ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায়
আপনি কি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা মোটা শরীর নিয়ে চিন্তিত? তাহলে আপনার
চিন্তার আর কোন কারণ নেই। কারণ আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায় হচ্ছে
ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে। এ বিষয়ে বিস্তারিত
তথ্যবহুল ও কার্যকরী আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক!
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে এমন
কিছু ইউনিক ও কার্যকরী তথ্য সম্পর্কে জানাবো যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব
সহজেই ব্যায়াম ছাড়া আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারবেন। অনেকে হয়তো জানেন
না যে, ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব।
তাই আপনি যদি ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই।
এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে আশা করি আলোচ্য বিষয়ে
বিস্তারিতভাবে নির্ভুল সব তথ্য গুলো জানতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভুমিকা
বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ মানুষ তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে
চিন্তিত থাকেন। এইজন্য অনেকেই জিমে গিয়ে ব্যায়াম করে অথবা জিমন্যাস্টিক
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করে
থাকেন। আজকের এই পোস্টের আলোচ্য বিষয় বস্তু হচ্ছে ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক
উপায়ে ওজন কমানোর উপায়
সম্পর্কে। আপনি যদি এ বিষয়ট সম্পূর্ণ ভালোভাবে জেনে নেন তাহলে আপনি খুব সহজেই
আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা মোটা শরীর সুন্দর স্লিম বডিতে রূপান্তর করতে
পারবেন। ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় গুলো ভালোভাবে জানা
থাকলে অনিয়ন্ত্রিত ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি কম থাকে ও সাথে সাথে নিজেকে পুরোপুরি
স্মার্ট, ফিট, স্লিম ও আকর্ষণীয় রাখা যায়। অনেকে অনেক ভাবে জানার চেষ্টা করে
থাকে কিন্তু আপনি যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ব্যায়াম
ছাড়া প্রাকৃতিক উপায় ওজন কমানোর উপায় গুলো সুন্দরভাবে জানতে পারবেন। এছাড়াও
স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা, নিয়মিত সকালের খাবার খাওয়া, সঠিক
সময়ে
দুপুরের খাবার খাওয়া,অল্প হলেও রাতের খাবার নিয়মিত খাওয়া, পানি পান করে ওজন
কমানোর উপায়, মধু খেয়ে ওজন কমানোর উপায়, লেবু পানি খেয়ে ওজন কমানোর উপায়,
চিনি যুক্ত খাবার কম খেয়ে ওজন কমানোর উপায়, ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন কত ক্যালরি
বার্ন করতে হবে ও প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত
জানতে পারবেন। আপনি যদি ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমাতে চান তাহলে এই
পোস্টটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী।
ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায়
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিভিন্ন মানুষ দুশ্চিন্তায় ভোগে। কসরতের পাশাপাশি বিভিন্ন
রকম ডায়েট চার্ট ফলো করে থাকেন। কিন্তু না জেনে শুনে যে কোনো ডায়েট চার্ট ফলো
করা উচিত নয়। যে কোন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার আগে অবশ্যই মনে রাখতে হবে সেটি
আপনার শরীরের জন্য উপযোগী কি না। কোনটি আপনার শরীরের জন্য উপযোগী
কোনটি উপযোগী না প্রয়োজনে ডায়েটেশিয়ানদের পরামর্শ নিতে পারেন। নিয়মিত
প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানি পান করুন। শুধু পানি খেতে ভালো না লাগলে সাথে এক
চামচ মধু ও লেবুর রস মেশাতে পারেন। হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা আবার অনেকেই জানি
ওজন কমাতে লেবু মধু গরম পানির উপকারিতা অনেক। লেবু পানি
সাধারণত শরীরের দূষিত পদার্থগুলো বের করে দেয় এবং শরীরে যে বাড়তি মেদ জমে সেগুলো
