আজীবন সুস্থ থাকার উপায়
কে না চাই পৃথিবীর এই সুন্দর জীবনটি নীরোগ ভাবে কাটাতে ও আজীবন সুস্থ থাকতে? আপনি
কি আজীবন সুস্থ থাকতে চান? তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ আজকে আমাদের
এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায় হচ্ছে আজীবন সুস্থ থাকার উপায় সেই সম্পর্কে। এ
বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল ও প্রয়োজনীয় আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে
জেনে নেওয়া যাক!
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটির মাধ্যমে আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এ বিষয়ে
সম্পর্কে এমন কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো, যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে
আপনি খুব সহজেই নীরোগ থাকতে পারবেন এবং আপনার জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে
পারবেন। আজীবন সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান, তাহলে
আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ
সহকারে পড়ুন। তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নির্ভুল সব তথ্য গুলো
জানতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভূমিকা
সুন্দর এই পৃথিবীতে বসবাসরত প্রতিটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা যে, তাদের দৈনন্দিন জীবন
যেন নীরোগ হয় এবং সাথে সাথে তারা যেন আজীবন সুস্থ থাকতে পারে। এজন্য অনেকেই
আজীবন সুস্থ থাকার উপায় গুলো ভালোভাবে জেনে নিয়ে নীরোগ থাকার জন্য বিভিন্ন কৌশল
অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়ে সঠিক তথ্যগুলো জানতে পারেনা। এই জন্য
তারা আজীবন সুস্থ থাকার বদলে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় ভুগতে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় - মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার ও
অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়
তাই আপনি যদি আজীবন সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে পুরোপুরি স্পষ্ট ধারণা রাখেন তবে
আপনি একটি উৎফুল্ল, নীরোগ ও সুখী জীবন যাপন করতে পারবেন। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি
সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন, তাহলে আজীবন সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে পুরোপুরি
ভালোভাবে জানতে পারবেন। এছাড়াও লাইফস্টাইল ডিজিজ কি কি কারনে হতে
পারে?/লাইফস্টাইল ডিজিজের মূল কারণ, আজীবন সুস্থ থাকার উপায়, মন এবং শরীরের
মধ্যে সংযোগ কি?
স্ট্রেসের মানসিক প্রভাব কি? স্ট্রেসের শারীরিক প্রভাব কি? মনোদৈহিক সমস্য/রোগের
নাম, সুস্থ কর্মময় দীর্ঘ জীবনের জন্য করণীয় কী? পৃথিবীতে এখন কোন জিনিসের অভাব
সবচেয়ে বেশি? কয়টি জিনিস দিয়ে দেহ সুগঠিত হয়? স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক
খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য প্রধানত কত প্রকার? মানবদেহে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসিড-ক্ষার
ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত, সারাদিনের খাবার কখন ও কিভাবে খাবেন? এই বিষয়গুলো
সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এ বিষয়
সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।
লাইফস্টাইল ডিজিজ কি কি কারনে হতে পারে?/লাইফস্টাইল ডিজিজের মূল কারণ
- ভ্রান্ত-জীবনদৃষ্টিঃ আমাদের মন কি চায় তা আমরা নিজেও জানিনা। আকাশ ছোঁয়া চাওয়া আমাদের সারাক্ষণ অস্থির রাখছে কোনভাবেই স্থির হতে দিচ্ছে না। বিশ্বাস হচ্ছে না আপনাদের? তাহলে এক কাজ করুন আজকে একটা কাগজে লিখে রাখুন পর্যায়ক্রমে আপনি কি কি চান সেই সকল জিনিসের নাম? তারপর এই কাগজটি সুন্দর করে যত্ন সহকারে কোথাও রেখে দিন। দশ বছর পর আপনার লেখা তালিকা টি না দেখে আবার একটি কাগজে আপনার চাওয়া গুলো লিখুন। লেখার পর আগের তালিকা টি বের করুন দেখবেন আগের তালিকা এবং বর্তমানে আপনি যে তালিকাটি তৈরি করেছেন তার ভিতরে অধিকাংশই মিল নেই। কারণ আগের চাওয়া গুলো ইতিমধ্যেই আপনার অনেকগুলো পূরণ হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি তৃপ্ত হন নাই। কারণ আপনার নতুন টার্গেট, নতুন চাওয়া শুরু হয়েছে,আকাশচুম্বি চাওয়া। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে গেছে যে,কোন কিছুই আমাদের তৃপ্তি দিতে পারছে না,বস্তু তৃপ্তি দিতে পারছে না,হাজব্যান্ড তৃপ্তি দিতে পারছে না, ওয়াইফ তৃপ্তি দিতে পারছে না,কোন পজিশন আমাদের তৃপ্তি দিতে পারছে না,কেন? কারন আমাদের জীবনদৃষ্টি ভ্রান্ত হয়ে গেছে।
- অবৈজ্ঞানিক জীবনাচারঃ বর্তমান সময়ে আমরা কি খাচ্ছি সেটা আমরা নিজেই জানিনা। একটা সময় ছিল যখন ফাস্টফুডের দোকান,রেস্টুরেন্ট,কফি শপ, এগুলো খুবই অল্প পরিমানে ছিল কিন্তু এখন অঢেল, গণনা করে শেষ করা যাবে না এত দোকানপাট হয়েছে।
- মানসিক চাপ / স্ট্রেস / টেনশনঃ বর্তমান সময়ে জীবনটা প্রায় স্ট্রেসময় হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে আপনারা এমন একটা মানুষ খুঁজে পাবেন না, যার স্ট্রেস নাই। সাধারণত ছোট থেকে বড় সকলেরই স্ট্রেস রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে একটি জরিপ চালোনা হয়,প্রায় ৭৬ শতাংশ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী মানসিক অবসাদের ভুগছে, বিষন্নতায় ভুগছে।
আজীবন সুস্থ থাকার উপায়
আজকের এই আর্টিকেলটিতে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা সকলের জন্যই প্রয়োজনীয়,
তিনি যে বয়সই হোন না কেন? যে প্রফেশনে থাকুন না কেন? প্রত্যেকের জন্য এই
বিষয়গুলো প্রযোজ্য। একজন মানুষকে অবশ্যই জানা উচিত ভালো থাকার জন্য কি করতে হবে?
