গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়?
আপনি কি একজন গর্ভবতী নারী? আপনি কি খুব দ্রুতই গর্ভধারণ করতে চাচ্ছেন? সাথে সাথে
আপনি কি গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচতে
চাচ্ছেন? তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটির মূল
আলোচনায় হচ্ছে গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে
তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? সে সম্পর্কে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল ও
কার্যকরী আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক!
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটির মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার
খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? এ বিষয় সম্পর্কে এমন
কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো, যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব
সহজেই গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি
গর্ভবতী হওয়া যায়? গর্ভকালীন সময়ে কোন ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন ও কোন
খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত এ বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন। আপনি
কি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান, তাহলে আজকের এই
আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই। এই আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে নির্ভুল সব তথ্য গুলো জানতে
পারবেন। ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভূমিকা
মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে স্পেশালভাবে তৈরি করেছেন। তবে
মানুষ বিভিন্ন মুহূর্ত বিভিন্নভাবে উপভোগ করে। তবে একজন দম্পতি বা একটি মেয়ের
জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্পেশাল মুহূর্ত হচ্ছে তার গর্ভকালীন সময়।
গর্ভকালীন সময়টি অন্যান্য সব মুহূর্তের চাইতে এটি সবচেয়ে অন্যতম এবং
গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় গর্ভবতী মাকে এক ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করে সতর্ক হয়।
আবার এই সময় কিছু কিছু খাবার যেগুলো শরীরের জন্য উপকারী সেগুলো খেতে হয় আবার
কিছু কিছু খাবার যেগুলো গর্ভকালীন সময়ে শরীরের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো এড়িয়ে চলতে
হয়। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি বিস্তারিতভাবে
জানতে পারবেন গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে
তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? সেই সম্পর্কে।
এছাড়াও কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার
খাওয়া প্রয়োজন? গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা, গর্ভবতী মায়েরা সকাল থেকে রাত
পর্যন্ত কিভাবে খাবার খাবেন? গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় যে ফলগুলো খাবেন,
গর্ভবতী মায়েদের যে ফলগুলো খেলে ক্ষতি হবে, গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই আপনি যদি গর্ভবতী মায়েদের কি
ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? এ বিষয়
সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।
কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়?
যুক্তরাজ্যে ২০২১ সালে ডায়েট এবং নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক
বিষয়ক একটি গবেষণায় মূল্যায়নে বলা হয়েছিল যে প্রজননের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ
উভয়ের জন্য ডায়েট এবং পুষ্টি গ্রহণের প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে
বলতে গেলে গর্ভধারণের সুবিধার জন্য শাক-সবজি ফলমূল পূর্ণ আঁশযুক্ত চাল এবং আটা,
বেশি তেল যুক্ত মাছ, প্রোটিনের জন্য ডাল, ডিম এবং মাংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোর গুরুত্ব আমরা প্রায় ভুলে
যাই, কিন্তু সেগুলো আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন আয়োডিন।
সাধারণত আয়োডিন ভ্রূণের পরিপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে এবং এটি মায়ের থাইরয়েডের সমস্যা দূরীভূত করতে সাহায্য করে। যাদের গর্ভধারণ
এ কোনরকম জটিলতা রয়েছে তাদের জন্য ডায়েটের পরিকল্পনাটা ভিন্ন হবে। তাদের ডায়েট
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী হবে। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে
ডায়েট পরিকল্পনা যেমন হতে পারে তা আজকের এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত তুলে ধরার
চেষ্টা করব।
- ফলিক অ্যাসিডঃ যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্র CDC এর তথ্য অনুযায়ী প্রজননের সক্ষম ব্যক্তিদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফলিক এসিড গ্রহণে ভ্রুনের মেরুদন্ড গঠনে বিভিন্ন রকম জটিলতা দূর হয়। এছাড়াও গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায় বলেও জানা যায়। সাধারণত সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় খাবারের মাধ্যমে ফলিক এসিডের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই জন্য সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিডের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
