ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা - যে কারণে ড্রাগন ফল খাবেন
আপনি কি এমন একটি ফলের সন্ধান করছেন? যেটা দেখতে খুবই মনোমুগ্ধকর আবার খেতেও অনেক
রসালো ও সুস্বাদু! আবার খাদ্য শক্তি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ,
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, আইরন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর
পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। সম্মানিত পাঠক চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেটি কোন ফল!
প্রিয় পাঠক আশা করি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে জানতে পারবেন রসালো ও সুমিষ্ট স্বাদে
ভরপুর সাদা, গোলাপী, লাল ও হলুদ বর্ণের মনোমুগ্ধকর ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও
উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও
উপকারিতা, যে কারণে ড্রাগন ফল খাবেন এবং ড্রাগন খেলে ক্যানন্সারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ
রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সেই সম্পর্কে। বিস্তারিত জানতে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ
মনোযোগ সহকারে পড়ুন!
পেজ সূচিপত্রঃ
.
ভূমিকা
ড্রাগন হলো দেখতে বাহারি রংয়ের রসালো ও সুমিষ্ট স্বাদের আকর্ষণীয় এবং
মনোমুগ্ধকর ক্যাকটাস জাতীয় ফল। এই ফলটি কাঁচা অবস্থাতে হালকা সবুজ বর্ণের ও
পাকলে গোলাপি বর্ণের এবং ভিতরের অংশগুলো যথাক্রমে সাদা, গোলাপি, লাল ও হলুদ
বর্ণের হয়ে থাকে। এটি ছোট, বড়, মাঝারি ও গোলাকার আকৃতির খাজ কাটা খাজ কাটা হয়ে
থাকে। এই ফলটি দেখতে যেমন রোমাঞ্চকর ও
আকর্ষণীয় হয়ে থাকে তেমনি অন্যান্য ফলের চাইতে পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও
কার্যকারীতার দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে রয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে
সম্পূর্ণ পড়লে ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে যাদুকরী ও অবাক করা সব
তথ্য বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।
ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অতুলনীয় । ড্রাগন
ফল এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় ফল। সাধারণত ড্রাগন ফল একাধিক রং এর হয়ে থাকে।
রংগুলো হল গোলাপি, লাল,হলুদ, এবং সাদা রংয়ের। তবে লাল রঙের ড্রাগন ফল বেশি দেখা
যায়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যারিবিয়ান,
অস্ট্রেলিয়া,মিসোআমেরিকা এবং বিশ্বের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও
উপক্রান্তীয় অঞ্চলে চাষ হয় ড্রাগন ফলের। এই ড্রাগন ফল মানব দেহের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। কিছু বছর আগেও এই ফল
বাইরের দেশের ফল হিসাবে পরিচিত ছিল কিন্তু এখন বাংলাদেশে ভালোই চাষ হচ্ছে এই
উপকারী ড্রাগন ফল।এই সুন্দর ফলকে আমরা যেমন ড্রাগন ফল বলে থাকি তেমনি বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে এই ফল পরিচিত। যেমন
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফল থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক ,গণচীন এর
লোকেরা এটিকে আগুনে ড্রাগন ফল এবং ড্রাগন মুক্তার ফল বলে। আবার ভিয়েতনামে এটি
মিষ্টি ড্রাগন নামেও পরিচিত।
ড্রাগন ফলের উৎপত্তি
ড্রাগন ফল (Dragon Fruit) এই মনমুগ্ধকর আকর্ষণীয় ফলটি তার বাহারি রং এবং মিষ্টি
স্বাদের জন্য বহু শতাব্দি ধরে মানুষকে মুগ্ধ করে আসছে। এই ড্রাগন ফল খুবই
জনপ্রিয় । এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এই ভিনদেশি ফল আসলে এলো কোথা থেকে?
