শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়?
আপনি কি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সজীব ও সতেজ এবং ফিট
করে রাখতে চান? এই জন্য আপনি কোন খাবার গুলো খাবেন সেটা জানেন না? তাহলে আপনার
চিন্তার আর কোন কারণ নেই। কারণ আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায় হচ্ছে
শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? সেই
সম্পর্কে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল ও কার্যকরী আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন
দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক!
আমরা অনেকেই হয়তো শাক-সবজির গুনাগুন সম্পর্কে না জানার কারণে নিয়মিত শাক-সবজি
খাওয়া থেকে বিরত থাকি। আর এই জন্যই আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ফলে নানা ধরনের রোগ আক্রমণ করে। আজ তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল শীতকালে
কোন ফসল ভালো জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? এই গুরুত্বপূর্ণ
আর্টিকেলটির মাধ্যমে শাক-সবজি খাওয়ার উপকারিতা, শাক-সবজি খেলে শরীরে কি কি উপকার
পাওয়া যাবে এ বিষয় সম্পর্কে এমন কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো,
যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই আপনার শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে পারবেন এবং
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনি কি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার
জন্যই। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয়ে
বিস্তারিতভাবে নির্ভুল সব তথ্য গুলো জানতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভুমিকা
শাক-সবজি হলো মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। কারণ শাক-সবজিতে বিভিন্ন
ধরনের ভিটামিন পুষ্টি উপাদান ও অনেক ধরনের গুনাগুন বিদ্যমান রয়েছে। এই পৃথিবীতে
অনেক ধরনের গুনাগুন সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে তার মধ্যে শাকসবজি শরীরকে ফিট ও সজীব
রাখতে সব থেকে বেশি গুণাগুনে ভরপুর রয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ
মনোযোগ সহকারে পড়লে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? -
শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? এই সম্পর্কে।
এছাড়াও শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? শীতকালীন সবজি কি কি? ২৪টি শীতকালীন শাকের
নাম, শীতকালীন সবজি চাষের সময়, শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা, ১৫ টি শীতকালীন
সবজির নাম, শীতকালীন সবজির নামের তালিকা, বারোমাসি সবজি তালিকা এ বিষয়গুলো
সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? -
শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকের এই
আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।
শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে?
সাধারণত শীতকালে রবি মৌসুমে আমরা যে সকল সবজিগুলো পেয়ে থাকি সেগুলোই মূলত হচ্ছে
শীতের সবজি বা ফসল। মূলত শীতকালীন সবজি বা ফসল গুলো হচ্ছে ভিটামিন ও মিনারেলের
অন্যতম দারুন উৎস, যা আমাদের দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এই শীতকালীন
সবজিগুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
মূলত বাংলাদেশের শীতকালকে রবি মৌসুম নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশ সহ এশিয়ার
বিভিন্ন দেশ শীত প্রধান হওয়ায় এই ঠান্ডা মৌসুমে শীতকালীন নানা ধরনের ফসল প্রচুর
পরিমাণে জন্মায়। সাধারণত শীতকাল আসার আগেই শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের ফসল যেমন
বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, মুলা, শিম,পালংশাক, লালশাক প্রভূতি ফসল চাষ কৃষকরা শুরু
করে দেন।
এছাড়াও শীতকালে যেসব ফসল গুলো প্রচুর পরিমাণে জন্মায় সেগুলো হলো ফুলকপি,
বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, চিচিংগা,মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, ঢেঁড়স, কুমড়া, ব্রকলি,
মটরশুঁটি, শালগম, ধনিয়া পাতা, পেঁয়াজ পাতা, গাজর, ওলকপি, চাল কুমড়া, পটল,
বেগুন,পাটশাক, পুঁইশাক, লালশাক, ডাটাশাক ইত্যাদি ব্যাপক হারে শীতকালে প্রচুর
পরিমাণে জন্মায়।
মূলত শীতকালীন সবজি বা ফসলে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে
ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ফলিক এসিড,আঁশ অভিটামিন সহ আরো
বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ উপাদান। আর এই শীতকালীন ফসলগুলো চাষ করার ফলে কৃষকরা
খুবই লাভবান হোন। প্রিয় পাঠক, আজকে আপনাদের জানাবো শীতকালীন সময়ে কোন কোন
ফসলগুলো খুবই ভালো জন্মায় সেই সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- টমেটোঃ মূলত শীতকালে যে ফসলটি ভালো জন্মায় সেটি হলো টমেটো। শীতকালে টমেটো উৎপাদন করে। প্রচুর কৃষক এই ফসল চাষ করে ফসল থেকে খুবই লাভবান হন।
- বিভিন্ন ধরনের ডালঃ শীতকালে মূলত যে ফসল গুলো ভালো জন্মায় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন মুগ ডাল, মসুর ডাল, মটর ডাল, বুটের ডাল প্রভুতি ফসল গুলো শীতকালে দারুন জন্মায়।
- গমঃ আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি শীতকালীন সময়ে যে সবজিটির ফলন হয় সেটি হচ্ছে গম। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ায় গম এর ফলন দারুন হয়। তাই জন্য শীতকালীন সবজি হিসেবে গম একটি দারুন জনপ্রিয় ফসল।
- পেঁয়াজঃ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফসল হচ্ছে পেঁয়াজ। আর এই পেঁয়াজ শুধু শীতকালে বেশি জন্মায়। মূলত শীতকালে যেসব ফসল গুলো বেশি হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে পেঁয়াজ।
- রসুনঃ মূলত শীতকালীন সময়ে যে ফসলগুলো বেশি জন্মায় তার মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে রসুন। শীতকালীন সময়ে খুবই ভালো জন্মায় রসুন।
- আলুঃ বাংলাদেশের শীতকালীন সবজি পাশাপাশি প্রিয় খাবার হিসেবে আলু খুবই জনপ্রিয়। এই আলু শীতকালে প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে পারে। শীতকাল সময়টা আলু উৎপাদনের জন্য খুবই ভালো এবং উপযুক্ত সময়। আর তাই জন্য আলু শীতকালে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
- সরিষাঃ বাংলাদেশের মূলত তেল উৎপাদনের জন্য শীতকালীন সময়ে সরিষার উৎপাদন করা হয়। আর শীতকাল হচ্ছে সরিষা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। এই সময় সরিষা উৎপাদন খুবই ভালো হয়, যার জন্য শীতকালে সরিষাব চাষ করা হয়।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত ফসল গুলো শীতকালীন আবহাওয়ার সাথে উপযোগী ফসল তাই জন্য এই
ফসলগুলো শীতকালে ভালো জন্মায়। কেননা শীতকালীন সময়ে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে, যার
ফলে এই ফসলগুলোর উৎপাদন ভালো হয়। আশা করি বন্ধুরা শীতকালে কোন কোন ফসল গুলো ভালো
জন্মায় এই সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
শীতকালীন সবজি কি কি?
শীতকালে শীতের আগমন হতে না হতে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সবজির সমাহার লেগে যায়।
শীতের সময় বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি দেখা যায়। শীতকালে বা রবি মৌসুমে যে সকল
সবজিগুলো পাওয়া যায় মূলত সেগুলো শীতকালে ফসল বা সবজি নামে পরিচিত। শীতকালীন
সবজি সেই সময় প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। শীতকালীন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে
পুষ্টি গুণাগুণ থাকায় শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করে পাশাপাশি স্বাস্থ্য জনিত
বিভিন্ন ধরনের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ায় করতে সাহায্য করে। শীতকালে বাংলাদেশ পাওয়া
যায় এমন কিছু সবজির নামগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
আরো পড়ুনঃ আজীবন সুস্থ থাকার উপায়
- ক্যাপসিকাম
- পেঁয়াজ পাতা
- লেটুস পাতা
- ধনিয়া পাতা
- পুদিনা পাতা
- মিষ্টি কুমড়া
- চাল কুমড়া
- কচুর মুখি
- মিষ্টি আলু
- মানকচু
- মটরশুটি
- শালগম
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- বরবটি
- টমেটো
- ওলকপি
- ব্রকলি
- গাজর
- ঢেঁড়স
- চিচিঙ্গা
- করলা
- ধুন্দল
- পটল
- ঝিঙে
- শিম
- আলু
- মুলা
- বিট
- লাউ
২৪ টি শীতকালীন শাকের নাম
বাংলাদেশ হচ্ছে ষড়ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির মাঝেও
আছে আমূল পরিবর্তন। আর এই সময় প্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে শাকের ফলন খুবই ভালো
হয়। শীতকাল আসলেই বাজারে শাকসবজির সমারারহ লেগে যায়। শীতকালে নানা রকম
পুষ্টিগুণে ভরপুর শাক পাওয়া যায় পাশাপাশি সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
শীতকালেে নানা রকম তাজা শাকসবজি পাওয়া। আর এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য দারুন