- প্রোটিনঃ ইউনাইটেড হসপিটালের ডায়েট নিউট্রিশন বিভাগের প্রধান তাসনিম হাসান চৌধুরী বলেন, গর্ভধারণের আগে ডিম্বাণুর মান আগে আগে বাড়াতে হলে প্রোটিন খাওয়া বৃদ্ধি করতে হবে। আর প্রোটিন গুলো মূলত হতে হবে উচ্চ শ্রেণীর প্রোটিন যেমন মাছ,মাংস, দুধ, ডিম এগুলো বেশি পরিমাণে প্রাধান্য থাকতে হবে। কিন্তু এই প্রোটিন গুলোর কেউ যদি যোগান দিতে না পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে তাহলে চাল, ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি, সিমের বিচি এবং প্রতিদিন নিয়মিত প্রতিবেলা খাবারের সাথে ডাল অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এগুলো মূলত প্রোটিনের খুবই ভালো উৎস। হারভার্ট ডিসকুলার পাবলিক হেলথ সাড়ে ১৮ হাজার নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে, যারা মাংসের পরিবর্তে ডালের মতো উৎস থেকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছে তাদের বন্ধ্যাত্ব ঝুঁকি অনেকাংশে অনেক কম থাকে।
- আয়রনঃ গর্ভধারণের সময় এবং গর্ভধারণের পরবর্তী সময়ে যেন রক্তের ঘাটতি না হয়, তা নিশ্চিতকরণ করতে হবে। এজন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র গ্রামে নয়, শহরাঞ্চলেও রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা যায়। আর মূলত এর প্রধান কারণই হচ্ছে শরীরে আয়রনের ঘাটতি। ডক্টর তাসলিম হাসান চৌধুরী বলেন, মায়ের রক্ত থেকে ভ্রুনের দেহ তৈরি হয়। এজন্য মায়ের শরীরের কোনরকম রক্তশূন্যতা যেন না থাকে সেদিকে নিশ্চিত করতে হবে। রেডমিড বা মাংস, বিভিন্ন ধরনের বাদাম,সবুজ শাক-সবজি এবং ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান রয়েছে। মূলত শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ু গঠন শুরু হয়ে যায় গর্ভধারণের শুরু থেকে, এজন্য খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন বাদাম রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ভিটামিন সিঃ মূলত যারা গর্ভধারণ করতে চান, তারা তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যুক্ত করবেন। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর তা যেন শরীরের শোষিত হয়, তা নিশ্চিতকরণ করতে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেলায় খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন লেবু, কমলা এসব খাবার রাখতে হবে।
- ভিটামিন বি১২ঃ গর্ভধারণের আগে ভিটামিন বি১২ বিদ্যমান রয়েছে এমন খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে যেমন সামুদ্রিক মাছ, কলিজা প্রভূতিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ বিদ্যমান রয়েছে। তাই জন্য এগুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
- চিনিঃ বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে মেয়েদের শরীরের মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি ধরা পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, শরীরের ওজন কম থাকার পরেও রক্তে গ্লুকোজ ধরা পড়ে। তাই জন্য সরাসরি চিনি খাওয়াটা কমিয়ে আনতে হবে। শর্করা জাতীয় খাবার খেলেও সেটি কিছুটা কমপ্লেক্স বা একটু জটিল কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এরকম খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে যেমন সাদা চালের পরিবর্তে লাল চালের ভাত খাওয়া, সাদা আটার পরিবর্তে লাল আটার রুটি খাওয়া ইত্যাদি। খাদ্য তালিকায় শাক-সবজির পরিমাণ বেশি রাখতে হবে। মূলত এটি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন ডিঃ সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সহ গর্ভবতী নারী সবারই দিনে অন্ততপক্ষে ১০ মাইক্রগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। ভিটামিন ডি এর প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। যারা বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকেন, রোদের সংস্পর্শে যান না, তাদের আলাদাভাবে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হতে পারে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী খাবার খাওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করাটাও খুবই জরুরী। কেননা শরীরচর্চা নারীদের হরমোনের নিঃসরণতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, নারীরা গর্ভধারণের পর মায়ের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন বাড়ানো
ছাড়া আর তেমন কোন ভূমিকা নেই। ক্যালোরির পরিমাণ বাড়ানোর কোনরকম প্রয়োজন নেই।
সাধারণত বাচ্চার দেহ গঠিত হয় রক্ত,মাংস এবং হাড় দিয়ে। আর রক্ত মাংস বাড়ানোর
জন্য ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন দরকার হয়। এখানে কার্বোহাইড্রেট ও
ফ্যাট এর পরিমাণ খুবই কম প্রয়োজন হয়।
তাই জন্য খাদ্য তালিকায় কিছু স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন সামুদ্রিক মাছের তেল,
বাদামের ফ্যাট, আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। ভ্রুনের বৃদ্ধি
বাড়ানোর জন্য প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ধীরে ধীরে প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলতে হবে।
সাধারণত এই সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একজন গর্ভবতী নারীকে
