১৪টি উপায়ে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি


আপনি কি খুব দ্রুত সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই।কারণ আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায় হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। আর এটি খুব অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার একটি অন্যতম ব্যবসা। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যবহুল ও কার্য করে আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক!
ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি ও খামার ব্যবস্থাপনা
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে এমন কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ব্রয়লার মুরগি পালন ব্যবসাটি অল্প সময়ে কতটা লাভজনক ব্যবসা। তাই আপনি যদি ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই। এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নির্ভুল শব্দ তথ্যগুলো জানতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.

ভুমিকা

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই খুব অল্প সময়ে সচ্ছল বা স্বাবলম্বী হতে চাই। এই জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করে এবং বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু কার্যকরী কিছু উপায় ও পদ্ধতি না জানার কারণে অনেকেই সফল বা লাভবান হতে পারে না। আজকের এই আর্টিকেলটির আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে।আপনি যদি ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি বিষয়টি সম্পূর্ণ ভালোভাবে জেনে নেন, তাহলে আপনি খুব অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন। 

ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা থাকলে খুব সহজেই নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। অনেকেই অনেক ভাবে জানার চেষ্টা করে থাকে, কিন্তু আপনি যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতির সম্পর্কে তথ্যবহুল সব আলোচনা বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। এছাড়াও ব্রয়লার মুরগি, ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি ও খামার ব্যবস্থাপনা, মেঝে পদ্ধতি, ম্যাচা পদ্ধতি, ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট,
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ, ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়, ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির উপাদান সমূহ, ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার কারন, ব্রয়লার মুরগির রোগ ও প্রতিকার, ব্রয়লার মুরগি কত দিনে বিক্রির উপযুক্ত হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনি যদি ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।

ব্রয়লার মুরগি

সাধারণত সহজলভ্য খাবার আমিষের যোগান দেওয়ার জন্য ব্রয়লার মুরগি খুবই সুপরিচিত। বিশেষভাবে, মাংস উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও লালন পালন করা হয় এই ব্রয়লার মুরগি। ব্রয়লার মুরগির পালক সাদা রঙের হয় এবং সব সময় তাদের ত্বক থাকে হলুদাভ। সাধারণত ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বর্ধনশীল এবং মাংস নরম এবং তুলতুলে হয়। যে কোন বয়সের মানুষই এটা খেতে পারেন। এই ব্রয়লার মুরগি ৪ থেকে ৫

সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। ২:১ অনুপাত হয়ে থাকে, ব্রয়লার মুরগির খাদ্য রূপান্তর হার। ভিন্ন রকম দুটি জাতের মোরগ - মুরগির সংকরায়ণের মাধ্যমে সাধারণত ব্রয়লার মুরগির সৃষ্টি হয়। “এগ্স্ এ্যান্ড হেন ” নামক পোল্ট্রি খামারে ১৯৬৪ সালে সাভারের কাশেমপুরে সর্বপ্রথম ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন শুরু হয়। বাংলাদেশ বিমানের অধীনস্থ বিমান পোল্ট্রি কমপ্লেক্স নামক বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামারে,

স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৮০ সালের দিকে একদিন বয়সী ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বিক্রি করা শুরু হয় এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানোর জন্য ব্রয়লার মুরগি বাণিজ্যিকভাবে পালন করা শুরু হয়। শিল্প ব্যাক্তি মালিকানাধীন হিসেবে ব্রয়লার মুরগি ১৯৯০ সালে সফলভাবে প্রসার লাভ করে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা এবং উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে এই বয়লার মুরগি খুবই ভালো উৎপাদিত হচ্ছে।

খামারে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৫-৬ ব্যাচ ব্রয়লার মুরগি পালন করা যেতে পারে প্রতি বছরে। সাধারণত অতি অল্প সময়ে ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ২৮ - ৩২ দিনে আশানারূপ লাভ হয়। তাই ব্রয়লার মুরগি পালন করার জন্য প্রযুক্তি অনেকটা দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তাহলেই বাণিজ্যিকভাবে ব্রয়লার মুরগি পালন করে অতি দ্রুতই লাভবান হওয়া যাবে।

ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি ও খামার ব্যবস্থাপনা

সাধারণত ব্রয়লার মুরগি মেঝে পদ্ধতি ও মাচা পদ্ধতিতে পালন করা হয়। ব্রয়লার মুরগির পালনের জন্য জায়গা কোন ব্যাপার না, যে কোন জায়গায় আপনি বয়লার মুরগি পালন করতে পারবেন। ব্রয়লার মুরগি পালনের জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতির প্রয়োজন পড়ে না। ব্রয়লার মুরগি পালনের সময় খামারের প্রতি পিছ বাচ্চাকে ৪৫ সে.মি. এবং বড় ব্রয়লারকে ১ - বর্গমিটার অবশ্যই জায়গা দিতে হবে। ব্রয়লার মুরগি
আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চান, তাহলে যেখানে ব্রয়লার মুরগি পালন করবেন সেখানে ২৩ ঘণ্টা আলো-বাতাস সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও ব্রয়লার মুরগী বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চাইলে এবং সেটাতে ভালোভাবে সফলতা পেতে চাইলে ব্রয়লার মুরগি পালনের A টু Z ভালোভাবে জেনে ব্রয়লার মুরগি পালন করতে হবে। তাহলেই আপনারা ব্রয়লার মুরগি পালন করে ফলপ্রসু ও লাভবান হবেন।
ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি ও খামার ব্যবস্থাপনা

ব্রয়লার মুরগির জাত

ভিন্ন রকম সুস্থ ও ভারী ওজন বিশিষ্ট ভিন্ন দুটি প্রজাতির মুরগির সংকরায়নের মাধ্যমে ব্রয়লার মুরগির সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রকম গবেষণা করে ছাটাই বাছাই করার পর বেশি মাংস উৎপাদনশীল এই হাইব্রিড ব্রয়লার মুরগির সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন রকম ব্রয়লার মুরগির জাতের নামঃ বিভিন্ন রকম ব্রয়লার মুরগির জাতের নাম গুলো হলো হাবার্ড ক্লাসিক, সুভারট্রাপিক ব্রো, কব্ ১০০, কব্ ৫০০, ইসা-ডেভেট ই - ৭৫৭, এভিয়ান, সেভার মিনি ব্রো, সেভার স্টার ব্রো, ভেনকব, হাবার্ড হাইইল্ড, হাইসেক্স - জি, সি এন্ড এম ক্লাসিক, হাবার্ড হই ওয়াই, ইসা - এমপিকে - ৩০, আরবার একরস, রস - ৩০৮, ইন্ডিয়ান রিভার, কাছিলা হাবচিকস্, লোমান মিট, হারচিক হাইব্রো ইত্যাদি।

ব্রয়লার মুরগির বিভিন্ন উন্নত জাত ও দেশের নাম

ক্রমিক নং ব্রয়লার মুরগির বিভিন্ন উন্নত জাতের নাম দেশের নাম
০১ আরবার একর যুক্তরাষ্ট্র
০২ কব্-৫০০ যুক্তরাষ্ট্র
০৩ হাইব্রো পিএন নেদারল্যান্ড
০৪ হাবার্ড ক্লাসিক ফ্রান্স
০৫ হাইব্রো পিজি নেদারল্যান্ড
০৬ সেভার স্টার ব্রো কানাডা

ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন

  • ব্রয়লার মুরগি নির্বাচনঃ ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা সংগ্রহের সময় গুণগতমানের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • যেহেতু ব্রয়লার মুরগি অতি দ্রুত বড় হয়, আবার সব ব্রয়লার মুরগির সমান ভাবে ওজন বাড়ে না। তাই জন্য ব্রয়লার মুরগির জাত সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে।
  • ব্রয়লার মুরগির ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণু মুক্ত করণ পদ্ধতিঃ ব্রয়লার মুরগির খামার ঘরের লিটার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং বিভিন্ন রকম উন্নত জীবাণুনাশক দিয়ে সব সময় ব্রয়লার মুরগির ঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। সব সময় ঘরের দেয়াল - মেঝে ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। ফিউমিগেশন শুরু করার পূর্বে ঘরে যেন কোনরকম আলো বাতাস প্রবেশ করতে না পারে সেই জন্য দরজা, জানালা, ভেন্টিলেটর প্রভুতি বন্ধ করতে হবে। ফাউমিগেশন করতে হবে ১২০ মি.লি. ফরমালিন (৪০%) দিয়ে এবং প্রতি ঘরের জন্য ১০০ ঘন জায়গায় ৬০ গ্রাম পটাশিয়াম পার-ম্যাঙ্গানেট।
  • ব্রয়লার মুরগির ব্রুডিং পদ্ধতিঃ ব্রুডিং এর জায়গার পরিমান:- সাধারণত প্রথম সপ্তাহে প্রতি বর্গমিটারে (১ বর্গ মিটার=১০.৭৬ বর্গফুট)। সেহেতু ব্রুডিং করা যাবে প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৬০-৬৫টি বাচ্চা নিয়ে এবং প্রতি বর্গ মিটারে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রায় ৩০-৩৫ টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ব্রুডিং করা যাবে। প্রতিদিন একটু একটু করে চিলগার্ডের পরিধি বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণত ৩০ ফুট লম্বা লম্বা চিলগার্ডের সাহায্যে প্রায় ৫০০ টি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ব্রুডিং করা যাবে।
  • ব্রুডিং চিকগার্ডের উচ্চতা:- উচ্চতা ৪৫- ৫০ সেন্টিমিটার।
ব্রয়লার মুরগির বয়স ভেদে খাদ্য প্রদানঃ