এই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির আলোচনা। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এই
কথাটুকু আমরা কতটুকু রিয়েলাইজ করতে পেরেছি।
এই কথার মর্মার্থ এই কথার বিষয়বস্তু কতটা আমরা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে
পেরেছি সেটাই হচ্ছে আজকের এই আর্টিকেলের মূল আলোচনা। আমরা প্রায় সকলেই জানি মূসা
(আ) আল্লাহর সাথে কথা বলতেন। কি কথা বলতেন? সেটা আমাদের জানার কথা না। একজন নবী
আল্লাহর সাথে কথা বলবেন সেটা আমাদের জানার বিষয় না। কিন্তু একদিনের কথা ফাঁস
হয়ে গেছিল।
সেই দিন মূসা (আ) আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিল হে আল্লাহ আমি যদি আল্লাহ হতাম আর তুমি
যদি বান্দা হইতা, তাহলে সর্বপ্রথম তুমি আমার কাছে কি চাইতে? তখন আল্লাহ উত্তর
দিয়েছিল আমি সুস্থতা চাইতাম। আপনারা এবার একবার চিন্তা করেন, তিনি তো আরো অনেক
কিছুই চাইতে পারতেন যেমন নবুওয়াত। কিন্তু তিনি তার চাননি, তিনি সুস্থতা
চেয়েছেন। তাহলে চিন্তা করেন, সুস্থতা আল্লাহর কতো বড় একটা নিয়ামত।
আপনি বাড়ি, গাড়ি,ধন-সম্পত্তি, যস-খ্যাতি,প্রভাব-প্রতিপত্তি এভরিথিং আপনি
ইউট্রিলাইজ করতে পারবেন, যদি আপনি সুস্থ থাকেন। আর যদি সুস্থ না থাকেন, তাহলে
বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে থেকে চিন্তা করবেন যে আমার ব্যাংক ব্যালেন্সটা কে
খাচ্ছে এখন। তখন আপনার কিচ্ছু করার ক্ষমতা থাকবে না। এই বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের
পেয়েছিলেন সেই সময়ের সেলিব্রেটি ধনকূপ মি.হেনরি ফোরড।
মি.হেনরি ফোরড হাজার কোটি ডলারের মালিক ছিলেন। একদিন একটি প্রোগ্রাম শেষে তিনি
সেখান থেকে বের হয়েছেন, তখন সাংবাদিকরা তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছেন তখন
সাংবাদিকেরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে,মি.হেনরি ফোরড গত ছয় মাসে আপনার জীবনে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কোনটি? মি.হেনরি ফোরড থমকে দাঁড়ালেন এবং একটু চিন্তা
করে তারপর প্রশ্নের উত্তর দিলেন, গত ১৫ দিনে আমি একটি অর্ধ সিদ্ধ ডিমের কুসুম সহ
অর্ধেক খেয়েছি এবং হজম করতে পেরেছি।
এটাই আমার গত ছয় মাসে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে,
এটা কোন ঘটনা হলো? একসাথে অনেকগুলো ডিম খেয়ে অনেকেই হজম করে ফেলছে অনায়াসে।
কিন্তু এটাই সত্যি। তিনি কেন বলেছিল কারণ তিনি কোন কিছু খেয়ে হজম করতে পারত না।
তিনি হাজার কোটি ডলারের মালিক, ডাইনিং এর টেবিলে খাবারে ভর্তি। কিন্তু তিনি কিছুই
খেতে পারতেন না। তার একমাত্র খাবার ছিল মাতৃ দুগ্ধ। তিনি কিছু হজম করতে পারতেন
না।
এখন আমাদের কি অবস্থা? আমরা কেমন আছি? আমরা কেমন আছি এটা বোঝার জন্য আমাদের একটু
মিডিয়ার দিকে তাকাতে হবে। মিডিয়া হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যারা আমাদের কথাও তুলে
ধরে। দিন দিন আমাদের কো- মরবিডিটি বাড়ছে। কো- মরবিডিটি হচ্ছে প্রতিনিয়ত যে রোগ
গুলো আমাদের মৃত্যুর দিকে ত্বরান্বিত করে যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ,
স্ট্রোক। বাংলাদেশে এখন মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ হচ্ছে, হৃদরোগ।
এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হচ্ছে হৃদরোগ। পাঁচজন তরুণের ভিতরে একজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে।
প্রতি ১০ জনে একজন আক্রান্ত আমরা ডায়াবেটিসে। দেশের প্রতি পাঁচ জনে একজন উচ্চ
রক্তচাপে আক্রান্ত। এছাড়া করোনার কারণে,ঘরে বন্দি থাকার কারণে, দেশে এক বছরে
স্ট্রোকে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হৃদরোগ,
হার্ট অ্যাটাক, ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, ক্যান্সার এই সকল রোগকে একত্রে বলা হয়
অসংক্রামক রোগ। আশি দশকের নাম্বার ওয়ান ডিজিজ ছিল ডায়রিয়া।
আর বর্তমান সময়ে হৃদরোগ। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের মৃত্যুর হার ১৯৮৬ সালে ৮%,
তারপর ২০১৪ সালে বেড়ে ৫৯%, ২০১৭ সালে বেড়ে ৬৭%। ২০২১ সালের বাংলাদেশ স্টেপস
সার্ভের মৃত্যুর সংক্রান্ত তথ্য দেশে অসংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর হার ৭৩ শতাংশ।
আর এর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে ৩৬ শতাংশ। এই রোগ গুলোর আরেকটি
পোশাকি নাম হলো লাইফস্টাইল ডিজিজ।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন? এ রোগগুলো হওয়ার পেছনের মূল কারণই
হচ্ছে ভুল লাইফস্টাইলে জীবন-যাপন করা যেমন হাই কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশন, অবিসিটি,
হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার মূলত এই রোগগুলোকেই বলা হয় একত্রে লাইফ
স্টাইল ডিজিজ। এই রোগ গুলো বংশগত না, আপনি এখন প্রতিদিন গরু খাবেন আর যখন আপনার
এই রোগ গুলো হবে, তখন আপনি বংশের উপর চাপাবেন,তাহলে তো হবে না। মূলত এগুলোই হচ্ছে
আপনার আমার জীবনযাত্রার ভুলের কারণে।
মন এবং শরীরের মধ্যে সংযোগ কি?