প্রথমদিকে দুই থেকে তিন গ্লাস এবং শেষের দিকে গিয়ে দিনে অন্তত পক্ষে চার গ্লাস
দুধ খেতে হবে।
তরল দুধ না খেলেও দুগ্ধ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন পনির, টক দই, দুধের
ছানা খাওয়া যেতে পারে। যারা দুধ খেতে পারেন না অথবা দুধের যোগান দিতে কষ্ট হয়,
তারা দুধের পরিবর্তে মাছ খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছে
ছোট মাছের কাটায়। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকে প্রস্থ দানায়।
নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও খাদ্য তালিকার দিকে নজর দিতে হবে।
পুরুষদের শুক্রানুর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ভিটামিন ই খুবই দরকার। তাই জন্য
ভিটামিন ই বিদ্যমান রয়েছে এমন খাবার পুরুষদের বেশি বেশি খেতে হবে। প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন ই বিদ্যমান থাকে সবুজ শাক-সবজিতে। সেগুলো বেশি পরিমাণে গ্রহণ
করতে হবে। শুক্রাণু সুস্থ সবল রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রোটিন।
এই সময় পুরুষদেরও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গর্ভধারণের জন্য
বা প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য এককভাবে প্রভাব বিস্তার করবে এমন কোন খাবার
বা সুপার ফুড নেই বরং পরিকল্পিত ডায়েট এবং নিয়মিত খাবার খাওয়ার অনুসরণ করাটা
খুবই জরুরী। তবে খাবার এবং পুষ্টি, গর্ভধারণ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে
দুশ্চিন্তা থাকলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসক এবং একজন ভালো পুষ্টিবিদ পরামর্শ
অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের বাচ্চা সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে
প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম, সবুজ শাক-সবজি
ইত্যাদি। গর্ভবতী মা এবং গর্ভের বাচ্চার সব রকম পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য
প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অতীব জরুরী। সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকম জটিলতা দূরীভূত হবে। তাই জন্য
সুষম খাদ্য গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা এবং গর্ভের বাচ্চার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকা
সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে সঠিক খাবার গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের
রোগ ব্যাধি ও নানা রকম সমস্যা থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি হওয়া, নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম, ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে
কম হওয়া এই সকল সমস্যা দূর হতে পারে সঠিক খাবার ও সঠিক জীবন ধারণ।
- ডিমঃ তাহলে চলুন প্রথমেই একটি সহজ খাবার দিয়ে শুরু করি সেটি হচ্ছে ডিম। গর্ভের শিশুর যে মস্তিষ্ক তৈরি হচ্ছে মস্তিষ্ক যেন ভালোভাবে তৈরি হয়, সেজন্য কোলিন নামক একটি পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। আর কোলিন সাধারণত খাবার থেকে গ্রহণ করতে হয়। কারণ সাধারণত কোলিন মাল্টি-ভিটামিন খাবারগুলোতে থাকে না। আর এই কোলিন এর ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। তাছাড়া কোলিন ছাড়াও ডিমে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। ডিমে এত ধরনের ভিটামিন, মিনারেল বিদ্যমান রয়েছে যে ডিমকে গবেষকেরা বলে, নেচারস মাল্টিভিটামিন অর্থাৎ প্রকৃতির দেওয়া মাল্টিভিটামিন। গর্ভকালীন সময়ে ভালোভাবে একটি জিনিস মাথায় রাখবেন, কাঁচা ডিম কখনো খাবেন না, যেমন অনেকেই ঘরে মেয়োনিজ তৈরি করেন, এই মেয়োনিজ কাঁচা ডিম দিয়ে তৈরি করা হয়, গর্ভাবস্থায় পুরোপুরি ভাবে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন। আর ডিম খাওয়ার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন আপনি যে ডিমটা খাচ্ছেন, সেটা যেন ভালোভাবে সেদ্ধ করা বা রান্না করা হয়। যদি ডিম ভালোভাবে রান্না না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জন্য ডিমের কুসুম এবং সাদা অংশ যেন ভালোভাবে সেদ্ধ হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়াও কোলিন ডিম ছাড়াও আরো কিছু খাবারে বিদ্যমান রয়েছে যেমন গরুর মাংস মুরগির মাংস, দুধ এই খাবারগুলো আপনারা আপনাদের খাদ্য তালিকায় রাখবেন।
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারঃ সাধারণত গর্ভাবস্থায় দুটি কারণে ক্যালসিয়াম স্বাস্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কারণ হলো গর্ভের বাচ্চার শরীরের হাড় গুলো মজবুত করার জন্য এবং গর্ভের বাচ্চার দাঁত শক্ত করার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। আর দ্বিতীয়টি হলো গর্ভবতী মায়ের ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখার জন্য। যেসব গর্ভবতী নারীদের আগে কখনো ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপের কোনরকম সমস্যা হয়নি প্রেগনেন্সির সময় অনেকের দেখা যায় ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক জটিল রোগেরও দেখা দেয় যেমন Pre-Eclampsia, Eclampsia নামক রোগ। আর এই সব রোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম। আর এজন্যই মা ও শিশু দুজনের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম অতিব প্রয়োজনীয়। আর খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে দুধ। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন একজন গর্ভবতী মায়ের তিন কাপ দুধ খাওয়া প্রয়োজন। দুধের তৈরি খাবার যেমন টক দই খেতে পারেন। মিষ্টি দইয়ের তুলনায় টক দই স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। তাই দই খাবার ক্ষেত্রে টক দই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। অনেকের আবার দুধ বা টক দই খেলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আরো অন্যান্য খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারেন যেমন শাক, ব্রকলি, কাঠবাদাম এই খাবারগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। আর এ খাবারগুলো থেকে যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম না পান, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন, আপনার যদি আলাদা করে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন পড়ে তাহলে তিনি দেখবেন। গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম স্বাস্থ্যের জন্য এত প্রয়োজনীয় যে প্রথম তিন মাস শেষ হওয়ার পর চতুর্থ মাস থেকে ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হয়।
- যে কোন ধরনের শাকঃ শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফোলেট বিদ্যমান থাকে। আর এগুলো গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের গর্ভে বাচ্চার মাথার যে খুলি তৈরি হচ্ছে, ব্রেন তৈরি হচ্ছে মেরুদন্ড দিয়ে এটি তৈরি হচ্ছে আর এগুলো ভালোভাবে তৈরি হওয়ার জন্য ফোলেট দরকার হয়। ফোলেট এর যদি অভাব হয়, তাহলে শিশুর নানান ধরনের জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। তাই জন্য গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি ফোলেট গ্রহণ করতে হবে। আয়রন মায়ের শরীরের নতুন রক্ত তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর যদি শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়, তাহলে মায়ের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, শিশুর ওজন কম হতে পারে, আবার সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি। আর বাচ্চা যদি সময়ের আগেই হয়ে যায়, তাহলে তখনই যে সেটা সমস্যা তেমন কিন্তু না এই সমস্যাটা সন্তান বড় হবার পরেও নানান ভাবে ভোগাতে পারেন। লক্ষ লক্ষ গবেষণায় দেখা গিয়েছে,যারা সময়ের আগে জন্মেছে তাদের আগে আগে বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি থাকে যেমন হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, কিডনি রোগ এই রোগ গুলো হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি থাকে যাদের সময়ের আগে জন্ম হয়। গর্ভাবস্থায় ফোলেট এবং আয়রন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন নিয়মিত শাক গ্রহণ করা আবশ্যক। আর আয়রন এবং ফোলেট দারুন উৎস হচ্ছে শাক। তাই প্রতিদিনই কোন না কোন ধরনের শাক খাবেন যেমন পালং শাক, পুঁইশাক, ডাটা শাক, পাট শাক, লাউশাক, কলমি শাক, হেলেঞ্চা শাক, কচু শাক যখন যেসব হাতের কাছে পাবেন সেটাই খাবেন। তবে অবশ্যই রান্নার আগে শাক ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করবেন।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারঃ আমাদের শরীর বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন জমিয়ে রাখতে পারে যেমন ভিটামিন ডি। কিন্তু আমাদের শরীর ভিটামিন সি শরীরে জমিয়ে রাখতে পারে না আবার তৈরিও করতে পারেনা। মূলত খাবার থেকেই ভিটামিন সি তৈরি করে নিতে হয়। আর গর্ভাবস্থায় শরীরে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ভিটামিন সি এর চাহিদা বেশি প্রয়োজন হয়। সাধারণত ভিটামিন সি প্রয়োজন হয় শিশুর দাঁত, মাড়ি, হাড় মজবুত এসব তৈরিতে সাহায্য করে ভিটামিন সি। আর শরীর যেহেতু ভিটামিন সি জমিয়ে রাখতে পারে না। তাই জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার হলো টমেটো, ফুলকপি,বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, করলা, ব্রকলি, কাকরোল, শাক, আর ফলের মধ্যে আমড়া, জাম্বুরা, বড়ই,কমলা, মালটা, স্ট্রবেরি, কিউই ফল ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি আচে রান্না করলে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়, তাই অল্প আচে রান্না করার চেষ্টা করবেন।
- যে কোন ধরনের ডালঃ সাধারণত আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ আমিষ এবং প্রোটিনের চাহিদা থাকে আমরা কিন্তু সেই পরিমাণ খাই না বা খেতে পারি না। কিন্তু প্রেগনেন্সির সময় প্রোটিন এবং আমিষের চাহিদা পূরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সময়ের তুলনায়। কারণ প্রোটিন গর্ভের শিশুর মাংসপেশি তৈরিতে খুবই সাহায্য করে। সাধারণত মাছ,মাংস এবং ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বিদ্যমান থাকে। কিন্তু প্রেগনেন্সির সময় দেখা যায় অনেকেই মাছ, মাংস, খেতে পারে না, সেক্ষেত্রে তারা ডাল খেতে পারে। কারণ প্রোটিনের দারুণ উৎস হচ্ছে ডাল। তাই প্রেগনেন্সির সময় নিয়মিত ডাল খাওয়া অতীত জরুরী। এতে করে গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার বিষয়ে খুব সচেতন থাকতে হবে। ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান থাকায়, ডাল খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ হয়। অনেক সময় আবার গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের প্রথমবারের মতো ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়। এই ডায়াবেটিস গর্ভবতী মা এবং শিশু দুজনকেই ঝুঁকিতে ফেলে। তাই গর্ভকালীন সময়ের জন্য ডায়াবেটিস যেন না হয়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান থাকায় গর্ভবতী মায়ের রক্তে সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এছাড়াও ডালে আরো অনেক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফোলেট ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। মসুর ডাল, মুগ ডাল,মাসকলাই ডাল, ছোলার ডাল,অড়হর ডাল,মটর ডাল, মুগ ডাল, খেসারী ডাল আপনাদের পছন্দমত যে কোন ডাল আপনারা খেতে পারেন। আর ডাল রান্নার ক্ষেত্রে পাতলা ডাল রান্নার পরিবর্তে ঘন করে ডাল রান্না করে খাবেন।
- নাস্তার আইটেমঃ অনেককে দেখা যায় গর্ভাবস্থায় ভাজাপোড়া খেতে পছন্দ করে। কিন্তু এই ভাজাপোড়া গর্ভাবস্থায় মোটেও ভালো না, ভাজাপোড়া হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার। তাই জন্য ভাজাপোড়া প্রেগনেন্সির সময় বিশেষভাবে এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে নাস্তায় কি খাব? প্রেগনেন্সির সময় নাস্তাই আপনারা বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ খেতে পারেন। এগুলো হচ্ছে পুষ্টিগুনে ভরপুর, পুষ্টির একেকটা মিনি প্যাকেট। গবেষকেরা বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের তালিকা করেছেন, সেই তালিকায় সবার উপরে এক নাম্বার পুষ্টিকর খাবার হচ্ছে কাঠবাদাম, পাঁচ নাম্বারে চিয়াসিড, ছয় নাম্বারে মিষ্টি কুমড়ার বীজ। শুধু কাঠবাদাম আর মিষ্টি কুমড়ার বীজ না, প্রায় সব ধরনের বাদাম ও বীজে অনেক পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে যেমন চিনাবাদাম থেকে ফলিক এসিড এবং কোলিন পাওয়া যায়, যেটা শিশুর ব্রেন গঠনে সাহায্য করে, আখরোটে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাট এটাও শিশুর ব্রেন গঠনে দারুন কাজ করে। সূর্যমুখী বীজে ভিটামিন বি৬ বিদ্যমান রয়েছে, যেটা শরীরের নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই নাস্তায় আপনারা পরিমাণ মতো ১০-১৫টি বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেতে পারেন।
গর্ভবতী মায়েরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কিভাবে খাবার খাবেন?
গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা এবং সঠিক পরিচর্যা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গর্ভবতী মায়ের সুস্থতার উপরে গর্ভের সন্তানের সঠিক বিকাশ
এবং বৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় গর্ভকালীন সময়ে অনেক
গর্ভবতী মায়েদের ওজন বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে বাচ্চা
প্রসবের পর, আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়। সে সাথে বাচ্চা
প্রসবের সময় অনেক জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
এই জন্য গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের বাচ্চা সুস্থতার জন্য গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে উপযুক্ত খাবার খেতে হবে। তাহলে চলুন নিচে জেনে নেওয়া
যাক গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত।
- সকালবেলাঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সকালবেলা উঠতে কিছুটা দেরি হয়, কারণ বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়ের রাতে ভালোভাবে ঘুম হয় না। ফলে সকালবেলা দেরি করে ওঠে। এক্ষেত্রে এটা গর্ভের বাচ্চার উপর প্রভাব ফেলে। আবার অনেক গর্ভবতী মায়ের সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব পায়, কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করেনা। সেক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েরা সকালবেলা ভারী খাবার না খেয়ে, হালকা চা সাথে বিস্কুট খেতে পারেন। আর গর্ভাবস্থায় সময় একবারে বেশি খাবার না খাওয়াই ভালো। একটু পর পর কম কম করে খেতে পারেন। সকালবেলা হালকা চা বিস্কুট খাওয়ার পর একটা সেদ্ধ ডিম,দুইটি রুটি সবজি দিয়ে খেতে পারেন। রুটি ভালো না লাগলে দুই স্লাইড পাউরুটিতে মাখন মাখিয়েও খেতে পারেন। তারপর যখন দশটা এগারোটা দিকে এক গ্লাস গরম দুধ পান করতে পারেন। দুধ খাওয়ার পর হালকা ফলগুলো খেতে পারেন।
- দুপুরবেলাঃ দুপুরে এক কাপ ভাত খেতে পারেন। যদি ভাত খেতে ভালো না লাগে,তাহলে সে ক্ষেত্রে ২টি রুটি খেতে পারেন সাথে সামুদ্রিক মাছ, মাংস, কলিজা, ডাল,মিক্স সবজি,শাক,সালাদ এবং খাওয়ার শেষে দই খেতে পারেন বেশি না খেতে পারলে অল্প অল্প করে অবশ্যই সবগুলোই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- বিকেলবেলাঃ বিকেলবেলা হালকা কিছু নাস্তা করতে পারেন যেমন বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেতে পারেন, এক গ্লাস গরম দুধে জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন,নাস্তাই কয়েক রকম ফলমূল খেতে পারেন এটুকুই যথেষ্ট বিকালের নাস্তায়। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখবেন গর্ভাবস্থায় কোন রকম ভাজা-পোড়া, ফাস্টফুড এগুলো যাবে না, এগুলো এড়িয়ে চলবেন কারন গর্ভকালীন সময়ে এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না।