এবং কি করে এত জনপ্রিয় হলো? এর উৎপত্তিস্থল কোথায়? ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে এখন
জেনে নেওয়া যাক এই ফলের উৎপত্তি কিভাবে
হয়েছে? ১৬ শতাব্দীতে ড্রাগন ফলের প্রথম স্বাদ উপলব্ধি করে ইউরোপীয় যাযাবর
বণিকরা এবং ইউরোপে নিয়ে যায় তারা তা তাদের সঙ্গে করে। সেখান থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ড্রাগন ফল সেখানকার জলবায়ুর সাথে নিজেদের সহজেই
মানিয়ে নেয়। এখন সাধারণত ভিয়েতনাম ,থাইল্যান্ড এবং তাইওয়ান হলো ড্রাগন ফল
উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। আমাদের দেশে সাধারণত বেশ
জনপ্রিয়তার শীর্ষে এই বিদেশী ফল । ড্রাগন ফল যদিও এটি বাইরের দেশের কিন্তু
আমাদের দেশের মানুষের ভালোই মন জয় করে ফেলেছে । এই ফলটা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়
তেমন খেতেও খুবই সুমিষ্ট। বড় থেকে ছোট বাচ্চারা খুবই পছন্দ করে গোলাকার এই রঙিন
ড্রাগন ফল। পছন্দ করবেই বা না কেন? আসলেই এই ফলটা অনেক সুন্দর এবং আকর্ষণীয়।
ভারতের অনেকেই মনে করে থাকে যে এই
আকর্ষণীয় ফলটি এসেছে চীন দেশ থেকে। এর নামের কারণে কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তা
নয় আসলে। সাধারণত এখন ভারতের ড্রাগনের চাষ শুরু হয়েছে। ভালোই ফলন হচ্ছে। ড্রাগন
ফল গুজরাটের অনেক এলাকাতে চাষ হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের
বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার প্রত্যাবর্তন করেন প্রথম এই ড্রাগন ফলের। পরিচালক ড.এম.এ
রহিম এই ড্রাগন ফলের জাত নিয়ে
আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। সেন্ট্রাল আমেরিকার প্রসিদ্ধ ফল এই
ড্রাগন ফল বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বংশবিস্তার করা হচ্ছে
এই সেন্ট্রাল থেকে। বিংশ শতাব্দীর শেষে এই ফলের প্রবর্তন করা হয় দক্ষিণ এশিয়ার
মালেশিয়াতে। ড্রাগন ফল কেবল এখন বিদেশে সীমাবদ্ধ নয় । যদিও এটা বিদেশি ফল
তারপরেও এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল ইউরোপে হলেও তা এখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভালোই ফলন
হচ্ছে। কিন্তু ভিয়েতনামে এই ফলের সর্বাত্মক চাষ হচ্ছে। এ ফলের সবচেয়ে ভালো দিক
হচ্ছে সারা বছরই উৎপাদন করা যায়। মাগুরায় ড্রাগন চাষী মো. শওকত সফল কৃষক।
সেন্ট্রাল আমেরিকা ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল হলেও সর্বাধিক চাষ হয় ভিয়েতনামে
বাণিজ্যিকভাবে। বলা বাহুল্য যে, এই ফল বিদেশি ফল হলেও আমাদের দেশে বর্তমানে
জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে।
ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম
ড্রাগন ফল, (Dragon Fruit ) ফণীমনসা ( ক্যাকটাস) প্রজাতির ফল। সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর মহাজাতি হাইলোসিয়াস (মিষ্টি পিতায়া)। বিভিন্ন
জায়গায় এই ড্রাগন ফলকে সুন্দর সুন্দর নামে অভিভূত করা হয়। ঠিক তেমনি এই ফলের
একটি সুন্দর বৈজ্ঞানিক নামও রয়েছে সেটি হল Hylocereus undatus .
ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
- জমি নির্বাচন ও তৈরি:সাধারণত প্রথমে জমি নির্বাচন করতে হবে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে তাহলে ফলন ভালো হবে। জমিতে ২-৩ বার মই দিতে হবে।
- রোপনের সময় এবং রোপণ পদ্ধতি:সমান ভূমিতে বর্গাকার এবং পাহাড়ি জমিতে কোন্টুর পদ্ধতিতে এই ড্রাগন ফলের কাটিং লাগাতে হয় । এপ্রিল থেকে অক্টোবর ড্রাগন গাছ লাগানোর উপযোগী সময়।
- বংশবিস্তার:সাধারণত আমরা জানি নিজের মাধ্যমে ড্রাগন গাছের বংশবিস্তার হয়। ড্রাগন গাছের যেগুলো পুরনো ডাল এগুলো কেটে ফেলে দিতে হয় তাহলে ফল তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে একটি ফল ধরতে সময় লাগে প্রায় ১২ থেকে ১৮ মাস। পুরনো এবং শক্ত শাখা এক থেকে ১.৫ ফুট কেটে ছায়াতে সহজে চারা উৎপাদন করা যায় । মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুঁতে দিতে হয়। কাটিং এর নিচ থেকে শিকড় বেরিয়ে আসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিনে। তারপরে উপযুক্ত হয় মাঠে লাগানোর জন্য। কাটিংকৃত কলম মূল জমিতে লাগানো যায় সরাসরি উপযুক্ত পরিবেশে।
ড্রাগন গাছের পরিচর্যা
ড্রাগন গাছে সেই রকম কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না । কারণ ড্রাগন গাছে রোগ বালাই
তেমন ভাবে আক্রমণ করে না। এটি আকাশের নিচে মুক্ত এবং খোলা জায়গায় যেখানে রোদ
পড়ে এমন জায়গায় চাষ করলে ফলন ভালো হয়। ড্রাগন গাছের গোড়া থেকে আগাছা আগে
ভালোভাবে দমন করতে হবে । তারপর দুই তিন বছরের পুরনো ডালগুলো কেটে ফেলতে হবে সাথে
সাথে ছোট ছোট পুরনো ডাল
গুলোও কেটে ফেলতে হবে । তাহলে নতুন ডাল গজাবে । প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি গাছে ৫০০
থেকে ১০০০ গ্রাম জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে । যেমন ভার্মি কম্পোস্ট, এমওপি,
রাসায়নিক সার, দানাদার মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট, বোরন সার,জৈব সার ইত্যাদি ব্যবহার
করতে পারেন । এই সারগুলো গাছের জন্য খুবই উপকারী বেশি ফলন দেওয়ার ক্ষেত্রে ।
ড্রাগন গাছে বেশি পানি দিতে হয় না তার কারণ এটি একটি ক্যাকটাস জাতীয় ফলের গাছ।
পানি দেওয়ার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন গোড়াই পানি যেন না জমে থাকে।
ড্রাগন ফলের জাত
বিভিন্ন ধরনের ফলের যেমন বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে ঠিক তেমনি ড্রাগন ফলের
বাংলাদেশে ও কিছু জাত রয়েছে । বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ড্রাগন ফলের জাত
হল :
- বাউ ড্রাগন ফল-৩
- বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা)
- বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)
- বারি ড্রাগন ফল-১
ড্রাগন ফল খারাপ হলে কিভাবে বুঝবো
ড্রাগন ফল পুরোপুরি পাকা এবং রসালো মিষ্টি বাছাই করতে উজ্জ্বল ও সমান রঙের গোলাপী
ত্বকের ড্রাগন খুঁজে নিতে হবে। ড্রাগন ফল হাতে নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে টিপলে উপরের
ত্বক কিছুটা নরম এবং কোমল অনুভূতি হবে। উল্লেখিত বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখলেই
বুঝতে পারবেন ড্রাগন খারাপ নাকি ভালো। এছাড়াও এর ব্যতিক্রম কিছু দেখলেই বুঝে
নিবেন ড্রাগন ফলটি খারাপ।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
প্রথমে ড্রাগন ফল সুন্দর করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে । তারপর ড্রাগন ফলের
বাইরের খোসা বা আবরণ ছিলে নিয়ে ফলটাকে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে। তারপর ইচ্ছামত
টুকরা টুকরা করে কেটে নিতে হবে এবং পরিশেষে চামচ দিয়ে কিংবা আপনার পছন্দমত খেতে
পারেন। এছাড়াও ড্রাগন ফল সালাদ করেও খেতে পারেন। জুস করেও খাওয়া যায় অনেকেই
জুস করে খেতে পছন্দ করে।
যে কারণে ড্রাগন ফল খাবেন
ড্রাগন ফল (Dragon Fruit ) শুধু একটি ফল নই এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ । বলা বাহুল্য যে, আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা এই ফলে কি কি গুনাগুন