উপকার। তাহলে চলুন শীতকালে কি কি শাক পাওয়া যায় সেগুলোর একটি তালিকা নিচে
উল্লেখ করা হলো।
- শালগম শাক
- তেলাকুচা শাক
- হেলেঞ্চাশাক
- কলমি শাক
- কালাই শাক
- ধনেপাতা
- পুদিনা পাতা
- লেটুস পাতা
- থানকুনি
- মুলা শাক
- লাল শাক
- পুঁইশাক
- ডাটা শাক
- পালংশাক
- কুমড়া শাক
- লাউ শাক
- সরিষা শাক
- ঢেঁকি শাক
- কাঁটা শাক
- শেচি শাক
- নাপা শাক
- কচু শাক
- লাল শাক
- মেথি শাক
শীতকালীন সবজি চাষের সময়
মূলত শীতকালে সবজি চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে সঠিক সময় নির্বাচন করতে হবে।
কেননা সবজির প্রকারভেদে সবজি চাষের সময় ভিন্ন হয়ে থাকেন। সাধারণত শীতকালীন
সবজিগুলো চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস
পর্যন্ত। শীতের সবজি চাষ করার সময়টা বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর এই পেশাটা কৃষকদের জন্য লাভজনকও বটে।
মূলত সবজি চাষ করতে হয়, যখন কম বৃষ্টিপাত হবে এবং ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া থাকবে,
তখনই মূলত সবজির চাষ করার আদর্শ সময়। কিন্তু আপনারা যদি শীতকালীন সবজি চাষ করে
সর্বোচ্চ ফলন পেতে চান, সেক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরী।
এই সময়কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
- ১. ( অক্টোবর-নভেম্বর) আগাম শীত
- ২. (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মধ্যম শীত
- ৩. (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) শেষ শীত
(অক্টোবর-নভেম্বর) আগাম শীতঃ
(অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে সেই সময় ফসলের মাটি উষ্ণ বা গরম থাকেন পাশাপাশি সেই সময়
বৃষ্টিপাত ও খুবই কম হয়। এইজন্য সেই সময় কিছু কিছু সবজির বীজ রয়েছে সেগুলো
বপনের আদর্শ ও উপযুক্ত সময়।
- চাষের উপযুক্ত সবজিঃ বাঁধাকপি, শালগম, ফুলকপি, লালশাক,পালংশাক ও মুলা এই সবজিগুলো মূলত সেই সময় চাষের উপযোগী এবং বীজ বপনের আদর্শ সময়।
- মাটি তৈরিঃ বিভিন্ন ধরনের জৈব সার যেমন গোবর, খৈল, কম্পোস্ট এই জৈব সারগুলি প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে ফসল খুবই ভালো পাশাপাশি বাম্পার ফলনও হবে।
(ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মধ্য শীতঃ
(ডিসেম্বর জানুয়ারী) মাসে শীতের তীব্রতা বেশি থাকেন। আর এমন কিছু কিছু সবজি
রয়েছে, যে সবজিগুলো অতিরিক্ত ঠান্ডা সহ্য করার সক্ষমতা থাকে না। আর সেই সবজিগুলো
বপণের উপযুক্ত এবং আদর্শ সময় হচ্ছে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) মাস।
- উপযুক্ত সবজিঃ মটরশুটি, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া। এই সবজিগুলোর ফলন (ডিসেম্বর-জানুয়ারী) তে খুবই ভালো হয়। সেই সময়টাই হচ্ছে মূলত এই সবজিগুলো বপণের জন্য আদর্শ সময়
- গাছের রক্ষণাবেক্ষণঃ কোনোভাবেই যেন ঠান্ডা সবজি গাছকে স্পর্শ করতে না পারেন, তাই জন্য গাছকে রক্ষা করার জন্য চাষের জমিতে পলিথিন বা খড় দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়াও আপনারা ঠান্ডা থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য গাছের গোড়ায় মাটি ও ব্যবহার করতে পারেন।
(ফেব্রুয়ারি-মার্চ) শেষ শীতঃ
(ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মাসে আবহাওয়া দিন দিন ক্রমশ গরম হতে থাকে। কারণ দিনের বেলা
সূর্যের আলো বেশি পরিমাণে তীক্ষ্ণভাবে উড্ডয়ন হয়। আর কিছু কিছু সবজি রয়েছে
যেগুলো এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ভালো ফলন হয়। সেই সবজিগুলো চাষের উপযুক্ত এবং
আদর্শ সময় হচ্ছে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মাস।
- উপযুক্ত সবজিঃ করলা, লাউ, ঝিঙে। এই সবজিগুলোর ফলন (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মাসে খুবই ভালো হয়। সেই সময়টা হচ্ছে এই সবজিগুলো বপনের আদর্শ সময়।
- সেচ ও আগাছা দমনঃ মূলত এই সময় মাটি আদ্র হয়ে থাকেন, এইজন্য সেই সময় সেচের পরিমাণ অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে হয়। এছাড়াও পোকামাকড় দমন পাশাপাশি আগাছা দমনে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা
প্রিয় পাঠক, ইতিমধ্যে আপনাদের সাথে শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে, শীতকালীন সবজি
চাষের সময়, এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, আশা করি আপনারা পুরোপুরি ভাবে
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব শীতকালীন সবজি চাষের
