি মুরগি পালন পদ্ধতি a to z এই
বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মতামত বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই
নিচে দেয়া মতামত বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আবার আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন
কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন।
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url