রয়েছে । খুবই সুস্বাদু একটি ফল হল ড্রাগন ফল। মানবদেহের মহামারী ক্যান্সার
প্রতিরোধে এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই
ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় দাঁতের ক্ষয় দূর করে এবং
শ্বেতকণিকা ভালো রাখে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের শরীরের। এতে
ভিটামিন বি-৩ উপস্থিত থাকায় আমাদের ত্বক মসৃণ রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক
রাখে। ড্রাগন ফলে অনেক পুষ্টিগুণ থাকায় প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এই ফলকে
সুপার ফুড বলে । ক্যান্সার কোষ গুলোকে দমন করে ড্রাগনে থাকা লাইকোপেন। ড্রাগনে
আরো রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়া, ভিটামিন
সি যা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধতে পারবে না অনেকটাই ঝুকে
কমিয়ে দেয় এই ড্রাগন ফল । ড্রাগন হার্ট ভালো রাখে স্টকের ঝুঁকি কমায়। এই ফলে
ডায়েটারী ফাইবার থাকার কারণে হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফল
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে, হার্টের উপকার করে, হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে, রক্ত
চলাচল বজায় রাখে। প্রতিরোধ করে চুল পড়া, মজবুত করে ইমিউন
সিস্টেমকে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে বিপাকীয় কাজের সহায়তা করে, হাড় ও দাঁত
মজবুত রাখে, অন্তঃসত্ত্বা প্রসূতিদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। এতে আয়রন
থাকায়। ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে। ড্রাগন
ফলে ক্যালরি কম থাকায় ওজন বাড়ানোর কোন চিন্তা নাই ।তাই আমাদের উচিত নিয়মিত
খাদ্য তালিকায় ড্রাগন ফল রাখা।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা
প্রতিটি গর্ভবতী মহিলারই একটা স্বপ্ন থাকে যে তার বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে
এই পৃথিবীর আলো দেখবে। এইজন্য গর্ভকালীন সময়ে মেয়েরা অনেক ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ
খাবার খেয়ে থাকেন। তেমনি একটি ফল হল ড্রাগন ফল । এই ফল কম ক্যালরিযুক্ত এবং
ফাইবার সমৃদ্ধ,প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে যা একটি গর্ভবতী
মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই খাদ্য তালিকায়
প্রতিদিন অন্তত একটি করে ড্রাগন রাখা উচিত গর্ভবতী মায়েদের জন্য। এছাড়াও
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খেলে গর্ভে থাকা শিশুর সঠিক মাত্রায় গ্রোথ বৃদ্ধি পায়
এবং মা ও শিশুকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। ড্রাগন ফল ব্যাপক ভাবে
লড়াই করে নারীদের পোস্টমেনোপজাল জটিলতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে ।
ড্রাগন ফলের সাইড ইফেক্ট
প্রত্যেক ফলের কিছু সাইড ইফেক্ট রয়েছে। ঠিক তেমনি ড্রাগন ফলের ও সাইড ইফেক্ট
রয়েছে বিশেষ কিছু। অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না ।
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, আয়রন,
ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে । তাই অতিরিক্ত ড্রাগন ফল
খেলে তার গুণগত মান নষ্ট হয়ে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অধিক পরিমাণে খাদ্য
তালিকায় ড্রাগন ফল থাকলে ডায়রিয়া হতে পারে ফলে হাইপোটেশান। অধিক মাত্রায়
রক্তচাপ হতে পারে ড্রাগন ফল পরিমাণে বেশি খেলে।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ড্রাগন ফল । এই ফলের উপকারিতা ও অপরিসীম। তাই
ড্রাগন ফলের কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিম্নলিপিবদ্ধ করা হলো:
ক্যাকটাস জাতীয় ফল হলো এই ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফল পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং এর