তালিকা সম্পর্কে। শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- পালং শাকঃ সাধারণত ডিসেম্বর মাস থেকে অক্টোবর মাস এর মধ্যে পালং শাক চাষ করার জন্য উপযুক্ত সময়। পালং শাক রোপনের পর থেকে ৩০ থেকে ৫০ দিন পর্যন্ত আপনাকে পালং শাক সংগ্রহ করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে আপনি আপনার জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন।
- বেগুনঃ শীতকালের একটি খুবই জনপ্রিয় ও অন্যতম সবজি হচ্ছে বেগুন। আপনি যদি বেগুন চাষ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যেই অবশ্যই বেগুনের বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপন করার পর থেকে ৬০ থেকে ৮০ দিন এর মধ্যে আপনি আপনার বেগুন গাছ থেকে বেগুন সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন।
- ফুলকপিঃ আপনি যদি ফুলকপি চাষ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যেই ফুলকপির বীজ বপন করতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময়ে ফুলকপির বীজ বপন করেন,তাহলে সেক্ষেত্রে ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আপনি আপনার ফসল থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন।
- গাজরঃ আপনারা যদি গাজর চাষ করতে চান, তাহলে সেক্ষেত্রে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাসের মধ্যেই আপনাকে অবশ্যই গাজরের বীজ বপন করতে হবে। আপনি যদি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই গাজরের বীজ বপন করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গাজরের ফলন খুবই ভালো হবে।
প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনায় শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আপনারা যদি উপরোক্তর তালিকা অনুযায়ী
শীতকালীন সবজি চাষ করেন, তাহলে আপনার সবজিগুলোর ফলন অধিক পরিমাণে হবে। প্রিয়
পাঠক আশা করি শীতকালীন সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন।
১৫ টি শীতকালীন সবজির নাম
শীতকাল হলো একটি দারুণ সময, মূলত শীতকাল প্রকৃতি আমাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষ
কিছু সবজি নিয়ে আসে। শীতকালীন সবজিগুলো স্বাদে যেমন অতুলনীয়, ঠিক তেমনি পুষ্টি
গুণে পরিপূর্ণ ও ভরপুর। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাশাপাশি
অত্যন্ত উপকারী। সাধারণত শীতকালীন সময়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি
উৎপাদিত হয়। আর আমাদের দেশের কৃষকরায় মূলত শীতকালীন সমস্ত সবজি উৎপাদন করেন এবং
শীতকালীন সবজি গুলো উৎপাদন করার মাধ্যমে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছে।
তাই জন্য আপনারা যদি শীতকালীন সবজিগুলো উৎপাদন করে লাভবান হতে চান, তাহলে
সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে আপনাদের শীতকালীন সবজি সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে জানতে
হবে। তাই জন্য প্রিয় পাঠক আপনাদের আজকে এমন ১৫টি শীতকালীন সবজির নাম জানাবো
যেগুলো শুধুমাত্র শীতকালেই পাওয়া যায়, আর শীতকালেই চাষ করা। ১৫টি শীতকালীন
সবজির নাম নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- বাঁধাকপিঃ মূলত বাঁধাকপিকে ইংলিশে Cabbage বলা হয়। শীতকালে খুবই সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি সবজি হচ্ছে বাঁধাকপি। বাঁধাকপিতে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফাইবার এবং ম্যাঙ্গানিজ। মূলত ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফাইবার ও ম্যাঙ্গানিজ এর দারুন উৎস হচ্ছে বাঁধাকপি। সাধারণত বাঁধাকপি কম ক্যালরিযুক্ত পাশাপাশি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি যেমন হজমে দারুন কাজ করে, ঠিক তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। বাঁধাকপি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনারা চাইলে বাঁধাকপি তরকারি রান্না করেও খেতে পারেন, আবার সালাদ হিসাবেও খেতে পারেন। কারো যদি হজমের সমস্যা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে বাঁধাকপি হজমের সমস্যা দূর করতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আপনারা বাঁধাকপি খেতে পারেন পাশাপাশি হৃদপিন্ডের জন্য দারুন উপকারি বাঁধাকপি।