- রাতেরবেলাঃ রাতের খাবার প্রায় দুপুরের মতোই। রাতের বেলা দুটি রুটি, সাথে বিভিন্ন ধরনের সবজি, কলিজা, শাক, মাছ, মাংস, ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন যে খাবারগুলো খাবেন সেগুলো গরম গরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- রাতে শোয়ার আগেঃ রাতে শুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধ অবশ্যই খাবেন, এটা কোনোভাবে মিস করা যাবে না। কারণ আপনি যেহেতু সারারাত অভুক্ত থাকবেন, সেজন্য এই এক গ্লাস দুধ সারারাত আপনার গর্ভস্থ সন্তানকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। একবারে তো অনেক পানি
খাওয়া সম্ভব না, তাই জন্য একজন গর্ভবতী মাকে একটু পরপর তার চাহিদা অনুযায়ী পানি
পান করতে হবে। উপরোক্ত খাদ্য তালিকাটি যে কোন গর্ভবতী মা মেনে চলতে পারেন।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি হচ্ছে প্রতিদিনের সাধারণ একটি খাদ্য তালিকা । আবার কোন
কোন গর্ভবতী নারী উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, প্রেসার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের
শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন, সেক্ষেত্রে তাদের খাদ্য তালিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন
হবে।
ডায়াবেটিসের রোগী হলে মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। প্রেসারের রোগী হলে
খাবারে লবণ কম খেতে হবে। যাদের এই সকল সমস্যা রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ
নিয়ে সেসব নারীরা খাদ্য তালিকা তৈরি করে, খাদ্য গ্রহণ করবে। গর্ভাবস্থায়
প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে একজন গর্ভবতী মা গর্ভের সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত
করতে পারে।
গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় যে ফলগুলো খাবেন
সাধারণত নারীদের জীবনের গর্ভাবস্থা হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। মূলত
গর্ভকালীন সময়ে একটা নারীর শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। অনেকেই এ
সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারলেও অনেকেই আবার মানিয়ে নিতে পারে না। গর্ভকালীন
সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যকর খাবার। গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী
মায়ের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তাই জন্য তখন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেতে হয়।
অনেকেই গর্ভাবস্থায় কি কি ফলমূল খেতে হয় তা জানে না। আর না জানার কারণে সব
ধরনের ফলমূল খেয়ে নেই, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না। তাই জন্য মা ও
সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে আরো সচেতন হতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী
মায়েদের খাদ্য তালিকায় কোন কোন ফলমূল গুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- আপেলঃ সাধারণত আপেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের দেহে একাধিক জটিল রোগকে প্রতিরোধ করতে আপেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত আপেল খেলে অ্যাসিটিটির মতো নানাবিদ সমস্যা দূর করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থর সময় আপেল খাওয়া গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য দারুন উপকারী। গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে মা এবং শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়াও আপেলে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, ফোলেট এবং পেকটিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদান। তাই আজই গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় অন্ততপক্ষে একটি করে আপেল যুক্ত করুন।
- কমলাঃ কমলালেবুদের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। আর এই ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাশাপাশি আয়রন শোষণে দারুন কার্যকরী। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার হলো কমলালেবু। গর্ভকালীন সময়ে একটি করে কমলা লেবু খেলে, রক্তস্বল্পতার মতো রোগ থেকে মা ও শিশু রক্ষা পায়। সাধারণত কমলা হচ্ছে ফাইবার এবং ফলিক এসিডের অন্যতম উৎস। গর্ভের ভ্রনের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড গঠনে কমলালেবু দারুন কাজ করে পাশাপাশি ব্রণের বিকাশেও সাহায্য করে। গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে কমলালেবু। তাই জন্য গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি করে হলেও কমলা যুক্ত করা আবশ্যক।
- পেয়ারাঃ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। গর্ভকালীন সময়ে পেয়ারা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো রোগ থেকে রক্ষা করে। গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য গর্ভবতী মা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর ফল খেয়ে থাকে। আরে স্বাস্থ্যকর ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেয়ারা। সাধারণত পেয়ারা আয়রনের ভালো উৎস, যা রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখা জরুরী।