ঝরিয়ে ফেলতে খুব ভালো সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে গভীর ঘুম নিশ্চিত
করতে হবে। ওজন দ্রুত কমানোর আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম। দৈনিক
কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো। গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের অভাবে মানুষের
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় ফলে দ্রুত ওজন বেড়ে যায় তাই নিয়মিত ৮
ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই
ভালো থাকবে। তরল লিকুইড জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। নিয়মিত
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ঘরের তৈরি খাবার খাওয়া। বাইরের ফাস্টফুড, প্রসেস
ফুড এগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া। সকাল বেলা, দুপুরবেলা,
রাত্রিবেলা, নিয়মিত খাবার গ্রহণ করা কোন বেলা খাবার স্ক্রিপ না করা। রাতে ঘুমোতে
যাওয়ার আগে কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘন্টা আগের রাতের খাবার খাওয়া। খাবার খাওয়ার
পর কমপক্ষে আধা ঘন্টা করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যারা জিমে গিয়ে জিম করতে
পারেন না তারা সকালে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন ফলে আপনার শরীরের
মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করবে এবং শরীরে বাড়তি
মেদ জমতে দিবে না। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সুষম খাবারের পাশাপাশি মৌসুমী ফল
রাখুন। শাক সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ফলমূল বাদাম, কুমড়া বীজ, মৌসুমী ফল এগুলো
খান ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকবে ফলে বেশি খাবার খাওয়ার
প্রবণতা থাকবে না এবং ওজন বাড়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।প্রতিদিন ফাইবার
যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন। কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার
আরো পড়ুনঃ দ্রুত মাথা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
অভ্যাস করুন। যতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করবেন তার থেকে বেশি ক্যালোরি বার্ন করুন। কম
ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন,
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো, খাবার আস্তে আস্তে চিবিয়ে খাওয়া, গ্রিন টি খাওয়ার
অভ্যাস গড়ে তুলুন, চিনি জাতীয় খাবার পরিহার করুন,খাদ্য তালিকা থেকে খাবার
পরিবর্তন করুন, আপনার জীবন থেকে স্ট্রেস দূর করুন, নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক
কার্যকলাপ অনুশীলন করুন। উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করে চললে ব্যায়াম ছাড়া
প্রাকৃতিক উপায়ে দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব।
স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য। সাধারণত যেসব খাবার মানবদেহে
বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন ও ক্ষয় পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং
দেহে বিভিন্ন রকম পুষ্টি সাধন করে সেগুলোই হচ্ছে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ
খাবার।সাধারণত পুষ্টিকর খাবার বলতে খাদ্য তালিকার ছয়টি খাবারের সমন্বয়কে বোঝায়।
খাবারগুলো হল শর্করা আমিষ, ভিটামিন, খনিজ, পানি ও চর্বি।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে মানুষের সচেতনতার অভাব
পুষ্টিহীনতার প্রধান কারণ।জিংক সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাশাপাশি চিন্তাকে আরো উন্নত করে।
ওমেগা থ্রি মাছের তেল থেকে পাওয়া যায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
ক্লান্তি ভাব দূর করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন সি,ই, বিটা
ক্যারোটিন,
কাঠবাদাম, লালা আটা, গ্রিন টি প্রভূতি স্মৃতিশক্তির বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। বি