- টমেটোঃ টমেটো হচ্ছে একটি দারুন সুস্বাদু সবজি, যার নাম শুনলে জিভে জল চলে আসে। সাধারণত লাল রঙের এই টমেটো সকলের এতটাই পছন্দ যে, বেশিরভাগ মানুষ প্রায় সকল রান্নায় টমেটো ব্যবহার করে থাকেন। টমেটোর বিকল্প কোন কিছুই নেই। মূলত উদ্ভিদবিজ্ঞান অনুযায়ী একটি রসালো ফলের নামই হচ্ছে টমেটো। কিন্তু আমরাই টিকে সবজি হিসেবে তরকারি রান্নায় এবং সালাদে ব্যবহার করে থাকি। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছেন। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত টমেটো হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর দারুন উৎস। টমেটোর বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে যেমন রোমা ভিএফ,বারি টমেটো ৭,৬, ৫,৪, টিপু সুলতান, রোমারিও। শীতকালে বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে টমেটো চাষ করা হয়। শীতকালে যেমন টমেটো চাষ করা হয়, ঠিক তেমনি এর ফলনও ব্যাপক হারে হয়।
- ফুলকপিঃ মূলত ফুলকপিকে ইংলিশে Cauliflower বলা হয়। ফুলকপি হচ্ছে শীতকালীন একটি দারুন জনপ্রিয় সবজি। ফুলকপি মূলত শীতকালে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। ফুলকপি দেখতে মূলত ফুটন্ত ফুলের মতো দেখায়, যা খুব সহজেই চেনা যায়। এছাড়া ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল খনিজ পদার্থ। এছাড়া ফুলকপি হচ্ছে কম ক্যালোরিযুক্ত পাশাপাশি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা দ্রুত হজমে সহায়তা করে পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণের দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুলকপি মূলত বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয় যেমন পিজা,স্যুপ,ভাজি,বড়া,পাকোড়া,তরকারি সহ বিভিন্ন ধরনের রান্নায়। শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপি পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ একটি খাবার এটি আপনারা শীতকালে রান্না করে খেতে পারেন।
- শালগমঃ মূলত শালগমকে ইংলিশে Turnip বলা হয়। শীতকাল আসতে না আসতেই বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সবজি রান্নাঘর দখল করে নেই। আর এই সবজিগুলোর ভিতরে অন্যতম হচ্ছে শালগম। মূলত শালগম শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। শালগম মূলত বিভিন্ন ধরনের রঙের হয়ে থাকে যেমন বেগুনি, গোলাপী ও সাদা। এছাড়াও শালগম খুবই সুস্বাদু পাশাপাশি পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি সবজি। শালগম হজমে যেমন দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ঠিক তেমনই শ্বাসকষ্ট দূর করতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজ করে এবং হাড়ের গঠনে সহায়তা করে। শালগমের বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফলেট সহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ যেমন পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এই উপাদান গুলো প্রচুর পরিমাণে শালগমে বিদ্যমান থাকে। শালগম বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায় যেমন শালগমের স্যুপ, শালগমের ভাজি, শালগমের পুরি,শালগমের সালাত, শালগমের চাটনি, শালগমের তরকারি ইত্যাদি।
- পালংশাকঃ শীতকালের আগমন হতে না হতেই বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন শাকের সমাহার লেগে যায়। আর শীতের শাকগুলোর ভিতরে জনপ্রিয় ও অন্যতম শাক হচ্ছে পালংশাক। মূলত পালংশাক খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। পালংশাক খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনি পুষ্টি গুণে ভরপুর। শীতকালে এই শাকটি প্রায় বেশিরভাগ মানুষই তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখেন। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান রয়েছে। এটি যেমন আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করতে দারুন কাজ করে, ঠিক তেমনি রক্তশূন্যতা দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পালংশাকে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইত্যাদি। পালংশাকের ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকায় চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে পাশাপাশি ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুন কাজ করে।
- ব্রকলিঃ ব্রকলিকে ইংলিশে Broccoli বলা হয়। শীতকালীন সময়ের খুবই জনপ্রিয় ও সুস্বাদু একটি সবজির নাম হলো ব্রকলি। ব্রকলি খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনি পুষ্টিগুনে ভরপুর। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ফোলেট। ব্রকলি আন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যান্সার প্রতিরোধে দারুন সহায়ক পাশাপাশি হজমে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রকলি বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা হয় যেমন স্টার ফ্রাই হিসেবে, সালাত হিসাবে, স্যুপ হিসাবে, ভাজি হিসাবে, তরকারি হিসেবে, ইত্যাদি। ব্রকলি মূলত একটি শীতকালীন সবজি হওয়ায়, এটি শীতের মৌসুমে আপনারা বাজার থেকে কিনে খেতে পারবেন।