- অ্যাভোক্যাডোঃ অ্যাভোক্যাডোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-কে, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম, কোলিন সহ একাধিক পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। তাই জন্য গর্ভবতী নারী গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য এই ফলটি খুবই উপকারী। গর্ভবতী মায়েদের খাদ্য তালিকায় এই ফলটি রাখা যায়। এই ফলটি এমন একটি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ ফল, যাতে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।
- কলাঃ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলায় বিদ্যমান থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চাইলে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটি করে কলা যুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও কলাতে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা, ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখন অনেক ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়, সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গর্ভকালীন সময়ে অন্ততপক্ষে একটি করে প্রতিদিন কলা খেতে পারেন। তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
- লেবুঃ গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন নিয়মিত লেবু খেলে হজম ভালো হয় পাশাপাশি বমি বমি ভাব দূর হয়। আর সকালবেলা যে ক্লান্তি ভাব থাকে সেটাও নিমিষেই দূর হয়ে যায়। এছাড়াও লেবু শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে দারুন কাজ করে।
- আঙ্গুরঃ আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম সহ নানা ধরনের উপকারী উপাদান। যা গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই আঙ্গুর ফল আপনারা গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন।
- তরমুজঃ তরমুজ সাধারণত শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তরমুজ পানি জাতীয় ফল হওয়ার কারণে তরমুজ খেলে শরীরে পানি শূন্যতা দূর হয়। তাই জন্য আপনারা গর্ভাবস্থায় তরমুজ পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারেন।
- বেদানাঃ অনেক গর্ভবতী মায়েদের রক্তশূন্যতার সমস্যা গুলো দেখা দেয়। আর এই রক্তশূন্যতা দূর করতে হলে প্রতিদিন নিয়মিত একটি করে বেদানা খেলে রক্তশূন্যতা দূর হবে। কেননা বেদানা রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী মায়েদের যে ফলগুলো খেলে ক্ষতি হবে
সাধারণত গর্ভকালীন সময়টা হচ্ছে একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
এই সময় খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। একজন
গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা মেলে। তাই জন্য এ সময়
খুব সাবধানতার সাথে চলাফেরা করতে হয়। ফল যেমন গর্ভাবস্থায় উপকারী ঠিক তেমনি
কিছু অপকারী ফল রয়েছে। যে ফলগুলো গর্ভবতী মা খেলে গর্ভবতী মা এবং শিশুর ক্ষতি
হতে পারে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
- আনারসঃ টক মিষ্টি জাতীয় আনারস ফল প্রায় সকলেই খেতে পছন্দ করে। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের জন্য আনারস মোটেও স্বাস্থ্যকর না। আনারসে বিদ্যমান রয়েছে ব্রোমেলাইন নামক এনজাইম বিদ্যমান থাকে। আর এই ব্রোমেলাইন নামক এনজাইম প্রোটিনকে ভেঙে দেয় এবং জরায়ুর রাস্তায় ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। আবার আনারস খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়েদের ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই জন্য গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের আনারস না খাওয়াই ভালো।
- পেঁপেঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ল্যাটেক্স বিদ্যমান রয়েছে, যা গর্ভপাতের জন্য দায়ী। পেঁপে খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে ব্যথার সৃষ্টি হয় পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়, এজন্য গর্ভকালীন সময়ে পেঁপে না খাওয়াই ভালো।
- হিমায়িত ফলঃ যে সকল ফল হিমায়িত করে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়,সে সকল ফল গর্ভবতী মায়েদের জন্য কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয়। হিমায়িত ও ক্যানজাত ফল তাজা নই, এটা অনেক ক্ষেত্রে গর্ভের বাচ্চার জন্য বিষাক্ত হতে পারে। সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের জন্য তাজা মৌসুমী ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। তাই তাজা ফল খেতে হবে এবং হিমায়িত ফল বর্জন করতে হবে।
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু খাবার খুবই মারাত্মক যা গর্ভবতী মায়েদের
অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। ফলে গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিভিন্ন
ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের গর্ভবতী মায়েদের নিষিদ্ধ
কিছু খাবারের তালিকা উল্লেখ করা হলো।
- গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার কোনভাবেই খাওয়া যাবে না। কারণ সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকতে পারে ফলে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য এটা মারাত্মক।