ক্রমিক নং ব্রয়লার মুরগির বয়স (দিন) বয়স অনুপাতে খাদ্য প্রদান
০১ ১-১৪ তম দিন পর্যন্ত প্রি-স্টার্টার
০২ ১৫-২৬ তম দিন পর্যন্ত স্টার্টার
০৩ ২৭-৩৫ তম দিন পর্যন্ত ফিনিসার-১
০৪ ৩৬ তম দিন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ফিনিসার-২

ব্রয়লারের খাদ্য প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা

  • সাধারণত গ্রীষ্মকালে সকাল সন্ধ্যায় ঠান্ডা সময়ে খাদ্য প্রদান করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
  • সমান পরিসরে সম দূরত্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য পাত্র স্থাপন করতে হবে।
  • খাদ্য পাত্রের অর্ধেকের উপরে ভর্তি হলে, খাদ্যের অপচয় অনেক গুণ বেড়ে যায়।
  • লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পাত্রের তল মুরগির পিঠ সমান উচ্চতায় রাখতে হবে।
  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, আমিষ, শক্তি এবং এমাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করে খাওয়াতে হবে।
ব্রয়লার বিক্রির পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে যত্নঃ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে হবে এবং প্রত্যেক সপ্তাহে ওজন মেপে দেখতে হবে। ব্রয়লার যেখানে থাকে সেখানকার লিটার ভালোভাবে হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যদি আদ্র হয়, তাহলে তার ভিতরে কাঠের গুড়া বা তুষ ছিটিয়ে দিয়ে লিটার ঠিক করে নিতে হবে। যে ঘরে ব্রয়লার মুরগি রয়েছে সেই ঘরেদৈনিক ২৩ ঘন্টা আলো সরবরাহ করতে হবে। রাতের বেলা কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রীষ্মকালে গরমের সময় বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ব্রয়লারের ঘরের তাপমাত্রা ১৮ - ২২ ডি.সে. এর মধ্যে রাখতে হবে।

ব্রয়লার পালনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • স্থান তৈরিঃ যদি আপনারা আপনাদের ফ্লোরে ব্রয়লার পালন করতে চান সে ক্ষেত্রে প্রতি বর্গ মিটারে (১বর্গমিটার=১০.৭৬ বর্গফুট) প্রায় ১০-১২ ব্রয়লার পালন করা যাবে। আর প্রতি বর্গ মিটারে মাচা পদ্ধতিতে ১৫ টি ব্রয়লার পালন করা যাবে।
  • খাবার পাত্র স্থাপনঃ ১ টি ব্রয়লারের জন্য লম্বা খাবার পাত্র প্রতি ৫ সেন্টিমিটার এবং ২ সেন্টিমিটার পাত্র প্রতি গোল খাবার একটি ব্রয়লার হিসেবে সরবরাহ করতে হবে। প্রতি ৮০-৯০ টি ব্রয়লারের বাচ্চার জন্য একটি খাবার প্লেট ব্রুডিং এর সময় সরবরাহ করতে হবে।
  • পানির পাত্র স্থাপনঃ একটি ব্রয়লারের প্রতি ২ সেন্টিমিটারের জন্য লম্বা পানির পাত্র এবং একটি ব্রয়লার হিসেবে পানি সরবরাহ করতে হবে গোল পানির পাত্র প্রতি এক সেন্টিমিটারের জন্য।
  • ঠান্ডা সময়ে ব্রয়লার ধরা উচিত এবং একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন ব্রয়লার যখন ধরবেন তখন অন্ততপক্ষে ২-৩ ঘন্টা আগে খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। যখন ব্রয়লার ধরবেন তখন ব্রয়লারের ঘর অন্ধকার করে দিবেন অথবা হালকা আলোর লাইট জ্বালিয়ে যেটাকে আমরা ড্রিম লাইট বলি তাহলে ব্রয়লার অতি সহজেই ধরতে পারেন। ব্রয়লার ধরার সময় দৌড়াদৌড়ি করবেন না। ব্রয়লার যখন বাজারজাতকরণ করতে নিয়ে যাবেন তখন গাদাগাদি করে রাখা যাবে না। ব্রয়লার ধরার পূর্বে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা না খাইয়ে রাখা যায়। না খাইয়ে রাখার কারণে কিছুটা ওজন কমলেও বাজারজাত করা সহজ হয়। শতকরা ২-৩ ভাগ ওজন বৃদ্ধি পায় ব্রয়লার ঠান্ডা করার পর।

