টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ
আপনি কি এমন একটি সবজির সন্ধান করছেন? যেটা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর আবার খেতেও
অনেক রসালো ও সুস্বাদু! আবার বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শক্তি ও পুষ্টিগুণ প্রচুর
পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। আপনার কি চিন্তা হচ্ছে কি সেই সবজি? তাহলে আপনার
চিন্তার আর কোন কারণ নেই। কারণ আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায় হচ্ছে
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ সেই সম্পর্কে। এ বিষয়ে
বিস্তারিত তথ্যবহুল ও কার্যকরী আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে
নেওয়া যাক!
আমরা অনেকেই হয়তো টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ
সম্পর্কে না জানার কারণে টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকি। আর এই জন্যই টমেটোতে থাকা
পুষ্টি উপাদান গুলোআমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না ফলে আমাদের শরীরে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নানা ধরনের রোগ আক্রমণ করে। তাই আজকের এই
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটির মাধ্যমে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর
পুষ্টিগুণ এ বিষয় সম্পর্কে এমন কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো,
যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই আপনার শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে পারবেন এবং
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনি কি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার
জন্যই। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয়ে
বিস্তারিতভাবে নির্ভুল সব তথ্য গুলো জানতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভুমিকা
সবজির মধ্যে টমেটো হলো মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। কারণ টমেটোতে
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন পুষ্টি উপাদান ও অনেক ধরনের গুনাগুন বিদ্যমান রয়েছে। এই
পৃথিবীতে অনেক ধরনের গুনাগুন সমৃদ্ধ সবজি রয়েছে তার মধ্যে টমেটো অন্যতম যা
শরীরকে ফিট ও সজীব রাখতে সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে।
তাই আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে
পারবেন টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ এই সম্পর্কে।
এছাড়াও টমেটো খাওয়ার উপকারিতা কি কি? টমেটোর অপকারিতা কি কি? টমেটোতে কি কি
পুষ্টিগুণ আছে? প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে কি হয়? উন্নত ও হাইব্রিড জাতের
টমেটোর নাম,
টমেটো খাওয়ার নিয়ম, টমেটো খাওয়ার সঠিক সময়, টমেটোতে কি এসিড থাকে? টমেটোতে কি
কি ভিটামিন থাকে? এ বিষয়গুলো সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ এ বিষয় সম্পর্কে জানতে
চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা কি কি?
টমেটোর ইংরেজি নাম হচ্ছে Tomato,আর টমেটোর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Solanum
Lycopersicum সাধারণত টমেটো হচ্ছে একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে ভরপুর শীতের একটি
সবজি। টমেটো রান্না করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা খাওয়াতে সবচেয়ে বেশি উপকার। মূলত
টমেটো শীতের একটি সবজি হলেও, এটি সারা বছরেই এখন পাওয়া যায়। টমেটো কাঁচা কিংবা
পাকা যে কোন অবস্থাতেই খাওয়া যায়।
টমেটো বিভিন্ন ধরনের তরকারি কিংবা সালাদে ব্যবহারের ফলে,খাবারের স্বাদ হাজার গুন
বেড়ে যায়। এছাড়াও টমেটো দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন রকমের কেচাপ, সস ইত্যাদি।
টমেটো খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। শুধু টমেটো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারই
নয়, বরং টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের নানা উপকারিতা রয়েছে। শীতকালে মূলত ঋতু
পরিবর্তনের সাথে সাথে জ্বর, সর্দি-কাশি প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই দেখা মেলে। আর
এই অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে,
আপনারা যদি আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে টমেটো যুক্ত কররেন, তাহলে
এ সকল রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, ভিটামিন এ,
ভিটামিন সি, শর্করা, আমিষ, চর্বি, ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, থায়ামিন,