- যে খাবারগুলো পুরোপুরি রান্না করা হয়নি অথবা কাঁচা, মাংস জাতীয় পণ্য যেমন সসেজ ও কোল্ড কাট। এগুলো কোন ক্রমে খাওয়া যাবে না। কারণ এগুলোতে টেক্সোপ্লাজমা এবং সালমোনিলার মতো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে।
- বিভিন্ন ধরনের কাঁচা মাছ এবং সি ফুড এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এগুলোতে উচ্চ মাত্রার ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী বিদ্যমান থাকে যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক ক্ষতিকারক।
- কাঁচা অথবা পাস্তরায়ান ছাড়া দুধ কিংবা ওই ধরনের দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় এগুলো একেবারেই খাওয়া যাবেনা। কেননা এগুলোতে লিস্টেরিয়া নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে যা লিস্টিরিওসিস নামক এক ধরনের রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই জন্য এই ধরনের খাবার গর্ভবতী মায়েদের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ।
- রান্না না করা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য, সিম, অঙ্কুরিত বীজ, আলফালফার বীজ এবং বিভিন্ন ধরনের রেডি-টু-ইট-সালাদ এইসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই খাবারগুলোতে লিস্টেরিয়া, সালমোনিলা ও ই. কলির মতো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে।
- কাঁচা ডিম,হাফ বয়েল ডিম মোটকথা পুরোপুরি ভালোভাবে রান্না না হওয়ার ডিম খাওয়া যাবেনা। কারণ এতে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকতে পারে ফলে গর্ভবতী মায়েদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- অন্যান্য অঙ্গের মাংস এবং যকৃত খাওয়া যাবেনা কারণ যকৃতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান থাকলেও এটা গর্ভধারণকারিনী মায়েদের খেতে বলা হয় না। কারণ এতে অতিমাত্রায় ভিটামিন এ বিদ্যমান থাকায় এই মাংস গর্ভবতী মা খাওয়ার পর বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই খাবারটি বর্জন করতে হবে গর্ভকালীন সময়ে।
- উচ্চমাত্রায় পারদ থাকে কিছু মাছে আর এগুলোই এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ বেশিরভাগ শিকারি মাছ যেমন সোর্ড ফিশ, হাঙ্গর, কিং ম্যাকক্যারেলেমার্কারি বেশি থাকে বেশিরভাগ শিকারি মাছে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- এছাড়াও চা কফি ক্যাফিন জাতীয় খাবার গুলো গর্ভকালীন সময়ে বর্জন করতে হবে।
- আমরা হয়তো অনেকেই পনির বা চিজ খেতে পছন্দ করি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য মোটেও ভালো না চিজ। কারণ চিজ গর্ভাবস্থায় খুবই বিপদজনক একটি খাবার। চিজ গর্ভবতী মা ও বাচ্চার উভয়ের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই জন্য গর্ভকালীন সময়ে চিজ খাওয়া বর্জন করতে হবে।
লেখকের ইতি কথাঃ গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়?
সম্মানিত পাঠক, আশা করি উপরোক্ত আলোচনা গুলো থেকে গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের
খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? সেই সম্পর্কে
পুরোপুরি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ে জেনে
নিলে গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি
গর্ভবতী হওয়া যায়? এ বিষয় সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন। গর্ভকালীন
সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। তাই এ সময় খুব সাবধানতার সাথে যে
খাবারগুলো শরীরের জন্য উপযোগী সেগুলো খেতে হবে এবং যে খাবারগুলো খেলে ক্ষতি হবে
সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
আবার গর্ভকালীন সময়টি অনেক লাজুক সময় একটু হিতে-বিপরীত হলে মা ও শিশু দুজনেই
ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে না
জানার কারণে প্রতি বছর অনেক মা ও শিশু ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আবার অনেক গর্ভবতী
মায়েরা মারাও যায়। তাই আপনি যদি এই ধরনের ক্ষেত্রে সম্মুখীন হতে না চান তাহলে
গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি
গর্ভবতী হওয়া যায়? এই আর্টিকেলটি পড়া অত্যন্ত জরুরী।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে
পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের তথ্যবহুল
আর্টিকেল নিয়মিত পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরো তথ্যবহুল উপকারী
আর্টিকেল পড়তে চান, তাহলে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই
আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও
পরিবার-পরিজনদের কাছে তাদের উপকারার্থে শেয়ার করে দিন।
যেন তারা গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে
তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়া যায়? এ বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি ভালোভাবে জেনে নিতে
পারে। গর্ভবতী মায়েদের কি ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন? - কি খেলে তাড়াতাড়ি
গর্ভবতী হওয়া যায়? এ বিষয়টি নিয়ে আপনার যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মতামত বা
প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে দেওয়া মতামত বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
আবার আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও
সুস্থ থাকুন।
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url