ম্যাচা পদ্ধতি

সাধারণত পূর্ব-পশ্চিম দিকে ব্রয়লার মুরগির ঘর বানাতে হয়। প্রত্যেকটি ব্রয়লার মুরগী এক বর্গফুট জায়গা নির্ধারণ করে ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের দৈর্ঘ্য ৪:১ এবং প্রস্থ হবে ১ ফুট। ব্রয়লারের মুরগির জন্য ২০ ফুট হবে ঘরের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ হবে ১০০ বর্গফুট ও উচ্চতা ৩-৪ ফুট। মাটি থেকে উপরের মাচার দূরত্ব উচ্চতা হবে কমপক্ষে পাঁচ ফুট।
কাঠ কিংবা বাস দিয়ে তৈরি করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে বিছানো বাঁশ ও কাঠের মাঝে ইঞ্চির কম পরিমাণে ফাঁকা রাখতে হবে। ঘরের চাটাই হবে তার জালি দিয়ে এবং সেটি হবে ১*১ বর্গ ইঞ্চির চেয়ে কম ফাঁকা রাখতে হবে। আর বাঁশ দিয়ে তৈরি হবে ঘরের বেড়া। শীতকালে যখন বেশি শীত পড়বে তখন চটের বস্তা দিয়ে যে অংশে বেশি শীত পড়বে, ঐ অংশ ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

মেঝে পদ্ধতি

সাধারণত মেঝে পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রথমে ঘর পাকা করে নিতে হবে বা আপনি চাইলে যেখানে ব্রয়লার পালন করবেন সেখানে শক্ত কিছু বিছিয়ে ঘর তৈরি করা যায়। ব্রয়লার মুরগির ঘর তৈরি করার পর দ্বিতীয় কাজ হল ঘরের মেঝেতে কাঠের গুড়া বা ছাই কিংবা তুষ বিছিয়ে নিতে হবে ৩-৮ ইঞ্চি পুরু করে। একটি বিষয়ে বিশেষ করে লক্ষ্য রাখবেন আপনি ঘরের মেঝেতে কাঠের গুড়া বা ছাই কিংবা তুষ ব্যবহার

করবেন অথবা যে লিটার ব্যবহার করবেন সেটা অবশ্যই জীবাণুর মুক্ত হতে হবে। আর যদি জীবাণুমুক্ত না হয়, তাহলে জীবাণুমুক্ত করার জন্য অবশ্যই জীবাণুন নাশক বা ফরমালিন মিশ্রণ পানি স্প্রে মেশিন দিয়ে পুরো ঘরে স্প্রে করে দিতে হবে। এটি অন্ততপক্ষে ২-৩ দিন রেখে দিতে হবে। তাহলে দেখবেন লিটার জীবাণুমুক্ত হয়ে গেছে।

যখন ২-৩ দেওয়া হয়ে যাবে তিনদিন পর তখন লিটার খোলামেলা বাতাসে নাড়াচাড়া করতে হবে। ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে লিটারের আদ্রতা ঠিক করে নিতে হবে। তারপর আপনারা লিটার ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত প্রত্যেক সপ্তাহে আপনাদের লিটারের উপরে জীবাণু নাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন প্রতি ১০ ফুট জায়গার জন্য ৫ কেজি লিটার ব্যবহার করতে হবে। এর বেশি ব্যবহার করা যাবে না। তাছাড়া অন্যান্য পদ্ধতি গুলো সব প্রায় ম্যাচা পদ্ধতির মতই হবে।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট

ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে চাইলে, ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধির চার্ট অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মুরগিকে খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে। তাহলে দ্রুত মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে। একজন ব্রয়লার মুরগি পালনকারী যদি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার প্রথম দিন থেকে নিচের চার্ট অনুযায়ী খাবার খাওয়ায়, তাহলে আশা করছি দ্রুত মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং খুব দ্রুতই বাজারজাত করতে পারবেন। তাহলে চলুন নিচের তালিকায় মুরগির বাচ্চার বয়স শূন্য থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট উল্লেখ করা হলোঃ