উপকারিতা অনেক। এই ফল গ্রহণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের
শরীরে। ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এতে
ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকায়। ক্যান্সারের মত এতবড় রোগের ঝুঁকি কমাতেও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভালো কাজ
করে। ড্রাগন ফল হার্টের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ফলে ছোট ছোট কালো বীজে
রয়েছে ওমেগা থ্রি, ওমেগা নাইন ও ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফল নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এই ফলে বিটা-ক্যারোটিন আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে
চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়। এই ড্রাগন ফল ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যালজাইমার
এর মত বড় বড় রোগের ঝুঁকি কমাতে মানব দেহে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে । মানবদেহে এর এত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা যে এই ফল আমাদের জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলে অনেক প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি
আমাদের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য একটি ফল। এই ড্রাগন ফল ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণেও
ভালো কাজ করে। আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে রঙিন ড্রাগন ফল আয়রনের একটি চমৎকার উৎস।
নিয়মিত এই ড্রাগন ফল খেলে
রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায় এবং আমাদের শরীরের খারাপ
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ও ভালো ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ড্রাগন ফল
হাইড্রেশন, পাচনতন্ত্র, হার্টের স্বাস্থ্য এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ,
ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ড্রাগন ফল
খেলে ফাইবারের চাহিদা পূরণ হয়। ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় কোন উপাদানই নেই সেই কারণে
ওজন বাড়ার কোন চিন্তা নেই। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ড্রাগন ফল নিশ্চিন্তে
রাখা যায়। তাই সঠিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এ
ড্রাগন ফল রাখা জরুরি। ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ কমলা ও গাজরের থেকেও বেশি। এই ফল
ত্বক উজ্জ্বল রাখে এবং মানসিক অবসাদ দূর করে তাই আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগনে ২১ মি. গ্রা. ভিটামিন সি থাকায় ৩৪
শতাংশ চাহিদা পূরণ করে দৈনিক আমাদের শরীরে। ৩ গ্রাম আঁশ, ১২ শতাংশ খাবারের
প্রতিদিনের চাহিদা মেটায় ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে। পলিআনস্যাচুরেইটেড ও ল্যাক্সেটিভ
ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় হজম ভালো হয়।তাই বলা বাহুল্য যে, এই ফল পুষ্টিগুণ ও
উপকারিতায় ভরপুর।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
সব কিছুরই সুবিধা-অসুবিধা দুটোই রয়েছে কম বেশি আমরা সবাই জানি। ড্রাগন ফলে খনিজ,
ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-১, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম,
ফাইবার, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকায় এই ফল আমাদের
শরীরের জন্য যেমন অধিক উপকারী তেমনি এটা যদি অধিক হারে খাই তাহলে তা আমাদের শরীরে
অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। নিম্নলিখিত ড্রাগন ফলের অপকারিতা সমূহ উল্লেখযোগ্য।
যেমন:
- পাচনতন্ত্রের সমস্যা হওয়া: ড্রাগন ফলে অনেক পুষ্টিগুণ থাকার কারণে এটি অতি মাত্রায় খেলে পাচনতন্ত্রে হজমের ব্যাঘাত ঘটে।