ম্যাঙ্গানিজ, ক্ষার, নয়াসিন, ভিটামিন বি৬, কপার, ক্রোমিয়াম, লাইকোপেন,
লৌহ,ফসফরাস, বিটা-ক্যারোটিন প্রভুতি বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর
পরিমাণে পানি বিদ্যমান রয়েছে পাশাপাশি দুই গ্রামের মতো ফাইবার রয়েছে।
আপনারা যদি কয়েকটি টমেটো স্লাইস করে অল্প লবণ এবং অল্প চিনি একটি পাত্রে দিয়ে
গরম করে স্যুপ তৈরি করে খান, তাহলে আপনাদের সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা উপশম
হবে। টমেটো শরীরের রক্ত তৈরিতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাশাপাশি
শরীরের রক্তস্বল্পতা এবং শরীরের ফ্যাকাসে ভাব দূর করে। আপেল, কমলা, মালটা,
নাশপাতি, কলা,আনারস, আঙ্গুর ইত্যাদি দামি দামি ফলের থেকে টমেটোর রক্ত তৈরীর
ক্ষমতা বহুগুণ বেশি রয়েছে। টমেটো আরো কিছু অসাধারণ উপকারিতা গুলো নিচে উল্লেখ
করা হলোঃ
- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব পূরণ করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬,সহ আরো অন্যান্য ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে। তাই জন্য আপনাদের শরীরে যদি ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে আপনারা টমেটো খেতে পারেন। কেননা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে। তাই আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে টমেটো যুক্ত করেন, তাহলে আপনার শরীরের ভিটামিনের অভাব দূর হবে।
- চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টি-এক্সিডেন্ট। লাইকোপেন নামক অ্যান্টি এক্সিডেন্ট আপনার চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করবে। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান রয়েছে। যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুন কার্যকরী। টমেটোতে বিটা-ক্যারোটিন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। লাইকোপেন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন এই উপাদান গুলো চোখ ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চোখের ছানি পড়ার মতো সমস্যা দূর করতে, টমেটো দারুন কার্যকরী। তাই চোখের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে টমেটো যুক্ত করুন।
- হাড় শক্ত করতে সাহায্য করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছেন। যা শরীরের হাড় শক্ত করতে দারুন কার্যকরী। তাই আপনারা যদি প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে একটি করে টমেটো খান, তাহলে আপনাদের শরীরের হাড় আগের চাইতে বেশি শক্ত হবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান রয়েছে, যার কারণে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে চাইলে, প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে একটি করে টমেটো খাওয়া আবশ্যক।
- হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যা-ন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। আর যে সকল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লাইকোপেন। লাইকোপেন টমেটোতে বিদ্যমান থাকার কারণে, আপনার হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও টমেটোতে আরও বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান বিদ্যমান রয়েছে, যা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
- ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যদি নিয়মিত টমেটো খান, তাহলে আপনার শরীরের ওজন হ্রাস পাবে। তাই আপনারা যারা শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে চাচ্ছেন, আপনারা আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো যুক্ত করতে পারেন। কেননা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড বিদ্যমান রয়েছে, যা শরীরের মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তাই আপনাদের যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন নামক একটি পিগমেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা শরীরের কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি রোধ করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুন কার্যকরী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আপনার স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। তাই জন্য আপনারা সুস্থ থাকতে, আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্ততপক্ষে একটি করে টমেটো যুক্ত করুন।