ক্রমিক নং মুরগির বয়স (দিন) খাদ্য প্রদানের পরিমান (গ্রাম) দৈনিক ওজন বৃদ্ধি মাত্রা (গ্রাম)
০১ ১ম দিনে সামান্য খাবার দিতে হবে। ১৮ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০২ ২য় দিনে ১৭ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ২১ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৩ ৩য় দিনে ২০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ২৩ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৪ ৪ র্থ দিনে ২৩ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ২৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৫ ৫ম দিনে ২৬ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ২৮ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৬ ৬ষ্ঠ দিনে ২৯ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৩১ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৭ ৭ম দিনে ৩৩ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৩৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৮ ৮ম দিনে ৩৮ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৩৯ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
০৯ ৯ম দিনে ৪২ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৪৩ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১০ ১০ম দিনে ৪৭ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৪৬ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১১ ১১ তম দিনে ৫৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৫০ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১২ ১২ তম দিনে ৬০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৫৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৩ ১৩ তম দিনে ৬৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৫৮ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৪ ১৪ তম দিনে ৭০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৬৩ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৫ ১৫ তম দিনে ৭৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৬৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৬ ১৬ তম দিনে ৮০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৬৮ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৭ ১৭ তম দিনে ৮৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৭২ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৮ ১৮ তম দিনে ৯০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৭৭ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
১৯ ১৯ তম দিনে ৯৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৮২ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২০ ২০ তম দিনে ১০০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৮৭ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২১ ২১ তম দিনে ১০৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৯০ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২২ ২২ তম দিনে ১১২ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৯৩ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৩ ২৩ তম দিনে ১১৯ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৯৬ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৪ ২৪ তম দিনে ১২৬ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ৯৯ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৫ ২৫ তম দিনে ১৩০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ১০২ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৬ ২৬ তম দিনে ১৩৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ১০৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৭ ২৭ তম দিনে ১৪০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ১০৮ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৮ ২৮ তম দিনে ১৪৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ১১২ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
২৯ ২৯ তম দিনে ১৫০ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ১১৫ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।
৩০ ৩০ তম দিনে ১৫৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। ১১৮ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হবে।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ

প্রথম দিন থেকেই ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার যত্ন নিতে হবে। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা একবার রোগাক্রান্ত হলে বাঁচানো খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চাকে যেমন নিয়মিত চার্ট অনুযায়ী খাবার দিতে হয় ঠিক তেমনি খাবারের পাশাপাশি ব্রয়লারের বয়স অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করাতে হবে। চেষ্টা করতে হবে ছোট অবস্থাতে শুকনো খাবার দেওয়ার। ব্রয়লার মুরগির ওজন খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ক্যালরিযুক্ত খাবার নিয়মিত দিতে হবে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির জন্য। তাহলে ব্রয়লার মুরগির অতি ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
  • নিউ মাইশিনঃ খামারিরা সাধারণত ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা কিনে এনে পালন করে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করে লাভবান হওয়ার জন্য। ব্রয়লারের দ্রুত ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনারা নিয়মিত নিউ মাইশিন ঔষধ সেবন করাতে পারেন। আর এই নিউ মাইশিন ঔষধ হলো এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক।
  • অ্যান্ড্রোফ্রক্সিনঃ এই অ্যান্ড্রোফক্সিন ঔষধ নিয়মিত ব্রয়লার মুরগিকে সেবন করানোর ফলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে ঔষধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়মিত খাওয়াতে হবে।
  • ব্রয়লার মুরগিকে খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ওজন বাড়ানোর ঔষধ সেবন করাতে হবে। তাহলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে। এবং সাথে সাথে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে তাহলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ফলে রোগ বালাই কম হবে। ব্রয়লার মুরগিকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। ব্রয়লার মুরগিকে প্রত্যেক সিজনে আলাদা আলাদা ভ্যাকসিন প্রয়োজন হয় তাই জন্য যে সময়ে যেই ভ্যাকসিন প্রয়োজন সেই ভ্যাকসিন দিতে হবে। তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
  • বিটওপেনঃ ব্রয়লার মুরগির সর্দি কাশি ভালো করার জন্য ভাতের সাথে নিয়মিত বিটওপেন খাওয়াতে পারেন।

ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন খামারিরা যারা ব্রয়লার মুরগি পালন করেন, তারা দ্রুত লাভবান হওয়ার জন্য কিভাবে ব্রয়লার মুরগির ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, সেই সম্পর্কে জানা অতি আবশ্যক। আর আপনারা যদি ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে না জানেন, তাহলে লাভবান হতে পারবেন না। কারণ খামারিরা কষ্ট করে ব্রয়লার মুরগি পালন করে লাভবান হওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে আপনারা যদি ব্রয়লারের ওজন
দ্রুত বৃদ্ধি করতে না পারেন, তাহলে লাভবান হবেন না বরং আপনাদের লস হবে। তাই জন্য আপনাদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে ব্রয়লার মুরগি কোন কোন খাবার বয়লার মুরগিকে দিতে হবে। কিভাবে ব্রয়লার পালন করলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায় এবং বাজারজাত করা যায় সকল বিষয় সম্পর্কে আপনাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত ব্রয়লার পালন করে আপনারা লাভবান হতে পারবেন। বাংলাদেশের মানুষ

সাধারণত ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত মুরগিকে ফিড খাইয়ে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করে। ফিডে বিদ্যমান রয়েছে প্রোটিন ও ক্যালোরি যা ব্রয়লার মুরগিকে মোটাতাজা করতে সহায়তা করে। ফলে ব্রয়লার তাড়াতাড়ি মোটাতাজা হয় কিন্তু শক্তিশালী হয় না। তার জন্যই একটা ব্রয়লার যদি রোগাক্রান্ত হয়, তাহলে একে একে সমস্ত ব্রয়লার অতি দ্রুতই সেই একই রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে ব্রয়লার মুরগির ওজন

বৃদ্ধির চার্ট মেনে চলতে হবে পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাছাড়া খাবারের পাশাপাশি পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ও মিনারেল খাদ্য নিয়মিত খাওয়াতে পারেন।
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগির বাচ্চাকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। তাহলে চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কিছু উপায়ঃ
  • ব্রয়লার মুরগির ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাসের ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
  • সব সময় ব্রয়লার মুরগির খামার পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে বাচ্চা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত যত্ন সহকারে পালন করতে হবে।
  • বাজার থেকে ব্রয়লারের বাচ্চা ক্রয় করে আনার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে বাচ্চাগুলো যেন সুস্থ সবল হয়।
  • খামারের লিটার সব সময় শুকনো রাখতে হবে। কখনো যদি লিটারের আদ্রতা বেশি হয়ে যায় তাহলে কাঠের গুড়া অথবা তুষ দিয়ে লিটার ঠিক করে নিতে হবে।
  • ব্রয়লার মুরগিকে নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।
  • খামার থেকে ব্রয়লার বাজারজাত করার পর কমপক্ষে ১৫ দিন পর আবার নতুন ব্রয়লারের বাচ্চা পালন শুরু করতে পারেন।
  • উপরোক্ত বিষয়গুলি লক্ষ্য রেখে যদি আপনারা ব্রয়লার পালন করেন, তাহলে মুরগির রোগ বালাই অনেকংশে কমে যাবে। আর ব্রয়লারের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, ফলে তাড়াতাড়ি বাজারজাতকরণ করে অধিক লাভবান হতে পারবেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। দানাদার আমিষ যুক্ত খাবার নিয়মিত দিতে হবে। ফলে ভিটামিনের ঘাটতি ব্রয়লারের হবে না তবেই তো ব্রয়লার মুরগির ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির উপাদান সমূহ

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট দেখেই আপনারা মুরগির খাদ্য তৈরি উপাদান সমূহ নিয়ে বাড়িতে নিজেই খাদ্য প্রস্তুতকরণ করতে পারবেন। নানা রকম পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে বাড়িতে নিজে খাদ্য তৈরি করে ব্রয়লারকে খাওয়ালে ব্রয়লার মুরগির ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ওজন দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য ব্রয়লারকে প্রদান করতে হবে পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার ফিড যুক্ত রাখতে পারেন। ব্রয়লার মুরগিকে বিভিন্ন রকম খাবার খেতে দিতে পারেন যেমন ধান, ভুট্টা, গম, সয়াবিন মিল, চালের কুড়া, ঝিনুক চূর্ণ, বিভিন্ন রকম প্রোটিন ভিটামিন মিনারেল জাতীয় খাদ্য। তাহলে চলুন নিচে ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির উপাদান সমূহ উল্লেখ করা হলোঃ

ক্রমিক নং পুষ্টি উপাদান সমূহ খাদ্যে মিশ্রিত উপকরণ সমূহ
০১ পানি পরিষ্কার বিশুদ্ধ জীবাণুমুক্ত সুপেয় পানি।
০২ শর্করা গম, গমের ভুসি, ভুট্টা, ধান, চাল, চালের কুড়াঁ, ইত্যাদি।
০৩ আমিষ শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সরিষার খৈল, সয়াবিন মিল রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি।
০৪ স্নেহ বিভিন্ন উদ্ভিজ তৈল যেমন : পাম তৈল, সয়াবিন তৈল, তিলের তৈল ইত্যাদি।
০৫ খনিজ পদার্থ ঝিনুক খোসা চূর্ণ, হাঁড়ের গুঁড়া ডিমের খোসা, চুনা পাথর খাদ্য লবণ ইত্যাদি।
০৬ ভিটামিন শাকসবজি, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ইত্যাদি।

ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি না হওয়ার কারন

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশ বেড়েছে। তাই জন্য ব্রয়লারের চাহিদা পূরণ করতে হলে ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধি করে বাজারজাতকরণ করতে হবে। আর এই দ্রুত ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্রয়লার মুরগিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য ও সুষম প্রদান করতে হবে। কারণ পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের অভাবে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি পায় না। আর আপনারা যেই ঘরে ব্রয়লার মুরগি পালন
করবেন সেই ঘর সব সময় অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন, পাশাপাশি ব্রয়লারের ঘরে যেন সর্বক্ষণ পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস সরবরাহর হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্রয়লার পালন করলে বেশি রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে সাথে সাথে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায় না। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা কেনার সময় দেখেশুনে সুস্থ সবল বাচ্চা কিনে এনে খামারে পালন শুরু করতে হবে।

না হলে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি পাবে না। ব্রয়লার মুরগির যখন রোগের সিজন শুরু হবে তার আগেই ব্রয়লার মুরগিকে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। যেন রোগের হাত থেকে মুক্তি পায়। ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে বাচ্চা থেকে শুরু করে বাজারজাত করার আগ পর্যন্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

চার্ট অনুযায়ী ব্রয়লারকে খাবার না দিলে ব্রয়লারের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি হয় না। উপরোক্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখে ব্রয়লার পালন করলে আপনারা ব্রয়লার মুরগির ওজন না আসার কারণ সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হতে পারবেন এবং তা থেকে অনায়াসে মুক্তি পাবেন।

ব্রয়লার মুরগির রোগ ও প্রতিকার

ব্রয়লার মুরগির রোগ ও প্রতিকার
ব্রয়লার পালনে খামারিরা বিভিন্ন সময় নানা রকম সমস্যায় পড়েন। সময়মতো এইসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য খামারিদে চৌকস না হয়ে উপায় নেই। একজন চৌকস খামারি হিসাবে ব্রয়লার পালনে যেসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে চলুন সেটা জেনে নিন। ব্রয়লার মুরগি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যেমন রানিক্ষেত, গামবোরো, আমাশয়, এছাড়াও ব্রংকাইটিস, মাইক্রোপ্লাজমা, ব্রুডার নিউমোনিয়া, নেক্রোটিস

এন্টারাইটিস এবং রিও ভাইরাস। সাধারণত খামারিরা গামবোরো রোগ নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। গামবোরো সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়। এ রোগের কোন কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে সময় মত টিকা দেওয়া থাকলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এ রোগে আক্রান্ত যদি হয়ে যায় তাহলে উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্রয়লার খাদ্য ও পানি গ্রহণ

করা বন্ধ করে দেয়। ব্রয়লারের পালক খুশকো খুশকো দেখায় এবং সাদা পাতলা দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা করে। ভালোভাবে হাঁটতে পারে না এবং শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। পরিশেষে ব্রয়লারগুলো মারা যায়। তবে এ রোগের মৃত্যুর হার ৩০% এর বেশি হয় না। থাইয়ের গোশতে রক্তের ছিটা দেখতে পাওয়া যায়। একই বয়সের বাচ্চা প্রথমে বড় এবং পরে ছোট হয়ে যায় ও বাচ্চা কাটলে ভিতরে রক্তের ফোটা দেখা যায়।

এই রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্থাই একমাত্র উপায়। গামবোরো রোগ দেখা দিলে ব্রয়লার মুরগির ঘরে খাদ্য ও পানির পাত্র বাড়াতে হবে। কারণ এই রোগে খাবারের প্রতি অরুচি হওয়ায় না খেয়ে ব্রয়লার দুর্বল হয়ে মুরগি মারা যায়। তাই খাদ্য ও পানির পাত্র এমন ভাবে দিতে হবে যেন ঘুরলে খাদ্য পায়। এই রোগে সাধারণত অরুচি ডিহাইড্রেশন এবং মুরগি না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে তার জন্য পানিতে ভিটামিন সি স্যালাইন ও গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