ধরুন যে আপনার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যেটাতে আপনি প্রচুর কষ্ট পেয়েছেন। এটা
শুধু মনে থাকবে না, এটা মন থেকে আপনার শরীরে, আপনি নিস্তেজ হয়ে যাবেন, এমনকি
আপনি বিছানায়ও পড়ে যেতে পারেন। আবার আপনার দেহে কিছু ঘটলে এর প্রভাব আপনার মনে
পড়বে। সারাক্ষণ মন আর দেহের ভিতর যোগাযোগ চলছে। আর এজন্যই এখনকার বিজ্ঞানীরা এই
সাবজেক্ট নিয়ে প্রচুর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিস্তর গবেষণা করার পর নতুন
শাখা চালু হয়েছে।
শাখাটির নাম হলো The Science of Mind & Body. আর Dr.Herbert Benson The
Science of Mind & Body এই শাখাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৪ বছর গবেষণা করেছেন।
তিনি Harvard Medical School এর Professor of Cardiology. তিনি সহ আরো যারা
গবেষণা করছেন এই বিষয় নিয়ে তারা বলছেন, আমাদের শরীরে প্রত্যেকের ওই দুটো করে
কিডনি রয়েছে। আর কিডনির মাথার উপরে একটি গ্ল্যান্ড রয়েছে আর এই গ্ল্যান্ডকে বলা
হয় অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড বা সুপপ্রেনাল গ্ল্যান্ড।
আর এই গ্ল্যান্ড থেকে প্রতিনিয়ত অল্প পরিমাণে তিনটি হরমোন নিঃসরণ হয়। আমাদের
প্রতিদিনের জীবনের দেহের জরুরী কাজের জন্য। স্ট্রেস হরমোন তিনটি হলো Adrenaline,
Noradrenaline, Cortisol. ধরুন যে আপনাকে কোন পাগল তাড়া করছে, তখন আপনি কি
করবেন? অবশ্যই দৌড় দেবেন,তখন আপনার হার্টবিট বেড়ে যাবে, নিঃশ্বাস দ্রুত পড়বে
আর তখনই আপনার এই হরমোন তিনটি বেশি শরীরের নিঃসরণ হবে।
আবার পরবর্তী সময়ে আপনি দেখলেন সেই পাগলটি আপনাকে তাড়া করছে না আর একজনকে তারা
করার জন্য দৌড়াচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই আপনি হাত ছেড়ে বাঁচবেন, যে আপনাকে তাড়া করছে
না, মূলত তখনই আপনার হরমোনের লেভেলটা আস্তে আস্তে ব্যালেন্স হয়ে যাবে। আর যদি
আপনি সব সময় পাগলকে নিয়ে চিন্তা করেন যে আপনাকে এই হয়তো ধরতে আসলো বা ধরবে
আপনি বসে আছেন তাও আপনার হার্টবিট বেড়ে যাবে কারণ আপনার হরমোন গুলো নিঃসরণ
হচ্ছে।
আর এই হরমোন গুলো বেসিক বৃদ্ধি পেলে,হৃদস্পন্দন দ্রুত হবে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত
হবে, বিপাকক্রিয়া হার, রক্তচাপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। আর পরবর্তী সময়ে এগুলোর
প্রভাব আপনার শরীরে অবশ্যই পড়বে। বিজ্ঞানীরা আবার বলছে এই প্রভাব দেহও পড়তে
পারে আবার মনেও করতে পারে।
স্ট্রেসের মানসিক প্রভাব কি?
- মানসিক অশান্তিঃ আপনি তখন পৃথিবীকে কোনভাবেই উপভোগ করতে পারবেন না। আপনাকে কিছুই ভালো লাগবে না, আপনি মানসিক অশান্তিতে ভুগবেন। হয়তো আপনি অনেক বড়লোক হতে পারেন,আপনার অনেক বাড়ি, গাড়ি, টাকা, পয়সা রয়েছে, কিন্তু আপনার চেহারা দেখেই বোঝা যাবে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে অন্যতম অসুখী মানুষ।
- খিটখিটে মেজাজঃ আপনি যখন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতেন, তখন কত আনন্দ করতেন, রোমান্টিক ছিলেন। সারাক্ষণ হাসা হাসি, খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি, আড্ডা ইত্যাদি কিন্তু এখন আপনি খিটখিটে হয়ে গেছেন, আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। আপনাকে দেখলেই বাসার লোকজন ভয় পাই। আপনাকে মানুষ দেখলেই বুঝে ফেলে আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে,তখন আপনাকে এড়িয়ে চলে।
- দুর্ব্যবহারঃ যার তার সাথে আপনি দুর্ব্যবহার প্রায় করে ফেলেন। পরবর্তী সময় আবার আপনি নিজেই কষ্ট পান, কিন্তু দুর্ব্যবহার করার সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এর মূল কারণ এই হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত স্ট্রেস।
- সম্পর্কের অবনতিঃ হাজব্যান্ড ওয়াইফ হলে দূরত্ব দিন দিন বাড়তে থাকবে। আর অফিসের বস হলেও দূরত্ব বাড়তে থাকবে। এভাবে নানান মানুষের সাথে আপনার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এভাবে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকবে। আপনি বুঝবেন না যে, আপনি আপনার আপনজনদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আপনার দক্ষতা দিন দিন কমতে থাকবে।
- সিদ্ধান্তহীনতাঃ আপনি নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে আপনি ভয় পাবেন। আর নিলেও ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন।
- আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ আর আপনি যদি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন তাহলে দেখবেন এক সময় আপনি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন।
- সমস্যকে সংকটে রূপান্তরঃ আপনি যখন নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আর যদি সিদ্ধান্ত নেন সেটা যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেন তাহলে একসময় আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যাকে সংকটে রূপান্তর করে ফেলবেন।
স্ট্রেসের শারীরিক প্রভাব কি?
- বিষন্নতাঃ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় মহামারী হচ্ছে ডিপ্রেশন। ছোট থেকে শুরু করে বড়দের সকলেরই ডিপ্রেশন হয়। যারা ডিপ্রেশনে থাকবে তাদের কিছু করতে ভালো লাগবে না। কিছুই ভালো লাগবে না।
- অবসাদঃ যেসব মানুষ অবসাদে ভোগে তাদের কিছু করতেই ভালো লাগে না সব সময় শুয়ে থাকতে ভালো লাগে। যারা ওর সাথে ভোগে তারা সাধারনত টিভি দেখে, ফোনটিপে আর ঘুমায়।
- অনিদ্রাঃ স্ট্রেসের কারণে একসময় আপনি অনিদ্রায় ভুগবেন। চোখে কোনোভাবেই ঘুম আসবে না। মনে হবে যে সব সময় জেগে থাকি।
- মাইগ্রেনঃ অল্পতেই কোনরকম কারণ ছাড়াই মাথা ব্যথা করবে। আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না কেন আপনার মাথা ব্যথা করছে হঠাৎ হঠাৎ মাথা ব্যথা হবে আর এটাই হলো মাইগ্রেন।
- আইবিএসঃ পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেবে।
- পেপটিক আলসারঃ দিনের পর দিন আপনি ডাক্তারের কাছে ওষুধ খাচ্ছেন কিন্তু আপনার আলসার ভালো হচ্ছেনা। মনের ভিতরে আপনাকে সারাক্ষণ একজন তাড়া করছে তাহলে আপনি কখনোই ঔষধ খেয়ে পেপটিক আলসার ভালো করতে পারবেন না।
মনোদৈহিক সমস্য/রোগ গুলো কি কি?
- ঘাড়ে ব্যথা।
- পিঠে ব্যথা।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- হৃদরোগ।
- স্ট্রোক।
- ডায়াবেটিস।
মনোদৈহিক সমস্য/রোগ কেন হয়?
মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটা জীবের ভিতর একটা অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সৃষ্টি করে
দিয়েছেন, যেন ওইটা ঠিক থাকলে সে সুস্থ থাকবে। মেডিকেল টার্মে একে বলা হয়
Homeostasis Static Internal Environment প্রত্যেকটা প্রাণী জানে কিভাবে
Homeostasis Static Internal Environment ঠিক রাখতে হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু
মানুষ। কারণ কোন প্রাণী তার জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো লংঘন করে না,
ব্যতিক্রম মানুষ।
এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো মানুষ অনেক পছন্দ করে সুস্বাদু মনে করে কিন্তু
সেগুলো আসলে খাবারই না স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক। কিন্তু তারপরেও মানুষ সেগুলো
খায়। একটা সময় ভুল লাইফ স্টাইলের কারণে Homeostasis ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, তখন
মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। নিজের ভুলে নিজে অসুস্থ হয়ে তখন দোষ দেয় আল্লাহকে, দোষ
তাই ভাগ্যকে। এখানে মূলত দোষ কারোরই নাই দোষ হচ্ছে আমাদের ওই আমাদের ভুল
লাইফ-স্টাইলের।
আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার মেডিসিনের প্রফেসর Dr.Dean Ornish, হার্ভাট মেডিকেলের
কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর Dr.Herbert Benson,কর্নেল ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট
প্রফেসর Dr. T. Colin Campbell, উহায় অঙ্গরাজের ক্লিবল্যান্ড ক্লিনিকের সার্জেন্ট
Dr. Caldwell Esselstyn,জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের প্রফেসর
Dr.Neal Barnard সহ আরো অনেকে রয়েছে। তারা দিনের পর দিন কয়েক দশক ধরে লাইফ
স্টাইল ডিজিজ গুলো নিয়ে গবেষণা করছেন এবং তাদের প্রত্যেকের বই রয়েছে। বইগুলো
অনলাইনে এভেলেবল। আপনারা সেগুলো সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।
সুস্থ কর্মময় দীর্ঘ জীবনের জন্য করণীয় কী?
- মানসিক প্রশান্তিঃ সাধারণত প্রশান্তি হচ্ছে জীবনের একক। জীবনের কাছে সবচেয়ে একটি বড় চাওয়া হচ্ছে প্রশান্তি। যেমন এক না থাকলে সামনের কোন মূল্য থাকেনা, ঠিক তেমনি প্রশান্তি না থাকলে জীবনের কোন মূল্য থাকে না। আপনার জীবনে যদি প্রশান্তি থাকে, তাহলে আপনি সবকিছু উপভোগ করতে পারবেন। আপনি বাড়ি, গাড়ি, ধন-সম্পদ, যস, প্রতিপত্তি, খ্যাতি, কানেকশন,সবকিছুই আপনি উপভোগ করতে পারবেন যদি আপনার জীবনে প্রশান্তি থাকে। সাধারণত একজন মানুষকে সুখী করে ভেতরের প্রশান্তি। এই প্রশান্তি যদি আমরা সত্যিকার ভাবে পেতে চাই তাহলে আমাদের জীবনে দুইটি জিনিস প্রয়োগ করতে হবে। কারণ একজন মানুষকে সুস্থতা অর্জন করতে হয়,পশুপাখিকে অর্জন করতে হয় না কারণ তারা বেলাইনে চলে না। পশুপাখির জীবনে কোন রকম বিশৃঙ্খলা ঘটেনা। সত্যিকার অর্থে যদি আমরা প্রশান্তি অর্জন করতে চাই তাহলে আমাদের দুটি জিনিস অর্জন করতে হবে। সেগুলো হলো।
- ইতিবাচক জীবন দৃষ্টিঃ চলুন একটা উদাহরণ দেওয়া যাক,গরমের সময় আপনার অনেক তৃষ্ণা লেগেছে, এত তৃষ্ণা লেগেছে যে আপনার গলা ফেটে যাচ্ছে পানির জন্য,তখন আশেপাশে আপনি একটি দোকান দেখতে পেয়েছেন, সেই দোকানীর কাছে পানি চেয়েছেন, দোকানী আপনাকে এক গ্লাস পানি না দিয়ে হাপ গ্লাসের কম পানি দিয়েছে। সেই পানিটুকু খাওয়ার পর দোকানী সম্বন্ধে আপনার যে ধারণা হবে আপনার চিন্তাধারা সেরকম। তখন আপনার মনে হতে পারে আমি এত তৃষ্ণার্ত আমাকে তো এক গ্লাস পানি দিতে পারতো, কম পানি দিলে কেন? আরো বেশি পানি দিতে পারতো এখানে এটাই বোঝা যাবে আপনি নেগেটিভ। আবার মনে এটাও প্রশ্ন হতে পারে আমি এত তৃষ্ণার্ত ছিলাম আমাকে পানি দিয়েছে এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট, আপনি যদি আরো তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আবার পানি চেয়ে নিতে পারেন,এখানে এটাই বোঝা যাবে যে আপনি পজেটিভ এবং পরবর্তী সময়ে দোকানিকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। আর আপনি যদি আপনার জীবনটাকে পজিটিভলি চিন্তাভাবনা করেন তাহলে আপনি অনেক দূরে এগিয়ে যাবেন।
- মেডিটেশনঃ প্রশান্তির উৎস হচ্ছে মন। আপনি যদি মন অন্তঃকরণ হৃদয়ে যদি ডুব দিতে না পারেন,যতক্ষণ পর্যন্ত ডুব দিতে না পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কখনোই প্রশান্তির দেখা পাবেন না। এই অন্তঃকরণে মনে ডুব দেওয়ার একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত মাধ্যম হচ্ছে মেড়িটেশন। লাইফস্টাইল এক্সপার্টরা বলছেন,আমাদের অস্তিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আত্মা। তাই যতক্ষণ আপনি আপনার আত্মার সাথে মিলিত হতে না পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সত্তিকারের প্রশান্তির দেখা পাবেন না। দেহের জন্য আমরা কি না সকালবেলা মর্নিং ওয়াক করি,সকালের খাবার খাই, দুপুরের খাবার খাই, রাতের খাবার খায়,পানি খাই,কত কি করি। সব কিন্তু আমরা আমাদের দেহের জন্যই করি। ঠিক তেমনি মনের খাবার হচ্ছে মেডিটেশন। কিছু বছর আগে সমাজবিজ্ঞানীরা খুঁজতে বেরোলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কে? খুঁজতে শুরু করলেন। খুঁজতে, খুঁজতে একজনকে খুঁজে বের করলেন এবং বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন, হ্যাঁ তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ Mr. Matthieu Ricard,এমনি এমনি তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে উপাধি দেন নাই। তাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তারপর পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ উপাধি দিয়েছে। তার মাথায় ২৬০ টি ইলেকট্রোল্ড বসিয়ে তাকে এমআরআই মেশিনের মধ্যে নিয়ে তার স্ক্যান করা হয় এবং এসব কিছু করার পর বিজ্ঞানীরা বিস্মিত হয়ে দেখলেন,যে অদ্ভুত ব্যাপার এই Mr. Matthieu Ricard এর মাথাটাই আলাদা আর ১০ জন মানুষের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। ব্রেনের অনেক অংশ রয়েছে তার ভিতরে চারটি অংশ মোটা হয়ে গেছে ফুলে গেছে সেগুলো হলো Anterior Cingulate Cortex, Dorsolateral Prefrontal Cortex, Amygdala, Hippocampus,বিজ্ঞানীরা দেখবেন ব্রেনের এই চারটি অংশ মোটা হয়ে গেছে ভলিউম বেড়ে গেছে, থিকনেস বেড়ে গেছে, ফুলে গেছে। মূলত এই চারটা অংশ আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে,লার্নিং এ কাজ করে,এক্টিভিটি তে কাজ করে,ইন্ট্রোডাকশন এ সাহায্য করে, এক্সুকুটি ফাংশানে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলছেন, আমাদের ব্রেনে প্রতিনিয়ত নানা রকম কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার নির্গত হয়। প্রায় ৬০ ধরনের কেমিক্যাল নির্গত হয়, তার ভিতরে চার ধরনের কেমিক্যালকে হ্যাপি কেমিক্যাল বলা হয়। সেগুলো হলো Dopamine, Serotonin, Endorphin, Oxytocin,মূলত এই চারটি কেমিক্যাল কে হ্যাপি কেমিক্যাল বলা হয়। এই চারটি কেমিক্যাল যদি আপনার রেক্ত মাত্রা ঠিক থাকে, তাহলে আপনি সবসময় সুখী অনুভব করবেন। কারণ এই চারটা হরমোন আপনাকে হ্যাপিনেসের অনুভূতি এনে দেবে। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে Mr. Matthieu Ricard কেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ নির্বাচিত হলেন? কারণ তিনি সেই সময় ৩৫ বছর ধরে মেডিটেশন করতেন।
পৃথিবীতে এখন কোন জিনিসের অভাব সবচেয়ে বেশি?