- বয়সের ছাপ দূর করেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। টমেটো খেলে এবং টমেটোর রস মুখে লাগালে কিংবা টমেটোর ফেসপ্যাক তৈরি করে স্কিনে লাগালে বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায়।
- মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেঃ অনেক সময় দেখা যায় ভিটামিন সি এর অভাবে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়। আর টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের দাঁতের মাড়ির জন্য খুবই উপকারী। আপনারা যদি প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে ১/২ করে টমেটো খান, তাহলে এই ধরনের রক্তপাত দূর হবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টমেটো খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে ১/২টি করে টমেটো খায়, তাহলে তাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ ত্বককে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত আপনারা আপনাদের খাদ্য তালিকায় টমেটো যুক্ত করতে পারেন। ত্বক কুচকে যাওয়া এবং শরীরে ভাঁজ পড়া রোধ করে পাশাপাশি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে দারুন সহায়তা করে। আপনারা যদি প্রতিদিন নিয়মিত টমেটো খান, তাহলে আপনাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
- সর্দি ও কাশি প্রতিরোধ করেঃ আপনারা যারা নিয়মিত সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগেন, তারা ১/২টি টমেটো স্লাইস করে হালকা একটু লবণ এবং অল্প পরিমাণে চিনি যুক্ত করে, একটি পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন,অনেক উপকার পাবেন। আপনারা যদি এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করেন, তাহলে সর্দি-কাশি খুবই দ্রুত উপশম হবে।
- অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং লাইকোপেন বিদ্যমান থাকেন। আর ভিটামিন এ এবং লাইকোপেন অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকরী। তাই আপনারা যদি প্রতিদিন নিয়মিত টমেটো খান, তাহলে আপনাদের অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- চর্মরোগ দূর করেঃ চর্মরোগ দূর করার জন্য টমেটো খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আপনাদের ত্বকে যদি কোন রকম সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত করে, টমেটো ব্যবহার করতে পারেন। চর্মরোগ নিরাময়ে টমেটোর রস দারুন কাজ করে।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ রক্তস্বল্পতা দূর করতে টমেটো খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আপেল, আঙ্গুর,নাশপাতি, কমলা, মালটা, আনারস, কলা এই সকল নামিদামি ফলের চেয়ে, টমেটোতে রক্ত তৈরীর ক্ষমতা বহুগুণ বেশি। তাইজন্য আপনারা যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য টমেটো খুবই কার্যকরী একটিউপাদান। আপনারা প্রতিদিন নিয়মিত ১/২ টি টমেটো খান, রক্তস্বল্পতার সমস্যাদূর হয়ে যাবে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন সি, নয়ািসন, ফাইবার, ফোলেট, ভিটামিন বি৬। যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এজন্যই টমেটো খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- DNA এর ক্ষতির প্রতিরোধ করাঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬। মূলত এই সকল ভিটামিন উপাদান গুলো DNA এ কে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। টমেটো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আমাদের শরীরের DNA রক্ষা করতে।
- ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ মূলত টমেটো আমাদের দেহের ত্বককে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সূর্যরশ্মি তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন বিদ্যমান রয়েছে। যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। ফলে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর হয়। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের চুলকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া কমায় পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও চুলের খুশকি কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টমেটো।
- সৌন্দর্য/রূপ চর্চায় টমেটোঃ পাকা টমেটো সৌন্দর্য চর্চায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টমেটোর পেস্ট মুখে ব্যবহারের ফলে, ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ, ছোপ, রোদে পোড়া ভাব দূর হয়। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের রং ফর্সা করতে টমেটো দারুন কার্যকরী।