- মুলাঃ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজিগুলোর ভিতরে মুলা হচ্ছে অন্যতম। মুলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে পাশাপাশি ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আইরন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল খনিজ পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। মুলা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুন কাজ করে পাশাপাশি শরীরের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে দারুন সহায়ক। শীতকালের একটি জনপ্রিয় সবজি হচ্ছে মুলা, এই সবজির স্বাদ যেমন তীক্ষ্ণ, ঠিক তেমনি এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। মুলা বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। আবার মুলা অনেক ঔষধি গুণাগুনে ভরপুর। মুলাতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন থাকায় এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- গাজরঃ গাজরকে ইংলিশে Carrot বলা হয়। শীতকালে মূলত বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সবজি বাজারে ওঠে। আর এই শীতকালীন সবজিগুলোর ভিতরে একটি সহজলভ্য সবজি হচ্ছে গাজর। গাজর হচ্ছে ভিটামিন এ এর দারুন উৎসব। গাজর আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাশাপাশি চোখের জন্য খুবই উপকারী। গাজর বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় যেমন কাঁচা খাওয়া যায়, রান্না করে খাওয়া যায়, সালাত হিসাবে খাওয়া যায়। গাজরের মিষ্টি স্বাদ পাশাপাশি বহুমুখী ব্যবহারের জন্য গাজর খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে পটাশিয়াম, ফাইবার ভিটামিন এ, বিটা-ক্যারোটিন সহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় সকল খনিজ পদার্থ, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
- লাউঃ লাউকে ইংলিশে Bottle Gourd বলা হয়। মূলত শীতকালে লাউয়ের ফলন প্রচুর পরিমাণে হয়। লাউ খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে পানি, ফাইবার এবং ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে পাশাপাশি হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। লাউ বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়, লাউ স্যুপ হিসেবে খাওয়া যায়, তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়, ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়, ঝোল তরকারি হিসেবে খাওয়া যায় প্রভূতি।
- শিমঃ শিমকে ইংলিশে Beans বলা হয়। মূলত শিম হচ্ছে একটি শীতকালীন একটি জনপ্রিয় সবজি। শীতকালে প্রচুর পরিমাণে শিমের ফলন হয়। শিমে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন সি, প্রোটিন, ফাইবার ইত্যাদি। শিম হজম শক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজ করে। শিম বিভিন্ন ধরনের তরকারিতে ব্যবহার করে রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়াও শিম সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়।
- লালশাকঃ শীতকালে প্রায় সকল মানুষেরই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পছন্দের একটি সুস্বাদু খাবার হচ্ছে লালশাক। লালশাক দেখতে মূলত লাল রঙের হয়ে থাকে। লাল শাকের সুন্দর রঙে পেছনে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুনাগুন। আয়রনের দারুন উৎস হচ্ছে লালশাক। লালশাক শরীরের রক্ত তৈরি করে পাশাপাশি রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। লালশাকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইত্যাদি উপাদান। লালশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকায়, চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়, রান্না করে খাওয়া যায়,ভেজে খাওয়া যায় ইত্যাদি।
- মটরশুঁটিঃ শীতকালীন একটি জনপ্রিয় সবজির নাম হচ্ছে মটরশুটি। মটরশুটি শীতকালীন সময়ে প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়। কেননা এটি একটি শীতকালীন জনপ্রিয় সবজি। মটরশুঁটি স্বাদে যেমন অনন্য ঠিক তেমনি পুষ্টিগুণাগুনে ভরপুর। প্রোটিনের দারুন উৎস হচ্ছে মটরশুটি। যা স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকারি উপাদান। এছাড়াও মটরশুটিতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে আঁশ। মটরশুটি হজম শক্তিকে উন্নত করে পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। মটরশুটি বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায় যেমন মটরশুটির ভাজি, মটরশুটির পুরি, মটরশুটি লুচি, মটরশুটির চাটনি,মটরশুঁটির ডাল এবং অন্যান্য আরো বিভিন্ন ধরনের রান্নায় মটরশুটি ব্যবহার করা হয়।