- পুরুষত্বের সমস্যা হওয়া: এই বাহারি গোলাকার সুমিষ্ট ড্রাগন ফলে অনেক পুরুষ মানুষের সেক্সচুয়াল সমস্যা তৈরি হতে পারে। যা যুক্ত হতে পারে বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজনা মূলক সম্পর্কিত সমস্যায়। অনেক পুরুষেরই জীবন তখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
- এলার্জি হওয়া: ড্রাগন ফলে বিভিন্ন মানুষের এলার্জি হতে পারে পরিমাণের চেয়ে অধিক গ্রহণ করলে। কারণ এটাতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন রকম ভিটামিন রয়েছে। যা আমাদের ত্বককে অমসৃণ করে, সারা শরীর চুলকায় এবং চোখের ভিতর জ্বালাপোড়া করে ইত্যাদি হতে পারে।
- গ্যাস ও বমি হওয়া: আমাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার পর অনেক সময় গ্যাস ও বমি হতে পারে। অনেক সময় মাথা ব্যথা দেখা দেয়।
- ডায়রিয়া হওয়া: মাত্রাতিক্ত ড্রাগন ফল খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। ড্রাগন ফলে হাইপ্রোটেশন রয়েছে।
- নিম্ন রক্ত চাপ হওয়া : ড্রাগন ফল অতিরিক্ত খেলে পরিমাণের চেয়ে আমাদের শরীরে নিম্নচাপ হতে পারে।
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা অনেক। এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা তাহলে চলুন জেনে
নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের উপকারিতা:
- যাদের দীর্ঘদিন ধরে আলসার হয়ে আছে তারা যদি এই ড্রাগন ফলের খোসার জুস পান করে তাহলে অনেক উপকার পাবে।
- ড্রাগন ফল আমাদের ত্বক থেকে ব্রণ ও কালচে দাগ দূর করে। সাথে সাথে আমাদের ত্বককে করে হাস্যজ্জল।
- ড্রাগন ফলের খোসা দিয়ে জেলি বানিয়ে খাওয়া যায়। খেতেও খুব সুস্বাদু হয়।
- ড্রাগন ফলের খোসায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভুগছেন এই ড্রাগন ফলের খোচার জুস পান করলে হাতেনাতে তা প্রমাণ পাবেন।
- চুলের যত্নে ও ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা অপরিসীম । বর্তমান সময়ে আমরা প্রত্যেকেই প্রায় চুলের সমস্যায় ভুগছি। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় ড্রাগনের খোঁচা থেকে। ড্রাগন ফলের খোসা পাতিলে নিয়ে ৩০ মিনিট অল্প আচে সিদ্ধ করুন পানির কালার যখন চেঞ্জ হয়ে আসবে লালচে বর্ণ ধারণ করবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন পানিটা ঠান্ডা করার পর মাথার স্ক্যাল্পে আলতোভাবে মাসাজ করুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন । এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। তাই যারা চুলের সমস্যায় রয়েছেন তারা নিয়মিত ড্রাগনের খোসা ব্যবহার করুন।
- কিছু মেথি।
- একটি ড্রাগন ফলের খোসা।
- কয়েকটা তেজপাতা।
- ৪-৫ টা লং।
- পেঁয়াজের রস।
- জবা ফুল।
- এলোভেরা।
- একটি ডিম।
- এবং মেহেদী পাতা।
- উপরোক্ত উপকরণগুলি একটি পরিষ্কার পাত্র নিয়ে উপরের উপকরণ গুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর সবগুলোই একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। গোসলের আগে এক থেকে দেড় ঘন্টা মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে রাখতে হবে তারপর গোসল করার সময় চুল ধুয়ে নিতে হবে । এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলেই আপনারা খুবই ভালো রেজাল্ট পাবেন ইনশাআল্লাহ।
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে একটি করে ড্রাগন ফল খেলে হজম ভালো হয়। এই ফলে ফাইবার
থাকার কারণে পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখতেও সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
যায় নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল এই ড্রাগন ফল। এতে
রয়েছে ফ্লেবুনয়েল এবং বিটা-সায়ানিন এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই উপাদানগুলো
শরীরের কোষ গুলোকে ফ্রি রেডিকিন থেকে রক্ষা করে। এটি
ক্যান্সার এবং অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা থেকে বাঁচায়। এই ফলে ডায়োটানী
ফাইবার থাকে এবং ক্যালোরি থাকে খুব অল্প পরিমাণে। প্রতি কাপ ড্রাগন ফলে থাকে ১৩৬