টমেটোর অপকারিতা কি কি?
সাধারণত টমেটো খাওয়ার যেমন নানা রকম উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতাও
রয়েছে। আর টমেটো খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। এই বাণীটি টমেটোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনারা যদি
পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত টমেটো খান, তাহলে সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি
হতে পারে। তাই জন্য টমেটো খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সকলেরই সতর্ক হয়ে টমেটো
খাওয়া উচিত।
টমেটোতে যদিও অ্যালার্জি বিরল, তবে শ্বাস প্রশ্বাসের এলার্জির কারণ হতে পারে
পরাগ। এছাড়াও যে সকল ব্যাক্তিরা হৃদরোগের ঔষধ সেবন করেন, তারা ডাক্তারের পরামর্শ
নিয়ে টমেটো খাবেন। এছাড়াও যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ
ছাড়া টমেটো খাবেন না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টমেটো খাওয়ার আরো কিছু
অপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- অ্যাসিট রিফ্লেক্সঃ সাধারণত টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে এসিড বিদ্যমান রয়েছে। আপনি যদি পরিমাণ এর চেয়ে অতিরিক্ত টমেটো খান, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার পেটে আরও এসিড তৈরি হবে। যার ফলে আপনার হজমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রক্তচাপের সমস্যাঃ মূলত কাঁচা টমেটোতে সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই অল্প থাকে। আমরা অনেকেই টমেটো স্যুপ বানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের তিনজাত টমেটো ব্যবহার করে থাকি। এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ব্যবহার করা হয়। যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ দ্রুত বাড়িয়ে তুলবে।
- পেট খারাপঃ আপনি যদি প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে টমেটো খান তাহলে আপনার হজম প্রক্রিয়া সুস্থ থাকবে। কিন্তু আপনি যদি পরিমাণ এর চেয়ে অধিক টমেটো খান, সেক্ষেত্রে উল্টোটা হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খেলে, পেট ফাঁপা সমস্যা হতে পারে। ফলে আপনার ডায়রিয়া হতে পারে।
- কিডনিতে সমস্যাঃ সাধারণত টমেটোতে প্রচুর রিমাণে পটাশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। মূলত যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, ডাক্তার তাদের পটাশিয়ামযুক্ত খাবার কম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
- এলার্জির সমস্যাঃ পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত টমেটো খেলে, এলার্জির সমস্যা হতে পারে।
- মাংসপেশীর ব্যথাঃ টমেটোতে এক প্রকারের যৌগ বিদ্যমান রয়েছে, যা জয়েন্টের ব্যথা পাশাপাশি ফোলা জনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খেলে বেশির ব্যথা ও বাতের ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
- মূত্রনালী সংক্রামনঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে। যার ফলে বেশি পরিমাণে টমেটো খেলে মূত্রাশয়ের উপর প্রভাব পড়ে। আপনার যদি কোন রকম মূত্রনালীর সংক্রমণের সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে টমেটো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কিডনিতে পাথরঃ অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। শুনতে আশ্চর্য মনে হলেও এটাই সত্যি। কারণ টমেটোতে বিদ্যমান রয়েছে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট। এই উপাদান গুলোই মূলত কিডনিতে পাথর তৈরি করে।
- ডায়রিয়াঃ মূলত টমেটোতে সালমোনেলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান রয়েছে। আর এই ব্যাকটেরিয়াটাই মূলত ডায়রিয়ার জন্য দায়ী।
- লাইকোপিনোডার্মিয়াঃ টমেটোতে লাইকোপেন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন প্রোস্টেট ও অগ্নাশয় ক্যান্সার রোধ করতে সহায়তা করে। লাইকোপেন অগ্নাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩১ শতাংশ কমাতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে লাইকোপেন শরীরে জমা হলে লাইকোপিনোডার্মিয়া নামক এক ধরনের সমস্যা হতে পারে। যদি শরীরে লাইকোপেন বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাহলে ত্বকের রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। শরীরের জন্য লাইকোপেন খুবই উপকারী, কিন্তু দৈনিক ৭৫ মিলিগ্রামের বেশি লাইকোপেন গ্রহণ করলে লাইকোপিনোডার্মিয়া দেখা দিতে পারে।
টমেটোতে কি কি পুষ্টিগুণ আছে?
বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান
ফারাহ মাসুদা বলেন,” টমেটোকে মৌসুমী ফল বা সবজি যে যাই বলুক না কেন এর গুনাগুন
নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা না। রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ।” এছাড়াও তিনি আরো
বলেন,” টমেটো পেকে লাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পুষ্টিগুণ আরোও বৃদ্ধি পায়।”
সাধারণত টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে পানি বিদ্যমান রয়েছে। টমেটোতে প্রায় ৮০-৯৫
শতাংশই পানি।
যদিও টমেটোতে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন তুলনামূলক কম পরিমাণে থাকে। প্রোটিন এবং
দ্রবণীয় শর্করা ছাড়াও টমেটোতে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের পরিমাণ, প্রচুর পরিমাণে
বিদ্যমান থাকে। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুন। আর
তাই জন্যই টমেটো খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানা রকম উপকার মেলে। তাইতো টমেটোকে
দেহ রক্ষাকারী খাদ্য বলা হয়।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক টমেটোর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ফারাহ মাসুদা কি বলেছেন
নিচে উল্লেখ করা হলোঃ ৩৫১ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে
বিদ্যমান রয়েছে। মূলত টমেটো মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব পূরণ করে।
চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে পাশাপাশি রেটিনা কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
সাধারণত পাকা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের দাঁত
ও হাড়ের সুস্থতার সহায়ক।
প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে ভিটামিন সি ২৭ মিলিগ্রাম বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও
থায়ামিন বিদ্যমান রয়েছে ১০০ গ্রাম পাকা টমেটোতে ০.১৩ মিলিগ্রাম। থায়ামিন মূলত
স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে রিবোফ্লাইবিং বিদ্যমান রয়েছে ০.০৬ মিলিগ্রাম।
মূলত ত্বক, গ্রন্থি, চোখ, কলা, স্নায়ু ইত্যাদি সুস্থ রাখতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও টমেটোতে স্বল্প পরিমাণে লৌহ বিদ্যমান রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে
লৌহ ০.৪০ মিলিগ্রাম বিদ্যমান রয়েছে। পাকা টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম
পাওয়া যায়। যা আমাদের হাড় ও দাঁত গঠন করতে সহায়তা করে। প্রতি ১০০ গ্রাম
টমেটোতে ৪৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। পাকা টমেটো রান্না করে খেলে
এর পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও পাকা টমেটোতে প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে ২০
মিলিগ্রাম ফসফরাস বিদ্যমান রয়েছে। যা আমাদের দেহের কোষ কলা সুস্থ রাখতে সহায়তা
করে।
প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে কি হয়?
টমেটো স্বাদ এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার। মূলত প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায়
টমেটো কোন না কোন ভাবেই থাকে। আমরা টমেটো বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি যেমন কেচাপ করে,
স্যুপ করে, চাটনি করে,সস, নুডুলস, পাস্তাতে ব্যবহার করে, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের
তরকারি রান্নায় ব্যবহার করে ইত্যাদি। যেকোন তরকারিতেই টমেটো ব্যবহারের ফলে
তরকারির স্বাদ অনেক গুণ বেড়ে যায়। প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক
প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে কি হয় নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক মনিটাইজেশন শর্ত - ফেসবুক থেকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় এবং ফেসবুক
থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই জরুরী। কেননা ডাইবেটিসের মাত্রা যদি বেড়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ বাসা বাঁধতে পারে। আর এগুলো থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে সাহায্য করবে খুবই উপকারী একটি সবজির টমেটো। মূলত যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছেন তাদের জন্য এই সবজিটি খুবই উপকারী একটি আদর্শ খাবার। ডাক্তাররা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ শরীরে যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী। যারা মূলত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো একটি খুবই উপকারী ও আদর্শ খাবার হতে পারে। কারণ টমেটো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দারুণ কার্যকরী। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। আর ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করেঃ অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যাই ভোগেন আর এই কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করার জন্য খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া খুবই জরুরী। কেননা কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগীদের এমন খাবার খেতে হবে, যে খাবারগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করবে। আর সেই রকমই একটি দারুন কার্যকরী খাবার হচ্ছে টমেটো। টমেটো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী একটি খাবার। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত টমেটোর জুস খেতে পারবেন, দেখবেন অনেক উপকার পাবেন।
- ক্যান্সার থেকে দূরে রাখেঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন নামক এক ধরনের পিগমেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও টমেটোতে বিদ্যমান রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আর এই সকল উপাদান গুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে দারুন কার্যকরী। ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখা আবশ্যক। টমেটো আপনারা বিভিন্নভাবে খেতে পারেন রান্নায় ব্যবহার করে খেতে পারেন, জুস করে, সালাদ করে খেতে পারে।
- হার্ট ভালো রাখেঃ বর্তমান সময়ে হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বয়স্করাই শুধু হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে না, বরং অল্প বয়সীরা এই হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের এই বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। টমেটো হার্টের সমস্যা দূর করতে দারুন কার্যকরী।। তাই সকলেরই উচিত প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্ততপক্ষে একটি করে টমেটো যুক্ত করা। তাহলে হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
উন্নত ও হাইব্রিড জাতের টমেটোর নাম
টমেটো এমন একটি খাবার যেটি ছোট বড় সকলেই পছন্দের একটি খাবার। টমেটো হচ্ছে স্বাদ
এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি লোভনীয় খাবার। তবে টমেটোর রূপ, রং এবং স্বাদ মানুষকে
খুব সহজে আকৃষ্ট করে। টমেটো বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় তরকারিতে ব্যবহারের মাধ্যমে,
সালাদ করে,স্যুপ করে, কেচাপ করে, সস করে, চাটনি করে ইত্যাদি। আমরা অনেকেই উন্নত ও
হাইব্রিড জাতের টমেটো নাম জানিনা। তাহলে চলুন নিজে জেনে নেয়া যাক টমেটোর উন্নত ও
হাইব্রিড জাতের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো।
- হাইব্রিড টমেটো- মালিক ৩৩৩৪ (Malik 3334)
- হাইব্রিড টমেটো- রেড জুয়েল (Red Jewel)
- হাইব্রিড টমেটো- রেড স্টোন (Red Stone)
- হাইব্রিড টমেটো- সাওয়ার কিং (Sour King)
- হাইব্রিড টমেটো- টিএম ১২২০ (™ 1220)
- হাইব্রিড টমেটো- টিএম ০২৮ (™ 028)
- হাইব্রিড টমেটো- বাজীগর (Baazigar)
- হাইব্রিড টমেটো- টি এম ০২৭ (™ 027)
- হাইব্রিড টমেটো- বাহুবলি (Baahubali)
- হাইব্রিড টমেটো- ইপক (Epoch)
টমেটো খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক টমেটো খাওয়ার ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য সম্পর্কিত
নির্দেশনাবলী অনুসরণ করা খুবই জরুরী। কেননা টমেটো একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল বা
সবজি। টমেটো খাওয়ার নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো।
- প্রথমে স্বাস্থ্যকর টমেটো নির্বাচন করতে হবেঃ সবচেয়ে ভালো টমেটো পাওয়ার জন্য স্থানীয় কিংবা বাজারে গিয়ে দোকানীদের কাছথেকে স্বাস্থ্যকর টমেটো নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও আপনার যদি বাজারে টমেটো পছন্দ না হয় সেক্ষেত্রে আপনি গ্রোসারিথেকেও টমেটো কিনতে পারেন।