- পেঁয়াজকলিঃ পেঁয়াজকলি হচ্ছে মূলত শীতকালীন সময়ের একটি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু সবজি। এই সবজিটি খেতে প্রায় সকলেই পছন্দ করে। একমাত্র শীতকালে পেঁয়াজগুলি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। পেয়াজকলি হচ্ছে পেঁয়াজ লাগানোর পর, পেঁয়াজের উপরিভাগের অংশই হচ্ছে পেঁয়াজকলি। পেঁয়াজকলি খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। পেঁয়াজ কলি খেতে যেমন সুস্বাদু, ঠিক তেমনি এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। পেঁয়াজ কলি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় ভাজি হিসাবে, বিভিন্ন ধরনের তরকারিতে ব্যবহারের মাধ্যমে ইত্যাদি।
- ধনিয়া পাতাঃ শীতকালের আগমন হতে না হতেই বাঙ্গালীদের কাছে শীতকালের একটি খুবই সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় সবজি হচ্ছে ধনিয়া পাতা। বিভিন্ন ধরনের খাবারে ধনিয়া পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে খাবারের স্বাদ অনেক গুন বেড়ে যায়। ধনিয়া পাতা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। ধনিয়া পাতা সরাসরি তরকারি হিসাবে খাওয়া না গেলেও, বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের তরকারিতে ব্যবহারের মাধ্যমে খাওয়া যায়, চাটনি হিসেবে খাওয়া যায় ইত্যাদি।
- মিষ্টি আলুঃ মূলত শীতকালে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি আলু চাষ করা হয়। আর শীতকালেই মিষ্টি আলুর ফলন সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। মিষ্টি আলু প্রায় সকল মানুষই খেতে খুবই পছন্দ করেন। মিষ্টি আলু স্বাদের দিক থেকে অনন্য। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায় আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছেন ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, বিটা-ক্যারোটিন ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার সহ আরো প্রয়োজনীয় সকল খনিজ পদার্থ। যা আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখেন। এছাড়াও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে দারুন কাজ করেন।
শীতকালীন সবজির নামের তালিকা
শীতকালীন অনেক সবজি রয়েছে যেগুলোর নাম না জানার কারণে আমরা সেই সবজিগুলো
সঠিকভাবে খেতে পারি না। আবার অনেক শীতকালীন সবজি বাংলাদেশের রয়েছে যেগুলো শুধু
মাত্র শীতকালে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি চাইলে শীতকালীন সবজিগুলো,
শীতকালীন সবজির তালিকা থেকে বেছে নিয়ে, আপনারা সেই সবজিগুলোর আবাদ করতে পারেন।
তাহলে আপনি সেই সবজি গুলোর মাধ্যমে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেই
সবজিগুলো বাজারজাত করে লাভবান হতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, তাহলে চলুন জেনে নেওয়া
যাক শীতকালীন সবজির নামগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
পাতা জাতীয় সবজিঃ
- সরিষার শাক
- হেলেঞ্চা শাক
- পালং শাক
- ঝিঙা শাক
- মূলার শাক
- ডাঁটা শাক
- লাল শাক
- কচুর লতি
- লাউ শাক
- বউতা শাক
- পুঁইশাক
মূল জাতীয় সবজিঃ
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- মিষ্টি আলু
- কচুর ডাঁটা
- শালগম
- বিটরুট
- ব্রকলি
- গাজর
- মুলা
ফল জাতীয় সবজিঃ
- চালকুমড়ো
- মটরশুটি
- শালগম
- ঢেঁড়স
- তরমুজ
- চিচিঙ্গা
- ধুন্দল
- পটল
- শিম
- লাউ
- পেঁপে
- ঝিঙা
অন্যান্য সবজিঃ
- পেঁয়াজ
- রসুন
- পুদিনা
- লেটুস
- মরিচ
- হলুদ
- ধনে
- জিরে
- আদা
প্রিয় পাঠক উপরোক্ত উল্লেখিত সবজিগুলো পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি
আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তাই জন্য সকল ব্যক্তিবর্গদের শীতকালীন সবজি সম্পর্কে
জানা খুবই জরুরী। কেননা প্রয়োজনে আপনারা এগুলো আবাদ করতে পারবেন। এছাড়াও আমাদের
দেশের কৃষক ভাইদের উপরোক্ত সবজিগুলো শীতকালে চাষ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
তাহলে আমাদের দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তখন দেখবেন