ক্যালোরি, ৩ গ্রাম প্রোটিন, ৬০ গ্রাম ফাইবার, ৮ শতাংশ আয়রন, ১৮ শতাংশ
ম্যাগনেসিয়াম, ৯ শতাংশ ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ৪ শতাংশ এবং কোন ফ্যাট থাকে না।
এতে কোনরকম ফ্যাট না থাকায় এই ফলটি আপনারা আপনাদের
ডায়েটলিস্টে রাখতে পারেন । ড্রাগন ফল সুন্দরভাবে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে
কেটে ফ্রিজে কিছু সময় রেখে খেলে অনেক ভালো লাগে। ফলের সরল শর্করা ভালোভাবে শোষণ
হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। তাই সকাল বেলা খালি পেটে অথবা দুটি
মধ্যবর্তী খাবার গ্রহণের সময় হলো ড্রাগন ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এই দুই নিয়মে
শরীরে বিভিন্ন প্রকার এনজাইম পরিপাকে দ্রুত কাজ করতে সহায়তা করে। সকল পুষ্টি
উপাদান ফলের আঁশ এবং সরল চিনি মানবদেহে খুবই সহজে পরিপাক হয়।
আর ফল থেকে পাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। খাবার খাওয়ার
পরপরই ফল খাওয়া ঠিক নয় ফল মুখ থেকে সরাসরি পাকস্থলীতে যাওয়ার সময় যদি খাবার
দিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় তখন সেখানে এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি আমাদের
শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর যে কোন ফল খেলে সেই
ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সঠিক মাত্রায় পাওয়া যায়। ব্যায়ামের আগে বা পরে
ড্রাগন ফল খেতে পারেন। ফলের সরল শর্করা জন্য প্রয়োজনীয় সরল শর্করা শক্তির যোগান
দেয়।
ডায়াবেটিস হলে ড্রাগন ফল কতটুকু খাওয়া যাবে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন , খনিজ আরো অন্যান্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল
ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়
অবশ্যই এই ফল রাখা উচিত। কেননা ডায়াবেটিস প্রায় ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে। সারা বছর
লক্ষ লক্ষ হাজার হাজার মানুষের প্রাণে যাচ্ছে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে। সাধারণত
হৃদরোগ, কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ এরা বেশি ডায়াবেটিসে
আক্রান্ত হয়। তাই এ রোগে আক্রান্ত না হতে চাইলে পরিবর্তন করতে হবে জীবনধারণ।
যেমন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো, সকালবেলা একটু হাটা,
মিষ্টি জাতীয় তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা এবং খাদ্য তালিকায় পরামর্শ অনুযায়ী
কিছু খাবার এড করা। বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবেটিস সারাতে ভীষণ উপকারী এর ড্রাগন ফল।
তাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ড্রাগন ফল রাখা
জরুরী। ড্রাগন ফলের শরবত সুগার কমাতে সাহায্য করে। এবং ড্রাগন ফল একটু বেশি পেকে
গেলে ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় না রাখাই ভালো।ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত
রোগীদের জন্য ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম কমপক্ষে খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে বা
খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পর আদর্শ সময়।
ড্রাগন ফল কি শিশুদের জন্য উপকারী
ড্রাগন ফল শিশুদের জন্য খাওয়া খুবই উপকারী। বাচ্চাদেরকে নয় মাস দশ মাস বা এক
বছর থেকে ড্রাগন ফল খাদ্য তালিকায় দেওয়া যেতে পারে ।এটি বাচ্চাদের ভিটামিন-এ
এবং বিটা-ক্যারোটিনের চাহিদা পূরণ করে। এতে করে বাচ্চাদের চোখের সমস্যা বা
দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। ড্রাগন ফলে ওমেগা থ্রি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা
বাচ্চাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি শিশুদের হাড় এবং দাঁত
মজবুত করতে সাহায্য করে। ওমেগা থ্রি বাচ্চাদের শরীরে তৈরি হয় না তাই বাইরে থেকেই
এটা তৈরি করতে হয় যেমন মাছ বা অন্যান্য খাদ্য থাকে ওমেগা থ্রি পাওয়া যায়