- টমেটো খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের সঠিক ধারণা নিনঃ আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টমেটোর পরিমাণ আপনার খাবারের ধরনের উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। আপনারা প্রতিদিন নিয়মিত ১/২ কাপ টমেটো খেতে পারবেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ১/২ কাপ টমেটো খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
- টমেটো কিনে আনার পর পরিপূর্ণভাবে ধৌত করতে হবেঃ টমেটো বাজার থেকে কিনে আনার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির নিয়ে পানির ভিতরে টমেটো গুলোকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর টমেটোগুলোকে সুন্দরভাবে সুষম ভাবে ধৌত করুন, যেন টমেটোগুলোতে লেগে থাকা মাটি, কীটনাশক,বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ দূরীভূত হয়ে যায়।
- টমেটোর রস বিচ্ছিন্ন করার উপযোগী হতে পারেঃ আপনি চাইলে টমেটোর রস বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন স্যান্ডউইচ, সস, সালাদ, স্যুপ, ইত্যাদিতে ব্যবহার করে খেতে পারেন।
- ভালোভাবে টমেটোর পানি ঝরাতে হবেঃ আপনারা যখন টমেটো বাজার থেকে কিনে আনবেন, তখন পরিষ্কার পানির ভেতরে টমেটো গুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এরপর ভালোভাবে টমেটোর পানি ঝরাবেন। তাহলে টমেটোগুলো অনেক দিন সংরক্ষণ করে খেতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করে টমেটো খাওয়া উচিত। আপনি যদি
উপরোক্ত উপায় গুলি অবলম্বন করে টমেটো খান, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উপকার
হবে।
টমেটো খাওয়ার সঠিক সময়
টমেটো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। যেহেতু আমরা সকলেই কম বেশি টমেটো
খেতে পছন্দ করি, সেহেতু টমেটো খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সকলেরই জানা খুবই
জরুরী। কেননা অনেক ব্যক্তিবর্গ রয়েছে, যারা টমেটো খেতে পছন্দ করে, কিন্তু টমেটো
খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানে না। আর টমেটো খাওয়ার সঠিক সময়, না জানার
কারণে, টমেটো খেলেও শরীরে তেমন উপকার মেলে না।
এছাড়া টমেটো খাওয়ার সঠিক নিয়ম না জানার কারণে, টমেটো খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক
ধরনের অপকারিতা দেখা যায়। তাহলে চলুন টমেটো খাওয়ার সঠিক সময় জেনে নেওয়া যাক।
টমেটো হচ্ছে বাংলাদেশের শীতকালীন জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল বা সবজি। টমেটো খাওয়ার
ফলে জ্বর, গলা ব্যথা, ঠান্ডা ইত্যাদি সমস্যা গুলো দেখা যায়। আপনারা যদি এই
সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে কখনোই রাতে টমেটো খাবেন
না।
কারণ রাতে টমেটো খেলে ঠান্ডার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। আর ঠান্ডার পরিমাণ বৃদ্ধি
পেলে জ্বর, গলা ব্যথা, ঠান্ডা ইত্যাদি সমস্যা গুলো দেখা যায়। তাই রাতে টমেটো
খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। আর টমেটো খাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে দিনের বেলা। আপনারা
যদি সকালে নাস্তা করার পর থেকে বিকালের আগ পর্যন্ত টমেটো খেতে পারবেন। তাহলে
স্বাস্থ্যের কোনো রকম সমস্যা হবে না। সেক্ষেত্রে আপনি টমেটোর নানারকম জাদুকরি সব
পুষ্টিগুণ ও উপকার পাবেন।
টমেটোতে কি এসিড থাকে?
শীতকালীন খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাদু একটি ফল বা সবজি হচ্ছে টমেটো। যদিও এখন সারা
বছরই টমেটো পাওয়া যায়। কিন্তু টমেটোর ফলন সবচাইতে ভালো হয় শীতকালে। শীতকালে
বাজারে নতুন নতুন শাক-সবজির সাথে বাজারে টমেটোর সমারোহ লেগে যায়। আমরা অনেকেই
জানিনা টমেটোতে এসিড বিদ্যমান থাকে কি না। অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করে টমেটোতে কি
এসিড থাকে? হ্যাঁ অবশ্যই টমেটোতে এসিড থাকে।
টমেটোর মধ্যে উপস্থিত প্রধান জৈব এসিড হচ্ছে সাইট্রিক এবং ম্যালিক এসিড। এছাড়াও
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম পাওয়া যায় যেমন অ্যাসকরবিক
এসিড, অক্সালিক এসিড টমেটোতে উপস্থিত থাকে। এছাড়াও টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে
সাইট্রিক এসিড বিদ্যমান রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। প্রিয়
পাঠক আশা করি আপনারা টমেটোতে কি এসিড থাকে? এই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে
পেরেছেন।
টমেটোতে কি কি ভিটামিন থাকে?