পৃথিবীতে এখন যে জিনিসের অভাব সবচেয়ে বেশি সেটা হচ্ছে সুখ। সুখ নামের সোনার
হরিণটা যেন দিন দিন আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সুখ যে শুধু আমাদের
বাংলাদেশীদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তা ঠিক নয়, বিশ্বের সকল মানুষের থেকে সুখ
দূরে সরে যাচ্ছে।
জীবনে সুখী হতে হলে কোন কোন বিষয়ে লক্ষ্য দিতে হবে?
- কৃতজ্ঞচিত্ততাঃ আপনি যদি জীবনের সুখী হতে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমে কৃতজ্ঞ হতে হবে। (১)মানুষের প্রতি (২) আপনার সৃষ্টিকর্তার প্রতি। সকল কিছুর প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ততা হতে হবে, তাহলে আপনি একজন সুখী মানুষ হতে পারবেন। প্রত্যেকদিন আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং আপনি যে অবস্থানে রয়েছেন, সে অবস্থানে যার যার জন্য আসতে পেরেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে।
- মেডিটেশনঃ প্রতিদিন নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করতে হবে। মেডিটেশন একজন মানুষকে আর্তনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে পাশাপাশি কৃতজ্ঞচিত্ততা হতে সাহায্য করে।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্জনঃ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া আপনি যত বর্জন করবেন, আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনার মধ্যে ততো বেশি হ্যাপিনেস সৃষ্টি হবে। মেডিটেশন হোক আপনার জীবনের অনুষঙ্গ। তাহলে আপনি সুস্থতার দিকে এগিয়ে যাবেন, সুখী হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন,পূর্ণাঙ্গ একটি লোকের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।
- আত্মীয়-বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্কঃ যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক, তাদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। ছুটির দিনে বসে বসে সিনেমা না দেখে,সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নয় বরং আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব সকলের সাথে আড্ডা দিবেন। তখন আপনি দেখবেন আপনার ভিতরে একটা অন্যরকম হ্যাপিনেস কাজ করছে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমঃ বর্তমান সময়ে ঘুমের প্রতি মানুষের অনেক অনীহা। কিন্তু ঘুম আমাদের জীবনে সবচেয়ে একটি বড় অংশ। ভালো ঘুম না হলে, শরীর সুস্থ থাকবে না, তাই জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিদিন ঘুমাতে হবে। অনেকেই আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে করতে, কখন যে রাত পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারে না, তখন আর ঘুমানো হয় না। রাত এগারোটার পর কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
আমাদের সুস্থ থাকার জন্য যা করতে হবে
- সকালবেলা প্রতিদিন নিয়মিত জগিং করতে হবে।
- সকালবেলা প্রতিদিন নিয়মিত ইয়োগা করতে হবে।
- নিয়মিত সাঁতার কাটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
- প্রতিদিন নিয়মিত জোরে জোরে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
কয়টি জিনিস দিয়ে দেহ সুগঠিত হয়?
সাধারণত তিনটি জিনিস দিয়ে দেহ সুগঠিত হয়। সেগুলোর নিচে দেওয়া হলো
- (১) খাবার
- (২) পানি
- (৩) বাতাস
স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস
অতীতের খাদ্যাভ্যাসের ফল আজ থেকে দশ বছর পর আপনি কেমন থাকবেন সেটি নির্ভর করে
আপনার খাদ্যাভ্যাসের উপর। ধরুন যে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন ৭০কেজি হওয়া
উচিত, কিন্তু আপনার ওজন ৯৫ কেজি। এটা মূলত আপনার ভুল খাদ্যাভ্যাসের ফল। আজ থেকে
দশ বছর পর আপনার ওজন কেমন হবে, আপনি কেমন থাকবেন, সেটা নির্ভর করছে আপনার এখন
থেকে দশ বছর খাদ্যাভ্যাসের উপরে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই জানা উচিত, সঠিক
খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে।
এখনকার সময়ের লাইফস্টাইল এক্সপার্টেরা বলছেন,আমরা যদি প্রকৃতির দিকে তাকায়,
তাহলে আমরা কি দেখব প্রকৃতিতে যত স্থলচর, জলচর, উভচর, বায়ুচর প্রাণী রয়েছে
প্রত্যেকটা প্রাণীর খাবারের নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। তারা কখনো তাদের সীমারেখা
লংঘন করে না। গরু ৩৬৫ দিন ঘাস, খড়, ভুসি ইত্যাদি খায়। এখন গরুকে যদি মাংস
রান্না করে দেন, তাহলে কি খাবে? খাবে না।
আবার বাঘ হলো মাংসাশী প্রাণী, বাঘ সাধারণত কাঁচা মাংস খায়। এখন বাঘকে যদি
শাক-সবজি, লতাপাতা খেতে দেন, তাহলে কি খাবে? খাবে না। যতই টেস্টি খাবার দেন না
কেন তাদের সামনে, তাদের যে নির্দিষ্ট খাবার গুলো রয়েছে সেগুলো ছাড়া তারা খাবে
না। তারা কোন অবস্থাতেই তাদের নিজ নিজ খাবারের সীমারেখা লংঘন করবে না। ব্যতিক্রম
শুধু আমরা মানুষেরা। কারণ মানুষকে দেওয়া হয়েছে অবাধ স্বাধীনতা এবং এই
স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় অপব্যবহারকারী হচ্ছে মানুষ নিজেই।
তাই জন্য প্রত্যেকটা মানুষেরই জানা উচিত তার নিজের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সে কি
খাবে, কতটুকু খাবে, কখন খাবে, কি খাবেনা, কেন খাবে না, প্রত্যেকটা মানুষেরই এই
সকল বিষয় সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে,মানুষ হচ্ছে মূলত
তৃণভোজী এবং কিছুটা মাংসাশী। মূলত তারা দুটি প্রমাণ দিয়ে বলছেন মানুষ তৃণভোজী
এবং কিছুটা মাংসাশী। এর সাপেক্ষে তারা মূলত দুটি প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
(১) পরিপাকতন্ত্রের গঠন (২) দাঁতের গঠন। সাধারণত হরিণ একটি তৃণভোজী প্রাণী তার
পরিপাকতন্ত্রের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮ ফুট। কারণ হরিণ অনেক লতা পাতা তৃণভোজী উদ্ভিদ