ড্রাগন থেকেও ওমেগা থ্রি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আরো রয়েছে ভিটামিন বি,
ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস,পটাশিয়াম, থায়ামিন এবং
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা বাচ্চাদের দ্রুত গ্রোথ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ড্রাগন ফল খেলে কি হিমোগ্লোবিন বাড়ে
ড্রাগন ফল খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দ্রুত হারে বাড়ে।ড্রাগন ফল খেলে এতে থাকা
আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যার ফলে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে
ব্যাপক সহায়তা করে। এবং এই ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অ্যানিমিয়া
রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
ড্রাগন ফল খেলে কি ঘুম আসে
ড্রাগন ফল খেলে ঘুম ভালো হয়। ফল খাওয়ার সর্বোত্তম সময় হিসাবে সকালবেলাকেই
বিবেচনা করা হয়। কারণ পরিপাকতন্ত্র ফলের চিনিকে দ্রুত ভেঙে দেয় এবং ফলে থাকা সব
ধরনের পুষ্টি উপাদানের সবটুকুই দ্রুত শরীরের মাঝে প্রতিস্থাপন করে । রাতে খাবার
খাওয়ার ৩০ মিনিট পর ড্রাগন ফল খেলে রাতে ঘুম খুব ভালো হয়।
ড্রাগন ফল বেশি খেলে প্রসাবের রং লালচে হয় কেন
ড্রাগন ফলে বিটালিন নামক প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। এ বিটালিন গুলোর কারণে
প্রস্রাব লাল বর্ণ ধারণ করে। ড্রাগন ফল আমরা যখন খাই তখন এই ভিটামিন গুলো আমাদের
রক্ত প্রবাহে প্রবাহিত হয় এবং এ ভিডিটামিন গুলো আমাদের প্রসাবের মাধ্যমে বের
হয়। আমরা যেমন স্বাভাবিকভাবে বেশি পানি পান করলে আমাদের প্রসাব স্বচ্ছ হয় ঠিক
তেমনি ড্রাগন ফল বেশি খেলে বিটালিনের ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে প্রসাবের রং গোলাপি বা
লালচে হয়। প্রসাব গোলাপী বা লালচে হলে উদ্যোগের কিছু নাই এটা হয় সাধারণত ড্রাগন
ফল খাওয়ার কারণে।
ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন কমে
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং জলীয় অংশ থাকায় আমাদের শরীরের
ওজন কমায়। এই ফল ওজন ঠিক রাখতে যেমন কাজ করে ঠিক তেমনি ওজন হ্রাসেও সহায়তা করে।
এই ফলে ৮০ শতাংশই পানি যা আমাদের অন্তের গতিবিধিকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। এই
ড্রাগন ফলে ক্যালরিও কম আবার ফ্যাট নাই বললেই চলে। তাই নিত্যদিনের ডায়েট চাটে
ড্রাগন ফল রাখা উচিত। ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং খুবই
উপকারী একটি ফল।
লেখকের ইতি কথাঃ ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে
সুপ্রিয় পাঠক আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা এবং
অবাক করা রোমাঞ্চকর জাদুকরি সব গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ড্রাগন
ফল মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি করা একটি অবাক করা বিস্ময়কর ফল। কিন্তু মজার
ব্যাপার হলো ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা গুলো খুবই অবাক করার মত যা অনেকেরই
অজানা। আপনি যদি ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা এবং এর গুনাগুন গুলো
সম্পূর্ণরূপে পেতে চান তাহলে উপরোক্ত বিষয়গুলো স্মরণ রাখতে হবে।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের
ওয়েবসাইটে এই ধরনের তথ্য বহুল আর্টিকেল আমরা নিয়মিতই পোস্ট করে থাকি। তাই আপনি
যদি এধরনের আরও তথ্যবহুল পোস্ট পড়তে চান । তাহলে এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ফলো
করুন। ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আপনার যদি কোন মতামত বা প্রশ্ন
থাকে তাহলে নিচে দেয়া মতামত বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আবার কথা হবে আপনাদের
সাথে নতুন কোন আর্টিকেল নিয়ে। ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন!
কনফিডেন্স আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url