১২ ভিটামিনের অভাবে মানসিক চাপ, হতাশা, বিরক্তিভাব, কোলাজেন কলার নমনীয়তা রক্ষা
ইত্যাদিতে সাহায্য ক দুধ, ডিম, পনির, ইত্যাদিতে ভিটামিন ১২ পাওয়া যায়। আমলকি
,জাম্বুরা, মালটা ,বড়ই, কাঁচামরিচ, জাম, পেঁপে ,আঙ্গুর,সবুজ শাকসবজি প্রভূতিতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে
আয়রনের অভাবে। হিমোগ্লোবিনের অভাবে শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। গরুর
মাংস, ডিম, আটা, ছোলা ,সিমের বিচি, গুড়, খেজুর, কিসমিস, কলা, আমড়া, জাম, তরমুজ,
মেথি, পুঁইশাক, কালো কচুশাক, পালংশাক, খাসির কলিজা ইত্যাদির মাধ্যমে আয়রনের এবং
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দূর হয়। শস্য দানায় থাকে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন আশঁ এবং
খনিজ । তাই তাই বয়স লিঙ্গ কাজের ধরনের
উপর ভিত্তি করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি
গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন এবং
স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে যেন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সাধন হয়। শরীরকে
সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খাদ্য তালিকায় আবদ্ধ করতে হবে
এবং প্রতিদিন গ্রহণ করতে হবে তাহলে শরীর স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ থাকবে শরীরের
চাহিদাগুলো সব পূরণ হবে।
নিয়মিত সকালের খাবার খাওয়া
নিয়মিত সকালের খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে কোনভাবেই সকালের খাবার
স্ক্রিপ করা যাবে না। শরীরের ক্যালরি তাড়াতাড়ি পোড়ে সকালবেলা। যারা সকালবেলা
খাবার খায় না । সকালের এবং দুপুরের খাবার একসাথে খায় ফলে দুপুরে অজান্তে
অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে এতে করে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সকালে না খাওয়ার
ফলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত সকালের
খাবার গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত সকালের খাবার খেলে কর্মশক্তি সঞ্চয় হয়,
ওজন হ্রাস পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, মন ভালো
থাকে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত সকালের খাবার না খেলে হৃদপিন্ডের
ক্ষতি করে, টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে, স্মৃতিভ্রষ্টতা ঘাটতি হয়, চুলের
ক্ষতি হয়, হজম শক্তি কমায়। খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যের নিবিড় সম্পর্ক
রয়েছে তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
সঠিক সময়ে দুপুরের খাবার খাওয়া
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য দুপুরের খাবারের গুরুত্ব অনেক। শরীরকে সুস্থ
রাখতে সময়ের খাবার সময় খাওয়া অতি প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন সময় সকালে এবং রাতে
সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া সম্ভব হলেও দুপুরবেলা কর্মব্যস্ততার কারণে কখনো
তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার খাওয়া হয়ে যায় আবার কখনো কখনো সঠিক সময়ে খাবার
খাওয়া হয় না। এরকম খাবার খাওয়াই অনেক অনিয়ম হলে শরীরে ব্যাপক
প্রভাব ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন রকম ক্ষতি হয়। দুপুরের খাবার গ্রহণ করা
নির্দিষ্ট সময়ে খুবই জরুরী। সাধারণত সকাল এবং দুপুরের খাবারের মাঝে কমপক্ষে
মিনিমাম ৩ থেকে ৫ ঘন্টা ব্যবধান থাকতে হবে। আপনি যদি সকাল বেলা ৮ টায় খাবার খান
তাহলে দুপুরবেলা একটার আগে খাবার খেতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন পেটে খিদা লাগলে
পাকস্থলীকে অপেক্ষা করানো যাবে না। পেট অনেকক্ষণ খালি
থাকলে অনেক সময় আলসার হওয়ারও ভয় থাকে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত সঠিক
সময়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।খাবার খাওয়ার সময় দ্রুত
খাবেন না, ভালো করে চিবিয়ে খান, বাইরের খাবার খাওয়া বাদ দিন, স্ক্রিনের সামনে