খেয়ে থাকে এবং লতাপাতা আঁশযুক্ত খাবার হজম করার জন্য তার লম্বা পরিপাকতন্ত্র
প্রয়োজন। অন্যদিকে বাঘ হলো মাংসাশী প্রাণী। সাধারণত বাঘের পরিপাকতন্ত্রের
দৈর্ঘ্য ৩-৭ ফুট,মূলত মাংশে কোনরকম ফাইবার বা আঁশ থাকেনা, সেজন্য তার হজম করার
জন্য ছোট পরিপাকতন্ত্রের প্রয়োজন।
কারো ক্ষেত্রে তিন ফুট, কারো ক্ষেত্রে ৫ ফুট, আবার কারো ক্ষেত্রে সাত ফুট। আর
মানুষের পরিপাকতন্ত্রের দৈর্ঘ্য গড়ে ৩০ ফুট। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারছি,যে
আমাদের পরিপাকতন্ত্রের দৈর্ঘ্য হরিণের পরিপাকতন্ত্রের মতো লম্বা, মানে তৃণভোজী
প্রাণীদের মতো। কিন্তু খাচ্ছি আমরা বাঘের মতো। আমাদের এই মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ
গুলো হওয়ার মূল কারণ আমাদের ভুল খাদ্যাভ্যাস।
আমাদের খাদ্যাভ্যাস হলো হরিণের মতো আর আমরা খাচ্ছি বাঘের মতো। সাধারণত আমাদের
প্রত্যেকেরই ওপরে দুইটা এবং নিচে দুইটা মোট চারটি দাঁত মাংসাশী প্রাণীর মতো। আর
বাকি ২৮ টা দাঁত হচ্ছে তৃণভোজি প্রাণীর মতো। আমরা যদি তাহলে গড়ে হিসাব করতে যাই,
তাহলে সাত দিন যদি আপনি শাক-সবজি লতাপাতা খেতে পান, তাহলে একদিন মাছ মাংস খেতে
পাবেন। কিন্তু আমরা করি কি সাত দিন মাছ মাংস,ডিম, দুধ খায়, আর একদিন লতা
পাতা।
আর আমাদের এই ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এর মূল
কারণ এই ভুল খাদ্যাভ্যাস। সারা বিশ্বে পাঁচটি অঞ্চল রয়েছে যেখানকার মানুষ গড়ে
১০০ বছর সুস্থ ভাবে বাঁচে। মরার আগ পর্যন্ত সুস্থ জীবন যাপন করে। আর তাদের সুস্থ
থাকার মূলমন্ত্রই হচ্ছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস। সে দেশগুলো হলো (১) ওকিনাওয়া দ্বীপ
(জাপান) (২) ইকারিয়া দ্বীপ (গ্রীস) (৩) সার্ডিনিয়া দ্বীপ ( ইতালি) (৪) নিকয়া
পেনিনসুলা (কোস্টারিকা) (৫) লোমা লিন্ডা (ক্যালিফোর্নিয়া)।
পাকিস্তানে একটা হিমালয়ের পাদদেশে একটি ছোট্ট অঞ্চল রয়েছে ভ্যালি, সেই ভ্যালির
নাম হচ্ছে হুনজা ভ্যালি তাদের গড় আয়ু ১০০ বছর, কেউ কেউ আবার ১২০ বছরেরও বাঁচে।
আর তাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মূল কারণ হচ্ছে তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস। তাদের
মূল খাবার, তারা লাল চালের ভাত খায়, লাল আটার রুটি খাই, প্রচুর তাজা ফলমূল
খাই,শাকসবজি খাই,বরফ গলা পানিতে গোসল করে, বরফ গলা পানি খাই, আর সাথে কঠোর
পরিশ্রম করে। তাদের মূল ফল হচ্ছে এপ্রিকট।
এই ফলে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন বি১৭। যা অন্য কোন ফলে পাওয়া যায় না। উপরোক্ত
ঘটনা থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারলাম যে সুস্থ কর্মময় দীর্ঘ জীবন পেতে হলে, খাবারে
শৃঙ্খলা আনতে হবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খাবারের শৃঙ্খলা হলো
প্রতিদিন ৯০% উদ্ভিজ্জ খাবার হতে হবে এবং ১০% প্রাণিজ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সাপ্তাহিক রুটিন খাদ্য তালিকায় মাছ মাংসের পরিমাণ সীমিত রাখুন।
সপ্তাহে দুই দিন ছোট মাছ, দুই দিন বড় মাছ, একদিন মাংস। আর বাকি দুইদিন উদ্ভিজ্জ
আমিষ খান। আর রাতে মাছ-মাংস খাবেন না, রাতে মাছ মাংস বর্জন করুন। আর প্রতিদিন
নিয়মিত একটি করে ডিম খাবেন। আর যদি একের অধিক ডিম খেতে চান, তাহলে কুসুম বাদ
দিয়ে খাবেন। Hippocrates কে মর্ডান মেডিকেল সায়েন্সের ফাদার বলা হয়। প্রায়
আড়াই হাজার বছর আগে Hippocrates বলে গেছেন,তোমার খাদ্য তালিকা এমনভাবে হতে হবে,
যেন সেটি মেডিসিন হিসেবে কাজ করে।
খাবার খেলে তুমি সুস্থ থাকবে,ঔষধ হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও Dr. Don Colbert
বলেছেন, Let food be your medicine.খাবার তৈরি করা, প্রস্তুতি করা, পরিবেশনার উপর
নির্ভর করে। আপনার শরীরে খাবার দুইভাবে কাজ করতে পারে, এটা আপনার শরীরের জন্য ঔষধ
হতে পারে, আবার রোগের কারণ হতে পারে। বর্তমান সময়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ
রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এই রোগ গুলোর পেছনের অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে ভুল
খাবার।
ল্যানসেট সাময়িকির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১০০কোটি মানুষ এখন ক্ষুধার্ত
এবং ২০০ কোটি মানুষ ভুল খাবার অতিরিক্ত খাচ্ছে। ফলাফল মহামারীর মতো স্থুলতা,
হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস। বাংলাদেশের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, অতিরিক্ত
খেয়ে স্বাস্থ্য সমস্যায় ৭০% মানুষ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক,
হার্ট অ্যাটাক এগুলোকে বলা হতো বড়লোকেদের রোগ।
কিন্তু এখন বর্তমান সময়ে এই রোগগুলো বড়লোক গরিব বলে না, সকলকেই হচ্ছে আর এর মূল
অন্যতম প্রধান কারণ ভুল খাদ্যাভ্যাস। ব্রিটিশ গবেষণা দল গবেষণা করে দেখেছেন,
ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে বস্তিবাসী এ প্রধান মূল অন্যতম কারণ
হচ্ছে,গবেষণা বলছে অতিরিক্ত চিনি, লবণ, ফাস্টফুড খাওয়া বস্তিবাসীর উচ্চ রক্তচাপ
ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান কারণ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুস্থ প্রাণবন্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন কার্বোহাইড্রেট,
প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল,ফাইটোকেমিক্যাল, পানি, হরমোন, এনজাইম,
অক্সিজেন, বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি, লাইফ ফোর্স বা প্রাণশক্তি। হরমোন নিজে
নিজেই শরীরে তৈরি হয়। তাছাড়া বাকিগুলো আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নাহলে আপনি
অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
খাদ্য প্রধানত কত প্রকার?