একসময় আমাদের দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন উচ্চতর শিখরে পৌঁছে গেছে।
বারোমাসি সবজি তালিকা
মূলত সবজি চাষ হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। অনেকেই
আমাদের কাছে জানতে চান, বারোমাসি শাকসবজি অর্থাৎ কোন কোন শাকসবজি গুলো সারা বছর
মানে বারোমাসই চাষ করা যায় তার তালিকা সম্পর্কে। তাদের জন্যই মূলত আজকের এই
আর্টিকেলটি লেখা, কোন অংশ স্কিপ না করে, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
পড়ুন। কেননা আজকে আপনাদের সাথে এই পোস্টে বারোমাসই চাষ করা যায় এরকম শাকসবজির
তালিকা শেয়ার করব।
এমন কিছু শাকসবজি রয়েছে যেগুলো বারোমাস জুড়েই বিভিন্ন ধরনের সবজিগুলো চাষ করা
সম্ভব। যা কৃষকদের লাভবান করতে সাহায্য করবে পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত
হবে। বর্তমান সময়ে ভৌগোলিক ও জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের কারণে, বিভিন্ন ধরনের
শাকসবজি বারোমাস চাষ করা যায় এবং চাষীরা সেই ফসলগুলো চাষ করার মাধ্যমে সফলতা লাভ
করছেন। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে বেশ কিছু বারোমাসি শাকসবজির তালিকা নিচে উল্লেখ
করা হলো।
বারোমাসি শাক-সবজির তালিকাঃ
- ক্যাপসিকাম
- মিষ্টি কুমড়া
- ধনেপাতা
- মিষ্টি আলু
- ডাটাশাক
- লালশাক
- পালংশাক
- পুঁইশাক
- টমেটো
- পেঁয়াজ
- বেগুন
- পটল
- করলা
- চিচিঙ্গা
- গাজর
- কুমড়া
- ঢেঁড়স
- মরিচ
- পেঁপে
- ঝিঙে
- মুলা
- লাউ
- শশা
- কচু
প্রিয় পাঠক, যে সবজিগুলো বারোমাসই চাষকরা যায় সেই সবজিগুলোর একটি তালিকা
আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আশা করি বারোমাস চাষ করা যায় এরকম সবজির তালিকা
সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।
লেখকের ইতি কথাঃ শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়?
সম্মানিত পাঠক আশা করি উপরোক্ত আলোচনা থেকে শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? -
শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? সেই সম্পর্কে পুরোপুরি বিস্তারিত জানতে
পেরেছেন। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ে নিলে শীতকালে কোন ফসল ভালো
জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? শীতকালে কি কি শাক-সবজি পাওয়া
যায়? এবং শাক-সবজির বিভিন্ন ধরনের গুনাগুন সে সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন।
শাক-সবজি শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখার মহা ঔষধ বা প্রধান খাবার এবং চালিকা শক্তি
হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
নিয়মিত শাক-সবজি সেবন করলে সব ধরনের রোগ-বালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু
অনেকেই শাক-সবজির ভিতরে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও প্রোটিন এই গুনাগুন গুলো
সম্পর্কে জানেনা। তাই তারা নিয়মিত শাক-সবজি খায় না। এজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের
রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই আপনি যদি সব ধরনের রোগ-বালা থেকে মুক্ত থাকতে চান
এবং আপনার শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই শীতকালে কোন ফসল ভালো
জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? এই আর্টিকেলটি পড়া আবশ্যক।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে
পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের তথ্যবহুল
আর্টিকেল নিয়মিত পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল উপকারী
পোষ্ট করতে চান, তাহলে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই আর্টিকেলটি
পড়ে ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের কাছে তাদের
উপকারার্থে শেয়ার করে দিন।
যেন তারা শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? - শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? এ
বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি ভালোভাবে জেনে নিতে পারে। শীতকালে কোন ফসল ভালো জন্মে? -
শীতকালে কি কি শাক-সবজি চাষ করা হয়? এ বিষয়টি নিয়ে আপনার যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ
মতামত বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে দেওয়া মতামত বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন
না। আবার আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও
সুস্থ থাকুন।
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url