- ভিটামিনঃ টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে যেমন ভিটামিন এ ৮৩৩ IU ১৭%, ভিটামিন সি ১২.৭ মিলিগ্রাম ২১%, ভিটামিন ই ০.৫ মিলিগ্রাম 3%, ভিটামিন কে ৭.৯ মাইক্রগ্রাম ১০%, থায়ামিন ০.০ মিলিগ্রাম ২%, রিবোফ্লাবিং ০.০ মিলিগ্রাম ১%,নায়াসিন ০.৬ মিলিগ্রাম ৩%, ভিটামিন বি৬ ০.১ মিলিগ্রাম ৪%, ফোলেট ১৫.০ মাইক্রগ্রাম ৪%, ভিটামিন বি ১২ ০.০ মাইক্রগ্রাম ০%,প্যান্থোনিক এসিড ০.১ মিলিগ্রাম ১%, কোলিন ৬ .৭ মিলিগ্রাম, ভিটাইন ০.১ মিলিগ্রাম।
- মিনারেলসঃ টমেটোতে বিভিন্ন ধরনের মিনারেলস বিদ্যমান রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম ১০.০ মিলিগ্রাম ১%, ম্যাগনেসিয়াম ১১.০ মিলিগ্রাম ৩%,পটাশিয়াম ২৩৭ মিলিগ্রাম ৭%, ফসফরাস ২৪.০ মিলিগ্রাম ২%, আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম ১%, জিংক ০.২ মিলিগ্রাম ১%, সোডিয়াম ৫.০ মিলিগ্রাম ০%, ম্যাঙ্গানিজ ০.১ মিলিগ্রাম ৬%, কপার ০.১ মিলিগ্রাম ৩%, সেলেনিয়াম ০.০ মাইক্রগ্রাম ০%, ফ্লোরাইড ২.৩ মাইক্রগ্রাম।
- প্রোটিন এবং অ্যামিনো এসিডঃ প্রোটিন ০.৯ গ্রাম ২%।
- কার্বোহাইড্রেটসঃ সম্পূর্ণ কার্বোহাইড্রেট ৩.৯ গ্রাম ১%, ডায়েটারি ফাইবার ১.২ গ্রাম ৫%, স্টার্চ ০.০ গ্রাম, সুগার ০.৬ গ্রাম।
- ফ্যাট এবং ফ্যাটি অ্যাসিডঃ টোটাল ফ্যাট অ্যাসিড ০.২ গ্রাম, টোটাল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ৩.০ মিলিগ্রাম, টোটাল ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ৮০.০ মিলিগ্রাম টমেটোতে বিদ্যমান রয়েছে।
- কার্বনেটসঃ টমেটোতে টোটাল কার্বনেটস রয়েছে ৩.৯ গ্রাম, ডেটারি ফাইবার ১.২ গ্রাম, সুগার ২.৬ গ্রাম, অ্যালকোহল ০.০ গ্রাম, ওয়াটার ৯৪.৫ গ্রাম এবং আঁশ রয়েছে ০.৫ গ্রাম।
লেখকের ইতি কথাঃ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ
সম্মানিত পাঠক আশা করি উপরোক্ত আলোচনা থেকে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ সেই সম্পর্কে পুরোপুরি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। উপরে
উল্লেখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ে নিলে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং
টমেটোর পুষ্টিগুণ, টমেটো কাদের খাওয়া উচিত নয়! টমেটোতে কি কি ভিটামিন আছে? এবং
টমেটোর বিভিন্ন ধরনের গুনাগুন সে সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন। টমেটো শরীরকে
সুস্থ ও ফিট রাখার মহা ঔষধ বা প্রধান খাবার এবং চালিকা শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ
ভুমিকা পালন করে।
নিয়মিত সাধ্যমত টমেটো খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কিন্তু অনেকেই টমেটোর ভিতরে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও প্রোটিন এই গুনাগুন
গুলো সম্পর্কে জানেনা। তাই অনেকেই টমেটো তেমন খায় না। এজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের
রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই আপনি যদি সব ধরনের রোগ-বালা থেকে মুক্ত থাকতে চান
এবং আপনার শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ এই আর্টিকেলটি পড়া আবশ্যক।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে
পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের তথ্যবহুল
আর্টিকেল নিয়মিত পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল উপকারী
পোষ্ট করতে চান, তাহলে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই আর্টিকেলটি
পড়ে ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের কাছে তাদের
উপকারার্থে শেয়ার করে দিন।
যেন তারা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ এ বিষয়
সম্পর্কে পুরোপুরি ভালোভাবে জেনে নিতে পারে। টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এবং টমেটোর পুষ্টিগুণ এ বিষয়টি নিয়ে আপনার যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মতামত বা
প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে দেওয়া মতামত বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আবার
আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ
থাকুন।
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url