- জীবন্ত খাবারঃ প্রকৃতিতে যে খাবার যে অবস্থায় উৎপন্ন হয়, সেই খাবার যখন আপনি সরাসরি সংগ্রহ করেভালোভাবে পরিষ্কার করে ভিজিয়ে রেখে অথবা এমনি খেয়ে ফেললেন, সেটি হচ্ছে জীবন্ত খাবার। কোনরকম তাপ দেওয়া ছাড়া যেমন ফল,বাদাম,বীজ, চিয়াসিড,তিসি,বিভিন্ন ধরনের পাতা যেগুলো কাঁচা খাওয়া যায় যেমন লেটুস পাতা,ধনেপাতা, পুদিনা পাতা,সালাদ। সাধারণত যে সবজিগুলো কাঁচা খাওয়া যায় সেগুলোকেই সালাদ বলে যেমন শসা, গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম, ইত্যাদি।
- অর্ধ-মৃত খাবারঃ ৪৮°, ৫০°,৬০° কিছুক্ষণ হালকা রান্না করে নামিয়ে রাখলেন তখন সেই খাবারটা অর্ধ-মৃত খাবারে পরিণত হবে। কারন আপনি হিট দিয়েছেন কোন রকমে হালকা হিট দিয়ে মসলা দিয়ে তাড়াতাড়ি নামিয়ে নিয়েছেন।
- মৃত খাবারঃ অতিরিক্ত তাপে যে খাবার রান্না করবেন সেটা সম্পূর্ণ মৃত খাবার হয়ে যায়। খাবারে যত বেশি তাপ দেবেন খাবারের গুণগত মান তত নষ্ট হবে। মৃত খাবারগুলো হলো যেমন গরুর কালা ভুনা। মৃত খাবারে কোনরকম এনজাইম, ফইটোকেমিক্যাল, বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল এনার্জি, প্রাণশক্তি, এগুলো কোন কিছু পাওয়া যায় না মৃত খাবারের। শুধু ভরপুর থাকে প্রোটিন, ফ্যাট প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। বেশি বেশি খাবেন আর মোটা হবেন না।
প্রতিদিন নিয়মিত অন্ততপক্ষে ৭০% জীবন্ত খাবার খেতে হবে। প্যাকেট জাত সকল প্রকার
খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক। যা আমাদের দেহের কোন উপকারে তো আছে না
বরং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিষ।
মানবদেহে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসিড-ক্ষার ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত
শরীরের ক্ষারীয় অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে সঠিক খাবার। খাবার কে আমরা দুই
ভাগে ভাগ করতে পারি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
Alkaline-forming Foods: সকল প্রকার শাক-সবজি, বিভিন্ন ধরনের তাজা
ফলমূল,পালং শাক, ব্রকোলি,সালাদ, ডাল, মটরশুটি, বিন, বীজ, বাদাম, ওটস, আদা, রসুন,
পেঁয়াজ, মসলা, টক দই ইত্যাদি। এই খাবারগুলো যদি আপনি বেশিরভাগ খান, তাহলে আপনার
তাহলে আপনার শরীরের পিএইচ এর মাত্রা হবে অ্যালকালাইন,আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম
সঠিকভাবে কাজ করবে।
Acid-forming Foods: মাছ, মাংস, দুধ, ডিম,পনি, চিনি, কফি, লেবু, লবণ,
বার্গার, নুডলস, চকলেট, স্যান্ডউইচ, সাদা পান্তা, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত সকল
প্রকার খাবার, ভাত, রুটি ইত্যাদি। খেয়াল করে দেখবেন, ম্যাক্সিমাম বাচ্চা অসুস্থ
হয়ে যাচ্ছে কারণ তাদের পছন্দের খাবার এসিড ফরমিং ফুডস। এগুলো খাওয়ার ফলে শরীর
সবসময় অ্যাসিড হয়ে থাকছে। যা বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়।
সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন ৯০% এর বেশি উদ্ভিজ্জ খাবার এবং ১০% এর কম
প্রাণীজ খাবার গ্রহণ করুন। তিনটি খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিষ। আর এগুলো
এভোয়েড করতে হবে খাবারগুলো হলো চিনি, সাদা চাল, সাদা আটা। পূর্ণ শস্যদানা তে
বিদ্যমান থাকে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি, আয়রন, কপার, জিংক,ম্যাগনেসিয়াম এবং
ফাইড্রোকেমিক্যাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
চিনির বদলে খেজুরের গুড় খেতে হবে, লাল চালের ভাত খাবেন, লাল আটার রুটি খাবেন।
একটা প্লেট নিবেন প্লেটে এক কাপ ভাত নিবেন, সমপরিমাণ সবজি নিবেন দুই তিন রকম,
ভর্তা, ডাল, এক পিস মাছ, সালাদ যথেষ্ট। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে হেলদি মানুষের পরিণত
হবেন। তরল বিষ হচ্ছে তেল। তাই জন্য খাবারে কম তেল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যত কম
তেল খাওয়ার চেষ্টা করবেন, ততো আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে মগজ। বিজ্ঞানীরা বলছে এই মগজকে
নিয়ন্ত্রণ করে পেট। শরীরের যত ইমিউন সিস্টেম রয়েছে তার ভিতরে ৭০% পেটে অবস্থান
করে। যখন আপনার পেটে মল আটকে থাকবে, তখন পরিপাকতন্ত্র অসুস্থ হবে এবং ইমিউন
সিস্টেম দুর্বল হবে। সব সময় অস্বস্তি বোধ অনুভূত হবে,বিরক্ত লাগবে,এর ফলে কোলন
ক্যান্সারও হতে পারে।
যখন আপনার ইমিউন সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেবে, তখন আপনার শরীরে
নানারকম অসুখ বাসা বাঁধবে,পাইলসের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জন্য প্রতিদিন
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত জীবন্ত খাবার খেতে হবে। তাই লাল চালের ভাত
খাবেন, লাল আটার রুটি খাবেন,প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের ফলমূল খাবেন,চেষ্টা করবেন
মিষ্টি ফল কম খাওয়ার, টক জাতীয় ফল বেশি খাওয়ার, কম মিষ্টি ফল বেশি খাবেন, একেক
সময় একেক রকম ফল খাবেন,তরমুজ কম খাবেন কারণ তরমুজ ব্লাড সুগার বাড়ায়, প্রতিদিন
ভাত খাওয়ার আগে সালাদ খাবেন,সবজি অর্ধ সেদ্ধ করে খাবেন।
ডার্ক গ্রীন লিফি ভেজিটেবল খাবেন, এটি পৃথিবীর ২ নাম্বার সেরা খাবার যেমন লেটুস
পাতা, পুদিনা পাতা, থানকুনি পাতা, আমলকি, আদা, জিরা, তুলসী পাতা,
পালংপাতা,ধনেপাতা জুস করে খেতে পারেন। যখন যেটা পাবেন, তখন সেটা খাবেন। ভালোভাবে
ধুয়ে পরিষ্কার করে জুস করে খাবেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য পৃথিবীর সবচাইতে সেরা