প্রায় সময় দেখা যায় একই বয়সের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা কিছুদিন পর কতগুলো ছোট কতগুলো বড় দেখা যায়। এর জন্য দৃশ্যমান অদৃশ্যমান বিভিন্ন রকম কারণ জড়িত যেমন কর্লিকক্রান্তিক কারণ,পরিবেশগত ও ব্যবস্থাপনা গত কারণ। দৃশ্যমান ও পরিবেশগত কারণে মধ্যে প্রথম থেকেই প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য ও পানির পাত্র থাকা। কারণ প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে ১-৩ দিন বয়স

পর্যন্ত ব্রয়লারের বাচ্চার চলাচল সীমিত থাকে এবং খাদ্য না চেনার কারণে খাদ্য খাওয়ায় তেমন আগ্রহ থাকে না। তাই এ সময়ে যেসব বাচ্চা ১-২ দিন খাদ্য ভালোভাবে খেতে পারেনা সেগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে পরে খাদ্য খাওয়ার আগ্রহ কমে যায় তখন বাচ্চাগুলো ছোট হয়ে যায়। পুরুষ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি স্ত্রী বাচ্চার চেয়ে ২০-২৫ ভাগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন বয়সের ব্রয়লার মুরগির ডিম একসাথে

ফোটানো হলে ডিমের বাচ্চা ছোট হয় ব্রুডিং পিরিয়ডের কাঙ্খিত তাপমাত্রা সঠিকভাবে না পাওয়াই। তাই জন্য মিশ্রিত বাচ্চা না কিনে একই ধরনের ব্রয়লারের বাচ্চা কেনা উচিত। ব্রয়লারের বাচ্চা ছোট বড় দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে আলাদা করে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে হবে। রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সর্বোত্তম। এই কথাটি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে যথার্থ যুক্তিযুক্ত। অনেক খামারি জেনে না জেনে রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ঔষধ খাওয়ান যা একেবারেই ঠিক না।

অসুখ না হলে ঔষধ খাওয়ানো ঠিক নয়।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সময়মতো ভ্যাকসিন দিতে হবে। সুস্থ মুরগিকে রোগ প্রতিরোধের নামে ঔষধ খাওয়ালে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। প্রতিরোধের জন্য ঔষধ না খাইয়ে সময় মত টিকা দিতে হবে।

ব্রয়লার মুরগি কত দিনে বিক্রির উপযুক্ত হয়

সাধারণত ব্রয়লার মুরগি ৪২ দিন পর্যন্ত পালন করা হয়। কিন্তু এতদিন রাখার ফলে ব্রয়লার মুরগির ওজন প্রায় ৩-৪ কেজির বেশি হয়ে যায়। তখন বাংলাদেশের ক্রেতারা এত ওজনের মুরগি নিতে চাই না। তাই জন্য খামারীরা ৩০-৩২ দিন লালন -পালন করে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এক থেকে দেড় কেজি ওজন হলে বাজারজাতকরন করে দেয়। গ্রিলের চাহিদার জন্য ছোট ব্রয়লার মুরগির চাহিদা অনেক বেশি। তাই জন্য খামারিরা ২৮-৩২ দিনে ব্রয়লার বাজারজাতকরণ করে দেয়।

লেখকের ইতি কথাঃ ১৪টি উপায়ে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি

সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ার সাথে সাথে ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতির সম্পর্কে আরো ভালোভাবে ধারণা পেতে আপনার নিকটস্থ পশু অধিদপ্তর বা পশু বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জেনে নিলে অবশ্যই আপনি ব্রয়লার মুরগি পালন করে খুব অল্প সময়েই অধিক লাভবান হতে পারবেন। ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি গুলো সম্পূর্ণ জানার পরে ব্রয়লার মুরগি পালন করে আপনি কতটুকু লাভবান

হবেন সেটা নিতান্তই আপনার নিরলস পরিশ্রম ও ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি গুলোর উপর নির্ভর করছে। এছাড়াও ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেতে অথবা কোন সমস্যায় পড়লে অবশ্যই একজন ভালো পশু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। তাহলে খুব অল্প সময়ে অধিক লাভবান হতে পারবেন। আর এভাবেই আপনি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

সম্মানিত পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটির সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের তথ্য বহুল ও কার্য করে আর্টিকেল নিয়মিত পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল ও উপকারী সব আর্টিকেল পড়তে চান তাহলে অবশ্যই এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের কাছে

তাদের উপকারার্থে শেয়ার করে দিন। যেন তারা ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে পুরোপুরি ভালোভাবে জেনে নিতে পারে। ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মতামত বা প্রশ্ন থাকে, তাহলে অবশ্যই নিচে দেয়া মতামত বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আবার আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url