বসে খাবার খাবেন না,খাবার খাওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
অল্প হলেও রাতের খাবার নিয়মিত খাওয়া
রাত্রেবেলা অল্প হলেও নিয়মিত রাতের খাবার গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন মানুষ রয়েছে
ওজনের কথা চিন্তা করে রাত্রিবেলা খাবার খায় না। এটা হলো তাদের মারাত্মক একটা
ভুল। রাতে খাবার গ্রহণ না করলে এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে ফলে শরীর অসুস্থ
হয়ে যেতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই অল্প হলেও রাতের খাবার খাওয়া
প্রয়োজন। সন্ধ্যা ৬ থেকে ৭ তার মধ্যে খাবার গ্রহণ করলে কম ক্যালোরি শরীরে প্রবেশ
করে এবং শরীর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায় ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে
থাকে।রাতে কমপক্ষে ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত এতে পুরুষের
২৬ শতাংশ প্রোস্টেট ক্যান্সার ও নারীদের ১৬ শতাংশ ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়। রাতে
তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ করলে শরীরের রক্তের শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকে,হজমে ভালো
সহায়তা করে ,ভালো ঘুম হয় এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে। তাই অল্প হলেও রাতে ঘুমোতে
যাওয়ার আগে নিয়মিত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম যাওয়া
ঘুম হলো একজন মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখার অন্যতম মাধ্যম। শরীরকে সুস্থ রাখতে
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮
ঘন্টা ঘুমানো উচিত। প্রতিদিন ছয় ঘন্টার কম ঘুম হলে এতে করে স্বাস্থ্যহানির কারণ
হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে মেটাবলিজম কমিয়ে দেয় এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির
হরমোন বাড়িয়ে দেয় যার ফলে খাবার গ্রহণ করার ইচ্ছা বাড়িয়ে তোলে।
এতে করে দ্রুত ওজন বেড়ে যায় তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে
ঘুমানো খুবই অতি প্রয়োজনীয়। সাধারণত শিশুদের নয় থেকে 13 ঘন্টা এবং বাচ্চাদের
১২ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি পায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম একজন ব্যক্তির পরবর্তী দিনের শক্তি ও দক্ষতার
উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ওজন বৃদ্ধির সম্পর্ক
রয়েছে। জার্নাল সাইন্স এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, অনিদ্রার
সঙ্গে দ্রুত মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু অন্যান্য অসুখ যেমন ডিমেনশিয়া বা
স্মৃতিভ্রংশতা এবং ডিপ্রেশন বা বিষন্নতার সঙ্গে ইনসমিনার যোগসূত্র রয়েছে। আরেকটি
গবেষণায় দেখা গিয়েছে কোন ব্যক্তি যদি একটানা 11 দিন না ঘুমিয়ে থাকে
এতে স্বাভাবিক আচরণ ও দৈনন্দিন কাজকর্মে মারাত্মক প্রভাব পড়ে যা তাকে শর্ট টাইম
মেমোরি লস থেকে শুরু করে হেলুসিনেশন, এমনকি মস্তিষ্ক বিকৃতির দিকেও নিয়ে যেতে
পারে। তাই রাত জেগে কাজ না করা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো, প্রতিদিন একই
সময়ে ঘুমোতে যাওয়া, রাত্রিবেলা চা, কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা, ঘুমোতে যাওয়ার
আগে ফোন, ল্যাপটপ ডিভাইস গুলো দূরে রাখুন।
মেলাটোনিন যুক্ত খাবার যেমন ব্রকলি, সরিষা, আখরোট, বেদানা, টমেটো, শসা ইত্যাদি
সবজি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করলে ঘুমের সমস্যা দূর হয়। ঘুমাতে যাওয়ার
আগে কলা গরম দুধ মধু ইত্যাদি খেয়ে ঘুমোতে গেলে ঘুম খুব ভালো হয়।
পানি পান করে ওজন কমানোর উপায়
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পানির কোন বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পানি শরীর থেকে টক্সিন এর মাধ্যমে বিষাক্ত পদার্থ
বের করে দেয় এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ক্লাস পানি পান করা
উচিত। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে দৈনিক হাফ লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে
তুলুন। পানি পান করার ফলে খাবার খাওয়ার সময় ক্ষুধা কমে যায়
এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া যায় না ফলে শরীরে বেশি ক্যালোরি প্রবেশ করতে পারে
না তাই জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করে দ্রুত ওজন
কমানো যায়। পানি খেতেও যেমন সময় লাগে না ঠিক তেমনি শরীর থেকে বের হতেও সময়
লাগে না। বেশি বেশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’ য়ে
প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘দ্যা ফাস্ট টাইম মম’স প্রেগনেন্সি
কুকবুক’,দ্যা সেভেন ইনগ্রেডিয়েন্স হেলথি প্রেগনেন্সি কুকবুক’ এবং ওয়েলিং মেলই
ফার্টিলিটি’ বইয়ের মার্কিন লেখক নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার
বলেন,”ভাজাপোড়া ও মিষ্টি খাবার বাদ দেওয়া, শারীরিক কসরতে মনোযোগী হওয়া সহ
অন্যান্য স্বাস্থ্যকর বিষয়ে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সহায়ক ভূমিকা রাখে।”
মধু খেয়ে ওজন কমানোর উপায়
মধুকে বলা হয় সর্ব রোগের মহা ঔষধ। সাধারণত আমরা প্রায় সকলেই জানি সকালবেলা খালি
পেটে হালকা গরম পানি পান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। প্রতিদিন এই পানিতে
এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে দ্বিগুণ উপকার পাওয়া যাবে। মধু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী একটি উপাদান। কুসুম গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন
রকম সমস্যা দূর হয়। মধুতে রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন,
ক্যালসিয়াম এর মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান যা শরীরের অনেক রোগ ব্যাধি থেকে
রক্ষা করে। ওজন কমানোর জন্য অনেক মানুষ বিভিন্ন রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন।
এমতাবস্থায় আপনাদের জন্য মধু ও গরম পানি একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারেন। দ্রুত
ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকালটা মধু এবং পানি দিয়ে আপনার সকালবেলাটা শুরু করতে
পারেন। প্রতিদিন সকালবেলা এক গ্লাস
হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। ফলে আপনার পেট অনেকক্ষণ
ভরা থাকবে। এতে করে আপনি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন। ফলে খুব সহজেই
যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মধু পানি আপনাকে
হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করবে, আপনার হজম শক্তি উন্নত করবে, ইমিউন সিস্টেমকে
শক্তিশালী করে, প্রদাহ কমায়, আপনার
ত্বককে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল রাখবে। ত্বকের জন্য মধু পানি খুবই উপকারী। প্রতিদিন
সকালবেলা হালকা কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে মুখের ব্রণ,
অবাঞ্ছিত লোম, বিভিন্ন রকম দাগ ঝোপ দূর করতে সহায়তা করে।
লেবু পানি খেয়ে ওজন কমানোর উপায়
প্রথমে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে স্বাস্থ্যসম্মত সুশৃংখল জীবনযাপন করতে হবে।
প্রতিদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে
শরীরের বিভিন্ন রকম উপকার হয়। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা মানব
দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাইট্রাস জাতীয় ফল হল লেবু।লেবুতে প্রচুর
পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে।
তাই লেবুতে ফাইবার থাকার কারণে নিয়মিত লেবু পানি পান করলে পেট ভরা থাকে। ফলে
অন্য কিছু খাবার খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না এছাড়াও লেবু পানি বিপাকহার বৃদ্ধিতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সবদিক বিবেচনা করে লেবু পানি ওজন কমাতে বেশ
কার্যকরী।লেবু পানি শরীরকে হাইড্রেট থাকতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে
হাইড্রেশন শরীরের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লেবু পানি দ্রুত শরীরের ফ্যাট কমিয়ে ওজন হ্রাস করে। ২০০৮ সালে একটি গবেষণায়