জুস। প্রতিদিন নিয়মিত বিট রুটের জুস খাবেন। যাদের কিডনিতে পাথর আছে বা কিডনিতে
সমস্যা রয়েছে, তারা বাদে সবাই বেডরুটের জুস খেতে পারবেন।
পৃথিবীতে এখন এক নাম্বার সেরা খাবার হচ্ছে বাদাম বিশেষ করে কাঠবাদাম এবং আখরোট।
রাতে বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন চিনা বাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম,
আখরোট, এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন মিষ্টি কুমড়া বীজ, সূর্যমুখী বীজ,চিয়া সিড,
তিসি, তিল, তরমুজের বীজ সবগুলো একটু একটু করে নিয়ে রাতে ভিজিয়ে রাখবেন সকালে
উঠে কয়েকটা খেজুর দিয়ে খেয়ে নিবেন।
সকালবেলা আপনার পৃথিবীর সবচাইতে সেরা খাবারটা খাওয়া হলো। যাদের পেটের সমস্যা
রয়েছে তারা বেলের শরবত খেতে পারেন, এটা পেট ক্লিয়ার এর জন্য খুবই উপকারী,
সপ্তাহে দুই তিন দিন অথবা প্রতিদিন এক গ্লাস করে খেতে পারেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২
লিটার পানি পান করতে হবে। সকালবেলা খালি পেটে কয়েক গ্লাস হালকা কুসুম পানি
খাবেন, এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, পানিতে একটু লেবু মিশাতে পারেন।
মানবদেহে কোষের সংখ্যা ৭০ ট্রিলিয়ন এবং অণুজীবের সংখ্যা ১০০ ট্রিলিয়ন। আমাদের
শরীরে দুই ধরনের জীবাণু থাকে উপকারী জীবাণ, ক্ষতিকর জীবাণু। উপকারী অণুজীব কে
প্রোবায়োটিকস বলা হয়। শরীরে যখন ক্ষতিকর জীবাণু বেশি থাকে এবং উপকারী জীবাণু কম
থাকে, তখন আমাদের শরীর অসুস্থ হয়। আর যখন উপকারী জীবাণু বেশি থাকে এবং ক্ষতিকর
জীবাণু কম থাকে, তখন আমাদের শরীর সুস্থ থাকে।
তাই জন্য আমাদের উপকারী জীবাণুর জন্য প্রতিদিন প্রোবায়োটিক ফুট খেতে হবে যেমন টক
দই। প্রতিদিন নিয়মিত এক কাপ করে টক দই খেতে পারেন, এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী, এটা স্বাস্থ্যের জন্য মহা ঔষধ। টক দই এ কোটি কোটি উপকারী জীবাণু বিদ্যমান
রয়েছে। প্রিবায়োটিকস মানে আঁশসমৃদ্ধ খাবার হলো আপেল, কলা, টমেটো, ওটস, বার্লি,
রসুন, পেঁয়াজ, সয়াবিন, গম, সামুদ্রিক শৈবাল, তিসি, বীজ ও বিন, মটরশুটি, সবুজ
শাক-সবজি।
আপনি যখন প্রিবায়োটিকস খাবার খাবেন এবং সাথে টক দই খাবেন, তাহলে আপনার শরীরের
অনুজীবের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। কোমরের আদর্শ মাপ আপনার উচ্চতার অর্ধেক বা অর্ধেকের
চেয়ে কম। কোমরের মাপ ঠিক রাখুন। সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দুই থেকে তিন দিন শরীরে
সূর্যের আলো মাখুন ১৫-২০ মিনিট হালকা রোদে। সুস্থতার নতুন নিয়ামক ফাস্টিং। তাই
জন্য সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দুই দিন সিয়াম রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
সারাদিনের খাবার কখন ও কিভাবে খাবেন?
- সকালবেলাঃ সকালবেলার তুলনামূলক বেশি পরিমাণে নাস্তা করুন।
- দুপুরবেলাঃ সকাল বেলার থেকে কম, পরিমিত পরিমাণে দুপুরের খাবার খান।
- রাতের বেলাঃ রাতের বেলা খুব হালকা পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ফেলুন।
লেখকের ইতি কথাঃ আজীবন সুস্থ থাকার উপায়
সম্মানিত পাঠক, আশা করি উপরোক্ত আলোচনা গুলো থেকে আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এ
বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। বর্তমান সময়ে মানুষ
অল্পতেই বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে এছাড়াও বিভিন্ন কারণে মানুষ
নীরোগ বা সুস্থ থাকতে পারে না। তাই এই ধরনের মারাত্মক সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি
লাভ করে একটি সুখকর জীবন যাপনের জন্য আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এ বিষয় সম্পর্কে
পড়ে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।
উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে তাহলে আপনি একটি সুখী ও সুন্দর
সাজানো গোছানো নীরোগ জীবন যাপন করতে পারবেন। তাই আপনি যদি ক্ষণিকের এই জীবনে
সুন্দর এই পৃথিবীতে আপনার জীবনকে ভালোভাবে উপভোগ করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই
আপনাকে আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
তাহলে আপনি খুব দ্রুতই একটি নীরোগ জীবন যাপন করতে পারবেন।
সম্মানিত পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে
পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের তথ্যবহুল
কার্যকরী ও উপকারী আর্টিকেল নিয়মিত পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরও
তথ্যবহুল ও উপকারী সব আর্টিকেল পড়তে চান, তাহলে অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটটি
নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়,
বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের কাছে তাদের উপকারার্থে শেয়ার করে দিন।
যেন তারা আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এ বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি ভালোভাবে জেনে নিতে
পারে। আজীবন সুস্থ থাকার উপায় এ বিষয় সম্পর্কে আপনার যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ
মতামত বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে দেওয়া মতামত বাক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন
না। আবার আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও
সুস্থ থাকুন।
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url