দেখা গিয়েছে, খাবার খাওয়ার পূর্বে যদি কেউ পানি পান করে তাহলে তার শরীরে ১৩
শতাংশ পর্যন্ত কম ক্যালোরি প্রবেশ করতে পারবে। ক্ষুধা কমাতেও খুবই ভালো কাজ করে।
শরীরের ফ্যাট কমাতে লেবু পানির ভূমিকা অনেক। প্রতিদিন সকালবেলা এক গ্লাস পানির
সাথে লেবু মিশিয়ে পান করলে দ্রুত ওজন হ্রাস পাবে।
চিনি যুক্ত খাবার কম খেয়ে ওজন কমানোর উপায়
মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রায় সকলেই পছন্দ করেন। সরাসরি চিনি না খেলেও বিভিন্ন
খাবারের ভেতর দিয়ে চিনি আমাদের শরীরে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন মানুষ রয়েছে
সচেতনতার কারণে চিনি খাওয়া ছেড়ে দেন, কেউবা ওজন কমানোর জন্য, আবার কেউ কেউ
ডায়াবেটিসের ভয়ে। বিভিন্ন সময় ঘুমের ঘাটতি, অত্যাধিক মানসিক চাপ, কিংবা
বিভিন্ন টেনশনের কারণে শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধে। বেশি চিনি
খাওয়ার ফলে মূলত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই
বলে যে ডায়েট থেকে চিনি বাদ দেওয়া বা রান্নাতে চিনি ব্যবহার না করা এটা কোন
সলুশন না কারণ বিভিন্ন রকম খাবার যেমন চা, কফি, মিষ্টি, শরবত, প্যাকেটজাত ফলের রস
সহ বিভিন্ন রকমের প্রসেস ফুড সবকিছুতেই চিনি লুকিয়ে থাকে। তাই কিভাবে ছাড়বেন
চিনি নিচে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- লিকুইড জাতীয় খাবার যেমন চা, কফি, চিনি ও ক্রিম ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- বিভিন্ন রকম বাইরের প্যাকেটজাত প্রস্তুতকরণ খাবার যেমন পাউরুটি, বিস্কিট, দই, ফলের রস, এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি রয়েছে। তাই জন্য প্যাকেটজাত প্রস্তুতকরণ খাবার বাদ দিয়ে নিজের বাসায় তৈরি যেমন পাউরুটি দই বিস্কিট বিভিন্ন রকম টাটকা ফলের রস বাসায় তৈরি করে খেতে পারেন।
- মধু, গুঁড়, গুঁড়া দুধ, ম্যাপেল সিরাপ, কর্ন সিরাপ, ব্রাউন সুগার ইত্যাদি সবকিছুতেই চিনি রয়েছে। তাই এসব খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
- প্রসেস ফুড খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ বাইরের প্রসেসফুডে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে তাই এসব খাবার খাওয়া অতি দ্রুত বন্ধ করুন।
- চিনি খাওয়া বন্ধ করার সাথে সাথেই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি ইত্যাদি খাওয়া কমিয়ে দিন।
উপরোক্ত পরামর্শগুলি মেনে চললে ম্যাজিকের মত আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন কত ক্যালরি বার্ন করতে হবে
আমরা প্রতিদিন যে পরিশ্রম করি না কেন আমাদের শরীর থেকে ক্যালরি বার্ন হয়।
পরিশ্রম যত বেশি হবে ক্যালরি ও ঠিক তত বেশি বার্ন হবে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে
ক্যালরি বার্ন না হলে শরীরে মেদ জমে যায় ফলে শরীরে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত স্বাস্থ্য জটিলতার অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত শারীরিক ফিটনেসের অভাব। অনেক
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওজন কমাতে ক্যালরি বার্ন করা অতি প্রয়োজনীয়।
" ইটদিস ডটকম"স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন যতটুকু
ক্যালরি গ্রহণ করবেন তার চাইতে বেশি ক্যালরি বার্ন করতে হবে। নইলে এর বিপরীত হলে
ওজন বাড়বে। আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে আপনি কি খাচ্ছেন? আপনার খাবারের মান
কেমন, আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন সে খাবারগুলো কি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না
খারাপ । শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ, হরমোন,
ঘুমের অভ্যাস ইত্যাদিরও প্রভাব রয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত
পুষ্টিবিদ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান 'ব্যালান্স ওয়ান সাপ্লিমেন্ট এর ট্রিস্টা
বেস্ট বলেন, প্রত্যেক মানুষের বিপাক ক্রিয়ার ধরন ভিন্নরকম। বিপাক ক্রিয়ায়
নিয়ন্ত্রণ করে একটি মানুষ প্রতিদিন কত ক্যালরি বার্ন করবে। ডাক্তারি ভাষায় আমরা
এটাকে বলি, 'বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) এর মান থেকে জানা যায় একটি মানুষ দৈনিক
কত ক্যালরি গ্রহণ করতে পারে। তিনি আরো বলেছেন, "শরীরের দৈনন্দিন কাজ করার জন্য
প্রয়োজনীয় ক্যালোরি হিসাব করার একটি পদ্ধতি হলো 'হ্যারিস বেনেডিক্ট ফর্মুলা।
"প্রথমে লিঙ্গভেদে হিসাব করা যায়।"
একজন নারীর " বিএমআর "এর মাত্রা বের করার সূত্রঃ
৬৫৫+(৪.৩৫*পাউন্ডে শারীরিক ওজন)+(৪.৭*ইঞ্চিতে উচ্চতা) - (৪.৭*বয়স)।
পুরুষের জন্য সূত্রঃ
৬৬+(৬.২*পাউন্ডে শারীরিক ওজন)+(১২.৭*ইঞ্চিতে উচ্চতা)+(৬.৮*বয়স)
উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, বয়স ৪০ বছর এবং ১৬০ পাউন্ড ওজনের নারীকে উদাহরণ হিসেবে
ধরলে সূত্র অনুযায়ী তার বিএমআর হবে ১১৮৯.৩২।
যারা মোটেও ব্যায়াম করেন না তাদের 'বিএমআর'এর মাত্রাকে ১.২ দিয়ে গুণ দিতে হব।
যারা সপ্তাহে তিন দিন ব্যায়াম করেন তাদের 'বিএমআর'এর মাত্রা কে ১.৩৭৫ দিয়ে গুণ
হবে।১.৫৫ দিয়ে গুণ দিতে হবে যারা সপ্তাহে পাঁচ দিন মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম
করেন। সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন ভারী ব্যায়াম করলে১.৭২৫ গুন দিতে হবে। আর যদি
দৈনিক প্রচন্ড ভারী ব্যায়াম করেন সেক্ষেত্রে ১.৯ গুন দিতে হবে।
উপরে যে নারীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছিল তিনি সপ্তাহে এক থেকে তিন দিন হালকা
ব্যায়াম করতেন তার সমীকরণটি হল ১৬৩৫.৩১৫ । অর্থাৎ এই পরিমাণ ক্যালরি থাকে
প্রতিদিন শরীর থেকে বার্ন করতে হবে। প্রতিদিন যতটুকু ক্যালোরি গ্রহণ করবে তার
চেয়ে বেশি ক্যালরি বার্ন করতে হবে শরীর থেকে পরিশ্রমের মাধ্যমে। আর যতদিন না
কাঙ্খিত ওজন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ততদিন চালিয়ে যেতে হবে।
প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
সুন্দর মেদহীন স্মার্ট ছিপছিপে আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী কেনা হতে চাই। বর্তমান
সময়ে অধিকাংশ মানুষের বাইরের খাবারের উপর ভরসা করে দিন কাটে তাদের জন্য এরকম
চেহারা পাওয়াটা স্বপ্নের মত বেশ কঠিন।বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই তাদের
অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তায় থাকেন। সুস্থ জীবনযাপন করতে সবাই চায়। কিন্তু কিছু
কিছু ভুলের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়।
বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করলেই দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই বাইরের খাবার ফাস্টফুড ও
প্রসেসফুড এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর এই ফাস্টফুড ও প্রসেস ফুড এবং বাইরের
খাবারগুলো ওজন বাড়ানোর জন্য ওস্তাদ। সাধারণ শরীরে মেদ জমায় প্রসেসফুড,
ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, লিকুইড পানীয় জাতীয় খাবারগুলো। আপনি যদি ওজন কমাতে চান
তাহলে অবশ্যই তা পারবেন তাই জন্য শুধু একটু
কষ্ট করতে হবে,তাহলে আপনি আপনার অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। পৃথিবীতে
অসম্ভব বলে কিছু নেই। যদি আপনি মন থেকে চান এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে
অবশ্যই সম্ভব। তাই প্রতিদিন ১ কেজি করে ওজন কমাতে চাইলে এই খাবারগুলো অবশ্যই
পরিহার করতে হবে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আপনি যে খাবারগুলো রাখছেন অবশ্যই
মাথায় রাখবেন আপনি দৈনিক কত ক্যালরি খাচ্ছেন,
কি ধরনের খাবার খাচ্ছেন, সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ, সেদিকে
বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখবেন। লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিদিন আপনি খাবার থেকে কত ক্যালরি
পাচ্ছেন এবং কত ক্যালরি বার্ন করছেন। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দুই কাপ ফল, তিন
কাপ সবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম দৈনিক খাবেন। ১২০০ ক্যালরির কম
হয়, আপনার এমন জিনিস খাওয়া উচিত।
প্রত্যেকের মেটাবলিজম আলাদা। ওজন হ্রাস শুধুমাত্র ক্যালোরির ওপর ওপর নির্ভর করে
না, এটি আপনার জীবন ধারণের উপর নির্ভর করেন । প্রতিদিন কমপক্ষে দেড় থেকে দুই
ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত। প্রত্যেকদিন এক ঘণ্টা করে যোগব্যায়াম করতে পারেন। এটি
স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি মেনে চলেন তাহলে আপনার শরীরের ওজন ম্যাজিকের মতো প্রতিদিন
দ্রুত ১ কেজি করে ওজন কমতে থাকবে। নিচে উল্লেখিত ব্যায়ামগুলো আপনার দৈনন্দিন
রুটিন এর অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- প্রত্যেকদিন নিয়মিত হাঁটাচলার অভ্যাস করা।
- প্রতিদিন সকালবেলা নিয়মিত জগিং করা।
- পুকুরে বা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা।
- হাই ইন্টারসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং।
- সিঁড়ি আরোহন করা।
- ফলিং পুশ আপ।
- সাইকেলিং করা।
- কিকবক্সিং করা।
- হাইকিং করা।
যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা যদি তাড়াতাড়ি রোগা হতে চান
তাহলে আপনার দৈনন্দিন রুটিন চেঞ্জ করে নিমিষেই আপনার ওজনকে টাটা বাই বাই করে
ভ্যানিশ করতে পারবেন। নিয়মিত প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি
ওজন কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী। বেশি বেশি পানি পান করলে
ম্যাজিকের মত ওজন কমতে থাকে। পানি শরীরের বিষাক্ত
টক্সিন এবং শর্করাকে শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। শরীর থেকে প্রসাবের মাধ্যমে
বিষাক্ত পদার্থ গুলো বের হয়ে যায়। তাছাড়া আরেকটি সলিউশন হলো প্রত্যেকদিন
নিয়মিত গ্রিন টি পান করার অভ্যাস করা। এটাও শরীরের ওজন কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
লেখকের ইতি কথাঃ ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায়
সুপ্রিয় পাঠক আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন
কমানোর উপায় সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে জানতে পেরেছেন। ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক
উপায়ে ওজন কমানোর উপায় গুলো ভালোভাবে জেনে নিলে ও সঠিক গাইডলাইন এবং সঠিক
খাদ্যাভ্যাস ফলো করেলে অবশ্যই আপনি ব্যায়াম ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমাতে
পারবেন। আপনি ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে
কতটুকু ওজন কমাতে পারবেন সেটা নিতান্তই আপনার ওপর নির্ভর করছে। সম্ভব হলে একজন
ভালো পুষ্টিবিদ চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন
কমানোর উপায় সম্পর্কে একটি কার্যকরী ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিতে পারেন।
ইনশাআল্লাহ তাহলে দেখবেন খুব দ্রুত ব্যায়াম ছাড়াই আপনার প্রাকৃতিক উপায়ে
কিভাবে ওজন কমছে।
সম্মানিত পাঠক এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগের সাথে
পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের তথ্যবহুল ও
কার্যকরী আর্টিকেল নিয়মিতই পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল ও
উপকারী পোস্ট পড়তে চান তাহলে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো করুন। সাথে সাথে এই
আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে আপনার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের
কাছে তাদের উপকারার্থে শেয়ার করে দিন।
যেন তারা ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে
জেনে নিতে পারে। ব্যায়াম ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর উপায় এ বিষয় নিয়ে
আপনার যদি কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে দেয়া মতামত বক্সে কমেন্ট
করতে ভুলবেন না। আবার আপনাদের সাথে কথা হবে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে ততক্ষণ
পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন।
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url